ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo আলমডাঙ্গার কানাইনগর-শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছরেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া Logo কুষ্টিয়ায় জুলাই বিপ্লব নিয়ে কটূক্তি করায় সেই পুলিশ সদস্য ক্লোজড Logo যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের ব্যালকনি ভেঙে প্রকৌশলীসহ নিহত ৩ Logo শিবপুরে কাবিখা ও টিআর প্রকল্পের ৫২ লাখ টাকাসহ দুই কর্মকর্তা গোয়েন্দার জালে আটক Logo বেনাপোলের বাহাদুরপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র জরুরি কর্মীসভা অনুষ্টিত Logo সিংড়ায় ছাত্রশিবিরের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি Logo জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় ফুলবাড়ীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দোয়া মাহফিল Logo কাফনের কাপড় পরে কুষ্টিয়ায় জেলা বিএনপির কার্যালয় ঘেরাও Logo তানোরে পানিতে ডুবে এক যুবকের মৃত্যু Logo তানোরে ফসলি জমি জবরদখল চেষ্টার অভিযোগ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

তানোরে শিব নদীর নাব্যতা সংকট বিপাকে মৎস্যজীবীরা

আলিফ হোসেনঃ

 

রাজশাহীর তানোরে শিব নদীর নাব্যতা সংকট। এতে নদী পাড়ের কয়েকটি গ্রামের শত-শত মৎস্যজীবী পরিবার চরম বিপাকে পড়েছে। একটা সময় নদী পাড়ের কয়েকটি গ্রামের ভুমিহীন শত শত মৎস্যজীবী বছরে ৬ মাস নদী মাছ আহরণ ও বাকি ৬ মাস নদী পাড়ে জেগে উঠা খাস জমিতে ধান চাষ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে একদিকে এখন নদীতে মাছের সংকট অন্যদিকে নদী পাড়ের জেগে উঠা খাস জমি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও কৃষিকাজে এই নদীর পানিতে সেচ দেয়া হতো। কিন্তু নাব্যতা সংকটে কৃষিকাজে নদীর পানি সেচ দেয়া যাচ্ছে না।কৃষিতে যার বিরুপ প্রভাব পড়েছে।

.

জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর-মোহনপুরের সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলা শিব নদী এক সময় পাল আমলের সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। আশির দশকেও এই নদীতে লঞ্চ চলাচল করত, যা পরিবহন ও কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ অঞ্চলের মানুষের জেলা সদরে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এই নৌপথ। তবে বর্তমানে দখল, দূষণ ও ভরাটের ফলে নদটি প্রায় মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুমে হালকা বৃষ্টিতেই বন্যা ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, আবার ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নদীর পানি শুকিয়ে যায়। ফলে কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করে।

.

শিব নদীর উৎপত্তি নওগাঁর মহাদেবপুরে, যা আত্রাই নদীর একটি শাখা। প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী তানোরের বিলকুমারী বিল অতিক্রম করে পবার বাগধানীতে জামদহ নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে বারনই নামে পরিচিত হয়। এই বারনই নদী রাজশাহীর প্রাচীন নদীবন্দর নওহাটা হয়ে চলনবিলে প্রবেশ করে মূল আত্রাই নদীতে গিয়ে মিশেছে।
একসময় শিব নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ছিল। ১৯৮২ সালেও এই নদীপথে প্রতিদিন লঞ্চ চলাচল করত। তানোর অঞ্চলে উৎপাদিত ফসল পরিবহন এবং পান উৎপাদনের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ব্রিটিশ আমলে এখানকার পান নলডাঙ্গা হয়ে উত্তর প্রদেশে রপ্তানি হতো।

.

তবে ষাটের দশকের শুরুর দিকে মান্দা উপজেলার বৈদ্যপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় জনগণ একটি বাঁধ নির্মাণ করায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে নদীতে কেবল বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয়, যা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে প্রায় শুকিয়ে যায়। ফলে কৃষকরা বোরো চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না। বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে, মুন্ডমালা পৌরসভায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিএমডিএ অতিরিক্ত পানি উত্তোলনে নিরুৎসাহিত করছে, যা কৃষকদের আরও বিপাকে ফেলেছে।

.

এমন পরিস্থিতিতে শিব নদী পুনঃখনন জরুরি হয়ে পড়েছে। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে না আনলে হাজার হাজার একর কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খাড়িগুলো খননের উদ্যোগ নিলেও মূল নদীর সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। কৃষকদের দাবি, দ্রুত শিব নদী পুনঃখনন ও নাব্যতা পুনরুদ্ধার করে কৃষিখাতে বিপর্যয় রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

আলমডাঙ্গার কানাইনগর-শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছরেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া

error: Content is protected !!

তানোরে শিব নদীর নাব্যতা সংকট বিপাকে মৎস্যজীবীরা

আপডেট টাইম : ০৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

আলিফ হোসেনঃ

 

রাজশাহীর তানোরে শিব নদীর নাব্যতা সংকট। এতে নদী পাড়ের কয়েকটি গ্রামের শত-শত মৎস্যজীবী পরিবার চরম বিপাকে পড়েছে। একটা সময় নদী পাড়ের কয়েকটি গ্রামের ভুমিহীন শত শত মৎস্যজীবী বছরে ৬ মাস নদী মাছ আহরণ ও বাকি ৬ মাস নদী পাড়ে জেগে উঠা খাস জমিতে ধান চাষ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে একদিকে এখন নদীতে মাছের সংকট অন্যদিকে নদী পাড়ের জেগে উঠা খাস জমি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও কৃষিকাজে এই নদীর পানিতে সেচ দেয়া হতো। কিন্তু নাব্যতা সংকটে কৃষিকাজে নদীর পানি সেচ দেয়া যাচ্ছে না।কৃষিতে যার বিরুপ প্রভাব পড়েছে।

.

জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর-মোহনপুরের সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলা শিব নদী এক সময় পাল আমলের সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। আশির দশকেও এই নদীতে লঞ্চ চলাচল করত, যা পরিবহন ও কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ অঞ্চলের মানুষের জেলা সদরে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এই নৌপথ। তবে বর্তমানে দখল, দূষণ ও ভরাটের ফলে নদটি প্রায় মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুমে হালকা বৃষ্টিতেই বন্যা ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, আবার ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নদীর পানি শুকিয়ে যায়। ফলে কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করে।

.

শিব নদীর উৎপত্তি নওগাঁর মহাদেবপুরে, যা আত্রাই নদীর একটি শাখা। প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী তানোরের বিলকুমারী বিল অতিক্রম করে পবার বাগধানীতে জামদহ নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে বারনই নামে পরিচিত হয়। এই বারনই নদী রাজশাহীর প্রাচীন নদীবন্দর নওহাটা হয়ে চলনবিলে প্রবেশ করে মূল আত্রাই নদীতে গিয়ে মিশেছে।
একসময় শিব নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ছিল। ১৯৮২ সালেও এই নদীপথে প্রতিদিন লঞ্চ চলাচল করত। তানোর অঞ্চলে উৎপাদিত ফসল পরিবহন এবং পান উৎপাদনের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ব্রিটিশ আমলে এখানকার পান নলডাঙ্গা হয়ে উত্তর প্রদেশে রপ্তানি হতো।

.

তবে ষাটের দশকের শুরুর দিকে মান্দা উপজেলার বৈদ্যপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় জনগণ একটি বাঁধ নির্মাণ করায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে নদীতে কেবল বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয়, যা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে প্রায় শুকিয়ে যায়। ফলে কৃষকরা বোরো চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না। বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে, মুন্ডমালা পৌরসভায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিএমডিএ অতিরিক্ত পানি উত্তোলনে নিরুৎসাহিত করছে, যা কৃষকদের আরও বিপাকে ফেলেছে।

.

এমন পরিস্থিতিতে শিব নদী পুনঃখনন জরুরি হয়ে পড়েছে। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে না আনলে হাজার হাজার একর কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খাড়িগুলো খননের উদ্যোগ নিলেও মূল নদীর সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। কৃষকদের দাবি, দ্রুত শিব নদী পুনঃখনন ও নাব্যতা পুনরুদ্ধার করে কৃষিখাতে বিপর্যয় রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।


প্রিন্ট