যুবদল নেতা , ছাত্রশিবির কর্মী, অস্ত্র ও নারী পাচার মামলার আসামি এবং মাদকাসক্তদের দিয়ে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবকলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় বীরেন শিকদার স্কুল অ্যান্ড কলেজের হলরুমে আয়োজিত সম্মেলনে এই বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা দিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক। এ ঘটনায় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা সমালোচনা ঝড় উঠেছে। ক্ষোভে দু:খে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে নতুন কমিটি স্থান পাওয়া নেতা-কর্মীদের।
আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মহম্মদপুর উপজেলা। স্বাধীনতা পরতবর্তী সময়ে সবকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন এই আসনে। মাগুরা জেলার মধ্যে মহম্মদপুর উপজেলাকে সব সময় আওয়ামীলীগের রাজনীতির মডেল বলা হয়ে থাকে। এখানে আওয়ামীলীগের রাজনীতির পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে সমাদৃত। সেখানে সেচ্ছাসেবকলীগের কমিটিতে যুবদল নেতা , ছাত্রশিবির কর্মী, অস্ত্র ও নারী পাচার মামলার আসামি এবং মাদকাসক্তদের স্থান দেওয়ায় বিতর্কের মুখে পড়েছে কটিরি উপজেলা শাখার সভাপতি-সম্পাদক।
|
শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় বীরেন শিকদার স্কুল অ্যান্ড কলেজের হলরুমে আয়োজিত সম্মেলনে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সুজন শিকদার এবং সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমানের উপস্থিতিপতে আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে রাতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের স্বাক্ষরে অনুমোদিত কমিটি ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
এর মধ্যে বাবুখালি ইউনিয়েনে মো. আলী হাসানকে সভাপতি এবং মুন্সি মো. মঞ্জুকে সাধারন সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। সভাপতি আলী হাসান যুবদলের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। এবং তার পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এমন ঘটনায় ওই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ব্যপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এবং কমিটি ঘোষণার পরপরই সাধারন সম্পাদক, সহ-সভাপতি, যুগ্ম- সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, অর্থ সম্পাদকসহ একাধিক সদস্য সদ্য ঘোষিত এই কমিটির প্রাপ্ত পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নে সভাপতি পদে নারী পাচার মামলার আসামি মো. তরিকুল ইসলাম চুন্নু এবং সাধারন সম্পাদক যুবদল নেতা আহাদ খান কে সাধারন সম্পাদক এবং অস্ত্র মামলার আসামি নান্নু মিয়া কে সহ-সভাপতি করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটি ঘোষণার পর এলাকায় আলোচনা সমালোচনা এবং স্থানীয় নেতাদের তোপে মুখে রাতেই বিতর্কিত এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক। এবং দপ্তর সম্পাদক আশিষ সরকার স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্রে বিলুপ্ত এই কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। নহাটা ইউনিয়নে বিতর্কিত লোকদের দিয়ে কমিটি করায় ঘোষিত কমিটি থেকে সাথে সাথে পদত্যাগ করেছেন যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মো. রানা শিকদার ও দপ্তর সম্পাদক মাছুদ মোল্যা।
বিনোদপুর ইউনিয়নের কমিটিতে রাজাকার ও জামায়াত নেতা আকবরের ভাতিজা মশিউর রহমান কে সহ-সভাপতি,জামায়াতে ইসলামের আমীরের ভাই খালিদ সাইফুল্লাহ লিটু কে প্রকাশনা সম্পাদক, যুবদল কর্মী তারিকুল ইসলামকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। মশিউর রহমানের ফেসবুক আইডি তে বিভিন্ন সময়ে সরকার বিরোধী প্রচার-প্রচারণা করার অভিযোগ রয়েছে। কমিটিতে বিতর্কিত এসব ব্যক্তিদের ঠাঁই দেওয়ায় স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ঘোষিত এই কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। রাজাপুর ইউনিয়নে বিএনপি কর্মী জামির হোসেন কে সহ-সভাপতি, যুবদল কর্মী ইসরাফিল ইসলাম কে যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, বিএনপি কর্মী ইলিয়াস হোসেন কে সদস্য এবং জামায়াত কর্মী বক্কার হোসেন কে সদস্য করায় এই কমিটিকেও বাতিলের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের এই বিতর্কিত কমিটি ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে পদবঞ্চিতরা অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে বিনোদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও মাগুরা জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ব অ্যাডভোকেট সাজিদুর রহমান সংগ্রাম বলেন, আমাদের না জানিয়ে বিএনপি জামায়াত এবং শিবির কর্মী দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে স্থান পাওয়া অধিকাংশ অপরিচিত মুখ। রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, কমিটিতে স্থান পাওয়া অর্ধেকেরে বেশী লোক শিবির ও বিএনপি কর্মী।
বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির কাছে অভিযোগ করেছি এবং কমিটি বাতিল করতে বলেছি। পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের সভাপতি এমডি গোলজার রহমান বলেন, যাদের কমিটিতে আনা হয়েছে তাদের অধিকাংশ শিবির ও ছাত্র দলের। এরা বিএনপির শাসনামলে বিভিন্নভাবে আমাদের হয়রানি করেছে। এছাড়া কমিটির সভাপতি নারী পাচার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সহ সভাপতি অস্ত্র মামলার আসামি।
মহম্মদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম চুন্নু বলেন, এ বিষয়ে আমি আওয়ামীলীগের সভাপতি ও স্থানীয় এমপির কাছে অভিযোগ করেছি। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন, আমাকে কিছু না জানিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে যে কমিটি করা হয়েছে তাতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে এর দ্বায়ভার আমি নিতে পারবো না।
মহম্মদপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাগর বলেন, শতভাগ আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের কমিটিতে আনা হয়েছে। পলাশবাড়িয়া কমিটিতে অভিযোগ আসায় সাথে সাথে আমরা কমিটি ভেঙ্গে দিয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে বিষয়গুলো আমার জানা ছিল না। সভাপতি সুজন শিকদার বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে ষড়যন্ত্র করে অপপ্রচার করা হচ্ছে। তবে পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের কমিটি গঠনে আমাদের কিছু ভুলত্রুটি ছিল।
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক, মাগুরা জেলার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ড. ওহিদুর রহমান টিপু বলেন, কমিটি করার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে বিএনপি জামাতের কর্মী দিয়ে কমিটি করার অভিযোগ আমার কাছে এসেছে।
প্রিন্ট