আন্তর্জাতিক ভাষায় বোবা ও চিকিৎসা সারা বিশ্ব স্বীকৃতি ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা।
তাহলে এটা পরিষ্কার যে, বাংলা ভাষার মতই ইংরেজিও একটি ভাষা পার্থক্য এতোটুকুই বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয় শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলায়, অন্যথায় ইংরেজি ভাষা সারা বিশ্বের সকল ভাষাভাষীর মনের ভাব প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে বাবহ্ত হয়। পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিনত হয়েছে। আধুনিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথাপি আন্তর্জাতিক ভাষার গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি শেখার গুরুত্ব আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ।
সত্য কথা হলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের দেশে ইংরেজিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যার প্রমান, এদেশে প্রথম শ্রেণী হতে সম্মান পর্যন্ত ১৬ বৎসর বাধ্যতামূলকভাবে ইংরেজি পড়তে হয়। এজন্যই শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র পরীক্ষার পাশের জন্য সর্ব্বোচ্চ শ্রম দিয়ে ইংরেজি পড়ে যায়। কিন্তু এই ১৬ বৎসরে ৯৫% শিক্ষার্থী ১৬ দিনেও ইংরেজিতে কথা বলার সুযোগ পাই নি। এমন কি, নিজেরাও চেষ্টা করেননি আশ্চর্যজনক তথ্য হলো, উক্ত ৯৫% গ্রাজুয়েট শিক্ষর্থীকে যদি ১৬ লাইন ইংরেজিতে কথা বলতে হয় তারা সেটা পারে না। প্রথমে শুরু করলেও কিছু সময় পরই বোবা মানুষের মতো কিছু ভাংগাচোরা শব্দ উচ্চারণ করতে থাকে, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারো বোধগম্য হয় না। আমরা জানি ভাষার ৪ টি দক্ষতা হলো শোনা, বলা, পড়া ও লেখা।
অর্থাৎ প্রথম ২টি দক্ষতাই হলো শোনা ও বলা অথচ ইংরেজি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই পড়া ও লেখা দিয়ে শুরু করি। এজন্যই ১৬ বৎসর এতো শ্রম দিয়েও আমরা ইংরেজি কথা বলতে ব্যর্থ হচ্ছি। প্রমাণস্বরুপ, বাংলা ভাষা বলার জন্য আমরা কোনো শিশুকেই কিছু বিদ্যালয়ে গিয়ে বাংলা বই পড়তে হয় না। কারণ একটাই, শিশু জন্মের পর থেকে বাংলা ভাষা শুনছে এবং সে অনুযায়ী ৩ বছর বয়স থেকেই বাংলা ভালোভাবে বলতে পারছে। তাহলে দেখা যায় যেখানে শুধুমাত্র ৩ বৎসর শোনার কারণে ১৬ বৎসরের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের পরও একজন গ্রাজুয়েট ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে বুঝতে পারছে না আর বলা তো তার জন্য হিমালয়ে আরোহনের চেয়েও কঠিন। চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণায় বলা হয়, একজন মানুষ বোবা হওয়ার মূল কারণ হলো কানে না শুনতে পাওয়া, কানে পুরোপুরি না শোনার কারণে মানুষ যখন কোনো ভাষা ভালোভাবে শুনতে পায় না তখন সে শব্দ গঠন করতেও শেখে না এবং ভাষা বলতেও পারে না। সে শুধু দৈহিক ভাষা ব্যবহারে অভ্যস্থ হয়ে ওঠে আর মুখ দিয়ে কিছু এলোমেলো ধ্বনি উচ্চারণ করে কোনোকিছু বোঝানোর চেষ্টা করে, যা সকল মানুষ বুঝতে সক্ষম হয় না। একইভাবে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার খুব কম সময়ই ইংরেজি বলার সুযোগ দেওয়া হয় কিংবা শিক্ষার্থীকে বলানোর চেষ্টা করা হয়। এভাবেই আমাদের শিক্ষার্থীকে ইংরেজি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে করে রাখা হয়েছে বধির, ফলস্বরূপ তারা হয়েছে বোবা। তাদের সাথে ইংরেজিতে কথা বললে বোঝে না, আর যারা সামান্য বোঝে তারা কথা বলতে গেলে ঠিক বোবার মতোই কিছু আবোল তাবোল ধ্বনি উচ্চারণ করে। আর তাদের মলিন বদনখানি ঘর্মাক্ত হয়ে চকচক করতে থাকে।
এ অবস্থা হতে পরিত্রাণ পেতে ইংরেজি শেখানোর জন্য শোনা ও বলা দিয়ে শুরু করতে হবে, যেখানে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক ইংরেজি ভাষা শেখানো শুরুই করেন A, B, C, D পড়ানো ও লেখানো দিয়ে। এভাবে আমরা কখনোই ভাষা শিক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না। তাই প্রাথমিক স্তরেই ইংরেজি শেখানো শুরু করতে হবে নিজে বলে এবং শিক্ষার্থীদেরকে ছোট ছোট শব্দ বলিয়ে সহযোগিতা করার মাধ্যমে। তবে একেবারেই যদি কোনো শব্দ, উপকরণ বা শিক্ষকের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে বোঝানো না যায় তখন বাংলায় বলা যেতে পারে। আর ইংরেজি পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র লেখার পরীক্ষা না নিয়ে ৫০% নম্বরের বলার দক্ষতার পরীক্ষাও নিতে হবে। আর তখনই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর পরিশ্রম সার্থক হবে।
আরও পড়ুনঃ শিক্ষা দিবস উপলক্ষে ফরিদপুরে ছাত্র ইউনিয়নের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত |
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের রপ্তানিকৃত শ্রমিকেরা শুধু ইংরেজি জানার কারণে বিদেশে পাবে ন্যায্য পারিশ্রমিক। এমনকি আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোও আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষ স্থানীয় মানবসম্পদ ব্যবহার করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে পারবে। সব মিলিয়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে।
প্রিন্ট