জানা গেছে, অস্ট্রোলিয়া প্রবাসী সিনিয়র সিটিজেন জোবায়দা নাহার শেখ ও তার ছোট বোন ঢাকার গুলশান নিবাসী সরকারী কর্মকর্তা জামিলা নাহার শেখ প্রায় ১৫ বছর পরে পিতৃভূমি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানাধীন বেড়বাড়াদি গ্রামে এসে নিজ বাড়ীতে উঠতে গেলে কিছুসংখ্যক স্থানীয় ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালী জালিয়াত চক্রের সদস্য তাদেরকে বাধা প্রদান করে তাড়িয়ে দেয়।
সম্পত্তির মালিক হওয়ার পরেও হতবাক হয়ে যান দুইবোন। তখনই ছুটে যান স্থানীয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায়। সেখানে কর্তব্যরত ওসি একটি ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে জানান যে তার ভাষায় “আপনারাই তো জমি বিক্রি করে দিয়েছেন”। উপয়ান্তর না পেয়ে দুই বোন থানায় একটি জালিয়াতি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মামলা করেন।
পরবর্তীতে স্থানীয় ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে ভুক্তিভুগি ওই দুই বোন জানতে পারেন, মাত্র একটি নয় পরপর তিনটি জাল দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে তাদের উভয়ের প্রায় দশ কোটি টাকার সম্পদ ভূমিদস্যুরা স্থানীয় তহশীল অফিস ও সাবরেজিস্ট্রার এর কার্যালয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে আত্মসাৎপূর্বক দখল করে নিয়েছে। যার মধ্যে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়কের বিত্তিপাড়া নামক স্থানে লালন ফিলিং স্টেশন একটি পেট্রোল পাম্পও রয়েছে। ঘটনা বুঝতে পেরে বিজ্ঞ আইনজীবির পরামর্শে তাঁরা কুষ্টিয়া সদর কোর্টে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি কুষ্টিয়া পিবিআই অনুসন্ধান শুরু করে। পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মোঃ রবিউল আলমের অনুসন্ধানে কেঁচো খুড়তে বেরিয়ে আসে সাপ।
তদন্তে দেখতে পায় কথিত দলিলদাতা হিসাবে দুই বোনের স্বাক্ষর ও টিপসহি জাল। তদন্তের আরও গভীরে গিয়ে পিবিআই কুষ্টিয়া উদ্ঘাটন করেন যে, উক্ত দুই বোনের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দীর্ঘ ২৩ বছরের বিশ্বস্ত কর্মচারী এসএম জিয়াউর রহমান (৪১) ও তার প্রথম স্ত্রী সুমনা (৩২) কে বিক্রেতা সাজিয়ে গুলশানের একটি বাড়ীতে জালিয়াত চক্রের উপস্থিতিতে (একজনকে দিয়েই) দুইজন দাত্রীর স্বাক্ষর ও টিপসহি প্রদান করায়। সৃজিত দলিল ব্যবহার করে জালিয়াত চক্র জমির নামজারি সম্পন্ন করে।
তারপর জালিয়াত চক্রের সদস্য ও দলিল গ্রহীতাগণ কয়েকগুন উচ্চ মূল্যে অন্যান্যদের নিকট পেট্রোল পাম্পসহ জমি বিক্রি করে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাৎ করে। এক পর্যায়ে ভূক্তভোগী জোবায়দা নাহার শেখ কুষ্টিয়া সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং ২২, তারিখ-০৯/১২/২০২২।
ধারা-৪০৮/৪০৬/৪১৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/
উল্লেখ্য, গত ১১/১২/২০২২ তারিখে গ্রেফতারকৃত দম্পতিকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে আসামী সুমনা ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তার ও পরবর্তী আইনী কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
প্রিন্ট