ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শালিখায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ Logo বাইসাইকেল নিয়ে সেতুর উপরে ঘুরতে গিয়ে প্রাণ গেলাে শুভ’র Logo রাজশাহী-১ আসনে বিএনপি’র গোছানো মাঠ নষ্টের চেষ্টা Logo রাজশাহীতে আনসার ও ভিডিপি’র মতবিনিময় সভা Logo ফরিদপুরে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo শ্যামনগরে নারীদের এবং স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে সংবেদনশীল কর্মশালা Logo বাঘায় আনিসুরকে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার রায়হানের Logo কালুখালীতে বিএনপি’র প্রতিবাদ সমাবেশ Logo জুলাই গণঅভুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে বাগাতিপাড়ায় স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত Logo গোয়ালন্দে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

নগরকান্দা শত্রুমুক্ত দিবস আজ

আজ ৯ নভেম্বর নগরকান্দা শত্রুমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সাল। বাংলার মাটিতে পাক-হানাদার বাহিনীর নগ্ন থাবা। ওরা কিছুতেই যেন বাংলার মানুষকে মুক্ত আকাশের নীচে স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস নিতে দিবেনা। তা কি হয়। বাংলার জমিনকে শত্রুমুক্ত করার দীপ্ত শপথ নিয়ে প্রানের মায়া তুচ্ছু করে অদম্য সাহসের এদেশের দেশ প্রেমিক দামাল সন্তানেরা জাপিয়ে পড়ে নর পশুদের বিরুদ্ধে।

সারা দেশে যখন যুদ্ধের ভয়ঙ্কর হানাহানি তখন নগরকান্দা থানার প্রতিটি এলাকায় চলছে পাক-হানাদার আর দেশীয় বিশ্বাস ঘাতক রাজাকার নর পশুদের বিরুদ্ধে দেশ প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের স্বশস্ত্র যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৮ মাস পর ৯ নভেম্বর নগরকান্দার মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে সম্মূখ সমরে যুদ্ধ করে নগরকান্দা থানাকে পুরোপুরি শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হন।

মুক্তিযোদ্ধাকালিন কমান্ডার আলতাব হোসেন খান বলেন, দেশ মাতাকে মুক্ত করার শপথে বলিয়ান হয়ে আমরা নগরকান্দার মুক্তিযোদ্ধারা শক্তিশালী পাক-হানাদার বাহিনীর এক গ্রুপকে ২৯ মে নগরকান্দার দিঘোলিয়া বিলে সম্মূখ যুদ্ধে শুধু মাত্র দেশীয় অস্ত্র ঢাল-সড়কি নিয়ে বিলের কাঁদার মধ্যে কুপিয়ে কুপিয়ে ২৯ জন পাক-সেনাকে হত্যা করতে সক্ষম হই। এরপর ৫ নভেম্বর নগরকান্দা কুমার নদের খেয়া ঘাটে এক সম্মূখ যুদ্ধে নির্ভিক মুক্তিযোদ্ধা আঃ বারেক মিয়া শহীদ হন।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আঃ বারেক মিয়ার রক্তের শপথ নিয়ে ৮ নভেম্বর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা থানা ঘেরাও করার জন্য ৪ টি গ্রুপে বিভক্ত হই। গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর আঃ আজিজ, আমি নিজে (আলতাফ হোসেন খান), হামিদ জোমাদ্দার ও আবুল হোসেন মিয়া। আমরা ৮ নভেম্বর গভীররাতে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্তি হয়ে থানার চতুরদিকে অবস্থান নেয়।

শুরু হয় হামলা পাল্টা হামলা। সারারাত আমাদের মাঝে গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে ৯ নভেম্বর সকাল ১০টায় শত্রু পক্ষরা আমাদের নিকট আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। সে সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্কেল আলী পরাজয়ের গ্লানি সইতে না পেরে পিস্তল দিয়ে নিজের মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করে।

নগরকান্দা থানা পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হওয়ার আনন্দে আত্মহারা বীর মুক্তিযোদ্ধারা তখন থানার বুকে বাংলার মানচিত্র খোচিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে নগরকান্দাকে স্বাধীন ঘোষনা করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট তৎকালীন থানার এ এস আই আবু জাফরসহ ১০/১২ জন পুলিশ সদস্য ও দেলবাড়িয়া গ্রামের আবু জাফরসহ আরো ৮/১০ জন রাজাকার দেশের স্বার্থে কাজকরার অঙ্গীকার করায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে জুংগরদী গ্রামের আতাহার নামের এক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে কাজ করতে অস্বীকার করায় আতাহারকে নগরকান্দা বাজারে জন সম্মূখে গুলি করে হত্যা করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ৯ নভেম্বর নগরকান্দা থানা শত্রুমুক্ত হিসেবে নগরকান্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নতুন প্রজন্ম গভীর শ্রদ্ধার সাথে দিনটিকে প্রতি বছর পালন করে আসছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শালিখায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ

error: Content is protected !!

নগরকান্দা শত্রুমুক্ত দিবস আজ

আপডেট টাইম : ০২:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর ২০২২
বোরহানুজ্জামান আনিস, স্টাফ রিপোর্টার (নগরকান্দা) ফরিদপুর :

আজ ৯ নভেম্বর নগরকান্দা শত্রুমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সাল। বাংলার মাটিতে পাক-হানাদার বাহিনীর নগ্ন থাবা। ওরা কিছুতেই যেন বাংলার মানুষকে মুক্ত আকাশের নীচে স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস নিতে দিবেনা। তা কি হয়। বাংলার জমিনকে শত্রুমুক্ত করার দীপ্ত শপথ নিয়ে প্রানের মায়া তুচ্ছু করে অদম্য সাহসের এদেশের দেশ প্রেমিক দামাল সন্তানেরা জাপিয়ে পড়ে নর পশুদের বিরুদ্ধে।

সারা দেশে যখন যুদ্ধের ভয়ঙ্কর হানাহানি তখন নগরকান্দা থানার প্রতিটি এলাকায় চলছে পাক-হানাদার আর দেশীয় বিশ্বাস ঘাতক রাজাকার নর পশুদের বিরুদ্ধে দেশ প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের স্বশস্ত্র যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৮ মাস পর ৯ নভেম্বর নগরকান্দার মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে সম্মূখ সমরে যুদ্ধ করে নগরকান্দা থানাকে পুরোপুরি শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হন।

মুক্তিযোদ্ধাকালিন কমান্ডার আলতাব হোসেন খান বলেন, দেশ মাতাকে মুক্ত করার শপথে বলিয়ান হয়ে আমরা নগরকান্দার মুক্তিযোদ্ধারা শক্তিশালী পাক-হানাদার বাহিনীর এক গ্রুপকে ২৯ মে নগরকান্দার দিঘোলিয়া বিলে সম্মূখ যুদ্ধে শুধু মাত্র দেশীয় অস্ত্র ঢাল-সড়কি নিয়ে বিলের কাঁদার মধ্যে কুপিয়ে কুপিয়ে ২৯ জন পাক-সেনাকে হত্যা করতে সক্ষম হই। এরপর ৫ নভেম্বর নগরকান্দা কুমার নদের খেয়া ঘাটে এক সম্মূখ যুদ্ধে নির্ভিক মুক্তিযোদ্ধা আঃ বারেক মিয়া শহীদ হন।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আঃ বারেক মিয়ার রক্তের শপথ নিয়ে ৮ নভেম্বর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা থানা ঘেরাও করার জন্য ৪ টি গ্রুপে বিভক্ত হই। গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর আঃ আজিজ, আমি নিজে (আলতাফ হোসেন খান), হামিদ জোমাদ্দার ও আবুল হোসেন মিয়া। আমরা ৮ নভেম্বর গভীররাতে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্তি হয়ে থানার চতুরদিকে অবস্থান নেয়।

শুরু হয় হামলা পাল্টা হামলা। সারারাত আমাদের মাঝে গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে ৯ নভেম্বর সকাল ১০টায় শত্রু পক্ষরা আমাদের নিকট আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। সে সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্কেল আলী পরাজয়ের গ্লানি সইতে না পেরে পিস্তল দিয়ে নিজের মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করে।

নগরকান্দা থানা পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হওয়ার আনন্দে আত্মহারা বীর মুক্তিযোদ্ধারা তখন থানার বুকে বাংলার মানচিত্র খোচিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে নগরকান্দাকে স্বাধীন ঘোষনা করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট তৎকালীন থানার এ এস আই আবু জাফরসহ ১০/১২ জন পুলিশ সদস্য ও দেলবাড়িয়া গ্রামের আবু জাফরসহ আরো ৮/১০ জন রাজাকার দেশের স্বার্থে কাজকরার অঙ্গীকার করায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে জুংগরদী গ্রামের আতাহার নামের এক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে কাজ করতে অস্বীকার করায় আতাহারকে নগরকান্দা বাজারে জন সম্মূখে গুলি করে হত্যা করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ৯ নভেম্বর নগরকান্দা থানা শত্রুমুক্ত হিসেবে নগরকান্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নতুন প্রজন্ম গভীর শ্রদ্ধার সাথে দিনটিকে প্রতি বছর পালন করে আসছে।


প্রিন্ট