আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মারা গেছেন। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা ৪০ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন।
সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু গণমাধ্যমকে এ সংবাদ নিশ্চিত করেছেন। লাবু চৌধুরী জানিয়েছেন সোমবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তার মায়ের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, পরে মরদেহ ফরিদপেুরের নাগরকান্দায় নেওয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মরহেদ আবারও ঢাকায় আনা হবে এবং বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
সংসদ সদস্যরা মারা গেলে তাদের জানাজা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হওয়া রীতি প্রচলিত আছে। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য মারা গেলেও তাদের জানাজা হয়নি সেখানে। সর্বশেষ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার জানাজা জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়। এক্ষেত্রে সাজেদা চৌধুরীর জানাজা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় হবে কীনা তা নিশ্চিত করেনি সংসদ সচিবালয়।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ সাজেদা চৌধুরী ধানমণ্ডির বাসায় থাকতেন। অবস্থার অবনতি হলে গত মঙ্গলবার তাকে রাজধানীর সিএমএইচে ভর্তি করানো হয়। বুধবার অবস্থার তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। তবে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।
আওয়ামী লীগের এ বর্ষিয়ান নেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিন ছেলে ও এক মেয়ের জননী সাজেদা চৌধুরী নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের উপনেতা নির্বাচিত হন।
১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তার বাবা সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। তার স্বামী প্রয়াত গোলাম আকবর চৌধুরী। তিনি ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থায়ীভাবে চলে আসেন তিনি। ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতার গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২-১৯৭৬ সময়কালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডের ন্যাশনাল কমিশনার।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ যখন ক্রান্তিকালে পড়েছিল তখন সাজেদা চৌধুরী দলের হাল ধরেন। দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর যে কজন একনিষ্ঠ কর্মীদের কাছে পেয়েছিলেন সাজেদা চৌধুরী ছিল তার মধ্যে অন্যতম। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সাজেদা চৌধুরী। এরপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যতগুলো কমিটি গঠন করা হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি দলের সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাজেদা চৌধুরী ১৯৭০-১৯৭৩ মেয়াদে জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং ১৯৭৩-৭৫ মেয়াদে ১ম জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯১-৯৫ সময়কালে ৫ম জাতীয় সংসদ এবং ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে ৭ম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৫ম জাতীয় সংসদে তিনি সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং ৭ম জাতীয় সংসদে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।