আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দক্ষ শিক্ষক, অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে বিজ্ঞান শিক্ষা মুখ থুবড়ে পড়েছে। উপজেলার সিংহভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই বিজ্ঞানাগার। যে দু’একটা বিদ্যালয়ে রয়েছে, সেগুলোতেও নেই পর্যাপ্ত উপকরণ যন্ত্রপাতি। অনেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের আলমারিতে নামমাত্র কিছু যন্ত্রপাতি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানে না, তাদের প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগার আছে কি না। ফলে হাতে কলমে ব্যবহারিক বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে বাড়ছে বিজ্ঞানের প্রতি ভীতি। দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অথচ বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাসিক ফির সঙ্গে বিজ্ঞানাগার ফি নেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।অথচ বিজ্ঞান শিক্ষকগণ নিয়মিত বেতনভাতা উত্তোলন করছেন, তবে বিজ্ঞান শিক্ষায় তাদের তেমন কোনো অবদান থাকছে না,তাহলে এতো টাকা খরচ করে বিজ্ঞান শিক্ষক রাখার হেতু কি ?
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলায় বে-সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে ৬০টি, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১টি এবং মাদ্রাসা রয়েছে ২৮টি। এর মধ্যে ৩টি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার আছে তবে, এর ব্যবহার নেই বল্লেই চলে। উপজেলার ১৭টি কলেজেও বিজ্ঞান শিক্ষার একই অবস্থা। উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বিদ্যালয়ের অবস্থা জরাজীর্ণ। প্রধান শিক্ষকদের ভাঙাচোরা আলমারিতে ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য রাখা হয়েছে কয়েকটি যন্ত্রপাতি। উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) শ্রীখন্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ধানোরা চকপ্রভুরাম, মির্জাপুর, ও মালশিরা উচ্চ বিদ্যালয়, পাড়িশো দাখিল মাদরাসা। তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) দেউল দাখিল মাদরাসা ও মোহর উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগারের তেমন কোনো অস্তিত্বই চোখে পড়েনি।
উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়য়ের প্রধান শিক্ষকেরা বলছেন, বিজ্ঞানাগার না থাকায় বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। বর্তমান কারিকুলামে বিজ্ঞান বিষয়ের ব্যবহারিক শিক্ষার গুরুত্ব নেই।
উপজেলার সুকদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুকুমার চন্দ্র দাস বলেন, তাদের স্কুলে বিজ্ঞানাগার না থাকায় বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তিনি বলেন, উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই একই অবস্থা। কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী বলেন, তার স্কুলে বিজ্ঞানাগার রয়েছে। তিনি বলেন, নতুন কারিকুলামে বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষায় গুরুত্ব নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ৯০ দশকরের কারিকুলামে ফিরিয়ে নেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অভিভাবকরা বলছেন, বিজ্ঞান বিষয়ে পড়া লিখা করলেও ছেলে মেয়েরা ব্যবহারিক ক্লাস করতে না পারায় হাতে কলমে শিক্ষা পাচ্ছে না। ফলে, বিজ্ঞান বিভাগের প্রতি একরকম ভীতি তৈরি হচ্ছে। এতে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরাও বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চাইছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক বলেন, প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগারের জন্য আলাদা একটি ফান্ড আছে, যার নামমাত্র একটি অংশ বিজ্ঞানাগারের কাজে লাগানো হয়। বাকি অর্থ খরচ করা হয় অন্য খাতে, একারণে বিজ্ঞানাগার সমস্যার অবসান হচ্ছে না। নাস প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক বলেন, কক্ষ সঙ্কটের কারণে বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি ও কেমিক্যাল তার কক্ষের আলমারিতে রাখা হয়েছে। যখন ক্লাস হয়, তখন শিক্ষকেরা সেগুলো শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যান।
এবিষয়ে তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিগত সরকারের আমলের নতুন কারিকুলামে বিজ্ঞান বিষয়ের ব্যবহারিকের বিজ্ঞানাগার তুলে দেয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবহারিক শিক্ষা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। একারনেই বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।
প্রিন্ট