হলি আর্টিজান হামলার পর জাপান সরকার বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সন্ত্রাস দমনের জন্য কিছু বিশেষ গাড়ি অনুদান হিসেবে দেয়, যাতে শুধু শুল্ক দেওয়ার শর্ত ছিল বাংলাদেশের। চূড়ান্ত প্রকল্পে অনুদানের গাড়িতে প্রায় শতভাগ শুল্ক-কর হিসাব করে ৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এতে চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮০ কোটি টাকা। কিন্তু আমদানির পর ওই গাড়িগুলোর অধিকাংশের শুল্ক, কাস্টমসে ৮২৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। ফলে ৩৯ কোটি টাকার গাড়িতে শুধু শুল্ক বাবদ খরচ হচ্ছে ২৬৯ কোটি টাকার ওপরে। এ কারণে পুরো প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় ২৮৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ডিএমপির ফ্লাডলাইট ভেহিক্যাল না থাকায় রাতে অভিযান কঠিন ছিল। এ জন্য জাপান সরকারের অনুদানে ৩৫টি বিশেষ ধরনের যানবাহন সংগ্রহের প্রকল্প হাতে নেয় পুলিশ। ‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ নামের প্রকল্পটির অনুমোদনের সময় ব্যয় ছিল ৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এতে জাপান সরকারের অনুদান ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ও ভ্যাটে নতুন করে ৮২৬ শতাংশ ব্যয় হওয়ায় নতুন করে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। পূর্ণাঙ্গ ধারণা না নিয়ে ব্যয় নির্ধারণ করায় এখন নতুন অর্থের পুরোটাই সরকারকে বহন করতে হচ্ছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, মূল প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল’ হিসেবে ৩৫টি গাড়ি সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শুল্ক বিভাগ শুধু ফ্লাড লাইট ভেহিক্যালকে ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল’ হিসেবে বিবেচনায় নেয়। কিন্তু আর্মড ভেহিক্যাল ও এসকর্ট ভেহিক্যালকে ‘বেইস ভেহিক্যাল’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সেই অনুযায়ী ৮২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে; যা পুলিশের ধারণার বাইরে ছিল। এ কারণে নতুন করে ২৩০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত এসপি ও প্রকল্প পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, জাপান সরকারের অনুদানের গাড়ি মধ্যে তিন ধরনের গাড়ি ছিল। রাতে অপারেশনের জন্য ফ্লাড লাইট ভেহিক্যাল, এসকর্ট ভেহিক্যাল ও আর্মড ফোর্সেস ভেহিক্যাল। কিন্তু কাস্টমস শুধু ফ্লাড লাইট ভেহিক্যালকেই স্পেশাল ভেহিক্যাল হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে, কিন্তু অন্যগুলোকে স্পেশাল না বলে বেইস ভেহিক্যাল বলছে। স্পেশাল বললে কাস্টমস ডিউটি ছিল সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ কিন্তু স্পেশাল না হলেই হয় ৮২৬ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘কাস্টমস আমাদের গাড়িগুলো দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তাদের কাছে আমাদের বকেয়া রয়ে গেছে। এ জন্যই এখন ব্যয় বেড়েছে।’
প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, ৩০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা বাড়বে বিধায় এর সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদনযোগ্য।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর গত বছরের ২২ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। কয়েকটি সিদ্ধান্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।
এ কার্যক্রমে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৫০ কোটি ইয়েন অনুদান দিয়েছে জাইকা। প্রকল্পের আওতায় ১০টি আরমার্ড ক্যারিয়ার (বিশেষ ব্র্যান্ডের গাড়ি) ক্রয় করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০টি এসকর্ট ভেহিক্যাল এবং ৫টি ফ্লাড লাইট ভেহিক্যালসহ মোট ৩৫টি গাড়ি কেনা হয়েছে। সবগুলোই কিনে দিয়েছে জাপান। এর আগে জাইকা কোস্টগার্ডের জন্য বেশ কিছু বোট অনুদান দিয়েছিল।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সীমিত জনবল, লজিস্টিকস এবং যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কয়েক বছরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিটি অপারেশনে সফলতা অর্জন করেছে। এসব অপারেশন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমানে ডিএমপিকে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। প্রয়োজনীয় যানবাহন ও লজিস্টিকসের অভাবে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে পুলিশকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। আরমার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ারের (এপিসি) মতো সুসজ্জিত যানবাহনের অভাবে অনেক সময় সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয় না।
প্রিন্ট