শিক্ষা দিবস উপলক্ষে জাতীয় বাজেটের ২৫ ভাগ এবং আয়ের ৮% শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির লক্ষে কর্পোরেট কোম্পানির লভ্যাংশের উপর সারচার্জ আরোপসহ শিক্ষা সংকট দূর করতে বিভিন্ন দাবিতে ছাত্র সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ফরিদপুর জেলা সংসদ।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর ) ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে এই ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ফরিদপুর জেলা সংসদের সভাপতি শিতাংশু ভৌমিক অংকুর সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক প্রত্যাশা মজুমদার এর সঞ্চালনায় ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ফরিদপুর জেলা সংসদের সংগ্রামী সহ-সভাপতি শাপলা চক্রবর্তী, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক নিশা পোদ্দার। এছাড়া সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন শহিদ রাজু বিতর্ক অঙ্গনের সদস্য লাজুক বিনতে মাইমুনা, অধরা ইসলাম,সিরাজুল ইসলাম, অলিয়া আক্তার প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, সেপ্টেম্বর সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের মহান শিক্ষা দিবস। শিক্ষার স্বার্থে রক্তে আর ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত ইতিহাস। ১৯৬২ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুল ও টঙ্গীর শ্রমিক সুন্দর আলী সহ নাম না-জানা অনেকেই। তাদের স্মরণে এই দিনকে শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করি আমরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আইয়ুব খান সরকারের শরীফ কমিশন রিপোর্টে শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়।“ শিক্ষা সম্পর্কে জনসাধারণের চিরাচরিত ধারণা অবশ্যই বদলাতে হবে। সস্তায় শিক্ষা লাভ করা যায় বলিয়া তাহাদের যে ভুল ধারণা রয়েছ, তা শীঘ্রই ত্যাগ করিতে হবে। যেমন দাম তেমন জিনিস – এই অর্থনৈতিক সত্যকে অন্যান্য ব্যাপারে যেমন শিক্ষার ব্যাপারেও তেমনি এড়ানো দুষ্কর”। এ রিপোর্টে সাম্প্রদায়িক চেতনা, জাতীয় স্বার্থ বিরোধী, পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষাই শিক্ষার লক্ষ্য তা রিপোর্টের অংশে স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।
১৯৬১ সালে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ ডিসেম্বর এই বৈঠকে ছাত্র ইউনিয়ন সামরিক শাসনের পরিবর্তে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা, আইয়ুব শিক্ষানীতি বাতিল, রাজবন্দীদের মুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব করে- যা ওই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। আরো সিদ্ধান্ত হয় যে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে স্বৈরতন্ত্র বিরোধী জঙ্গি আন্দোলন।
১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী গ্রেফতার হলে ৩১ জানুয়ারি ৪ টি ছাত্র সংগঠন মধুর ক্যান্টিনে যৌথভাবে বসে।
ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি দুটি সংগঠন ( ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফেডারেশন ও ছাত্র শক্তি) ছিল সরকারের সমর্থক। এদের মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারবিরোধী আন্দোলনকে ভুল পথে পরিচালিত করা। অবশ্য ছাত্র ইউনিয়ন এ বিষয়ে সতর্ক ছিল।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্যদিয়ে ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ ও লাল সবুজের পতাকা। যে স্বপ্ন-সাধকে বুকে ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন-পণ যুদ্ধ করেছিল, তা আজো বাস্তবায়ন হয়নি। ৩৮ বছর পরেও আমরা শোষিত-বঞ্চিত-নিপিড়িত-নির্যাতি ত। ক্ষুধা-দারিদ্র-বেকারত্বের অবসান হয়নি। পাকিস্তান আমলে এ-বঙ্গে বড়লোকের সংখ্যা ছিল বাইশ পরিবার। বর্তমানে বাংলাদেশে এ-সংখ্যা দাড়িয়েছে প্রায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশী। একই সময়ে উত্তরবঙ্গে না খেয়ে মানুষ মারা যাছে।
এদেশে এখন পর্যন্ত কোনো পূর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়নি। সেই ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমলের কেরানী তৈরী করার শিক্ষাব্যবস্থা বহাল রয়েছে। যে শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে ভোগবাদী-সুবিধাবাদী হিসেবে তৈরি করে। যার প্রমাণ হলো বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ানশিপের গৌরব অর্জন করে দেখিয়েছে। শিক্ষা এখন আলু-পটলের মত পণ্য। বিদ্যা ও বিদ্ব্যান টাকায় বিক্রি হয়। শিক্ষা তার, টাকা আছে যার। টাকা নেই, শিক্ষা পাওয়া যাবে না।
প্রিন্ট