আজ ৯ নভেম্বর নগরকান্দা শত্রুমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সাল। বাংলার মাটিতে পাক-হানাদার বাহিনীর নগ্ন থাবা। ওরা কিছুতেই যেন বাংলার মানুষকে মুক্ত আকাশের নীচে স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস নিতে দিবেনা। তা কি হয়। বাংলার জমিনকে শত্রুমুক্ত করার দীপ্ত শপথ নিয়ে প্রানের মায়া তুচ্ছু করে অদম্য সাহসের এদেশের দেশ প্রেমিক দামাল সন্তানেরা জাপিয়ে পড়ে নর পশুদের বিরুদ্ধে।
সারা দেশে যখন যুদ্ধের ভয়ঙ্কর হানাহানি তখন নগরকান্দা থানার প্রতিটি এলাকায় চলছে পাক-হানাদার আর দেশীয় বিশ্বাস ঘাতক রাজাকার নর পশুদের বিরুদ্ধে দেশ প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের স্বশস্ত্র যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৮ মাস পর ৯ নভেম্বর নগরকান্দার মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে সম্মূখ সমরে যুদ্ধ করে নগরকান্দা থানাকে পুরোপুরি শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হন।
মুক্তিযোদ্ধাকালিন কমান্ডার আলতাব হোসেন খান বলেন, দেশ মাতাকে মুক্ত করার শপথে বলিয়ান হয়ে আমরা নগরকান্দার মুক্তিযোদ্ধারা শক্তিশালী পাক-হানাদার বাহিনীর এক গ্রুপকে ২৯ মে নগরকান্দার দিঘোলিয়া বিলে সম্মূখ যুদ্ধে শুধু মাত্র দেশীয় অস্ত্র ঢাল-সড়কি নিয়ে বিলের কাঁদার মধ্যে কুপিয়ে কুপিয়ে ২৯ জন পাক-সেনাকে হত্যা করতে সক্ষম হই। এরপর ৫ নভেম্বর নগরকান্দা কুমার নদের খেয়া ঘাটে এক সম্মূখ যুদ্ধে নির্ভিক মুক্তিযোদ্ধা আঃ বারেক মিয়া শহীদ হন।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আঃ বারেক মিয়ার রক্তের শপথ নিয়ে ৮ নভেম্বর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা থানা ঘেরাও করার জন্য ৪ টি গ্রুপে বিভক্ত হই। গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর আঃ আজিজ, আমি নিজে (আলতাফ হোসেন খান), হামিদ জোমাদ্দার ও আবুল হোসেন মিয়া। আমরা ৮ নভেম্বর গভীররাতে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্তি হয়ে থানার চতুরদিকে অবস্থান নেয়।
শুরু হয় হামলা পাল্টা হামলা। সারারাত আমাদের মাঝে গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে ৯ নভেম্বর সকাল ১০টায় শত্রু পক্ষরা আমাদের নিকট আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। সে সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্কেল আলী পরাজয়ের গ্লানি সইতে না পেরে পিস্তল দিয়ে নিজের মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করে।
|
নগরকান্দা থানা পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হওয়ার আনন্দে আত্মহারা বীর মুক্তিযোদ্ধারা তখন থানার বুকে বাংলার মানচিত্র খোচিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে নগরকান্দাকে স্বাধীন ঘোষনা করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট তৎকালীন থানার এ এস আই আবু জাফরসহ ১০/১২ জন পুলিশ সদস্য ও দেলবাড়িয়া গ্রামের আবু জাফরসহ আরো ৮/১০ জন রাজাকার দেশের স্বার্থে কাজকরার অঙ্গীকার করায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে জুংগরদী গ্রামের আতাহার নামের এক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে কাজ করতে অস্বীকার করায় আতাহারকে নগরকান্দা বাজারে জন সম্মূখে গুলি করে হত্যা করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ৯ নভেম্বর নগরকান্দা থানা শত্রুমুক্ত হিসেবে নগরকান্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নতুন প্রজন্ম গভীর শ্রদ্ধার সাথে দিনটিকে প্রতি বছর পালন করে আসছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha