মাগুরায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নায্য দাবী আদায়ের লক্ষ্যে অর্ধদিবস কর্মবিরতী পালন করা হয়।
সোমবার ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ৮-১২ টা পর্যন্ত মাগুরা জেলা প্রশাসনের ভিতরে অবস্থিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে অর্ধদিবস কর্মবিরতী চলে। একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সদ্য-স্বাধীন যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও দুর্যোগ প্রবন দেশের কোটি মানুষের পুনর্বাসন, গ্রামীণ অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পুর্নগঠনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় গঠন করেন। এ মন্ত্রণালয়ের অধীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (ডিডিএম) এর জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের কমকর্তা যথাক্রমে জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কমকর্তা (ডিআরআরও) এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সহ দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা অধিদপ্তরের সবস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের কর্মদক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের জনসাধারণের দুর্যোগজনিত ঝুঁকিহ্রাস, দারিদ্র্য বিমোচন, সার্মথ্য বৃদ্ধি, দুর্যোগের নেতিবাচক প্রভাব থেকে দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের বিপদাপন্নতা হ্রাস, যে কোন দুর্যোগ দক্ষতার সাথে জরুরী সাড়াদান ইত্যাদি কর্মসূচি সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করে আসছে।
আরও পড়ুনঃ সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর জানাযায় দলমত নির্বিশেষে মানুষের ঢল
এরই ধারাবাহিকতায় জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নিম্নোক্ত বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। ক. বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য প্রশাসনের পাশে থেকে মানবিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যেমন- জিআর ক্যাশ, খাদ্যশস্য, ঢেউটিন ও শীতবস্ত্র সহ ইত্যাদি। খ. গ্রামীণ অবকাঠামো, যেমন- কাবিখা, কাবিটা, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষণ (টিআর), অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি), মুজিব কিল্লা নির্মাণ ও সংস্কার, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, গ্রামীণ রাস্তা টেকসইকরণে এইচবিবিকরনসহ উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক বাস্তবায়ন।
গ. বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচী বীর নিবাস নির্মাণ কাজে বাস্তবায়ন। ঘ. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গৃহীত কর্মসূচী মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ন্যায়-নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাগণ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। ঙ. বিভিন্ন দূর্ঘটনা, যেমন- অগ্নিকান্ড, মহামারী, নৌকাডুবি, লঞ্চডুবি, সর্প দংশন, বজ্রপাত, পাহাড় ধ্বসে নিহত বা আহতদের সৎকার বা চিকিৎসার্থে তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করা। চ. বিভিন্ন দূর্যোগ, যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, সুনামী, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, জলাবদ্ধতা, ভবনধ্বস, কারখানা দূর্ঘটনা বা অগ্নিকান্ড ইত্যাদি দুর্যোগে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা, আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগকালীন ত্রাণ কার্ড পরিচালনা করা। ছ. দুর্যোগজনীত ঝুঁকিহ্রাসে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো ও অবকাঠামো নির্মাণ বা সংস্কার করে জনসাধারণের সার্মথ্য বৃদ্ধি করতঃ দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ইত্যাদি কাজ করা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২ সালে এ প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো গঠনের জন্য বলা হলেও গত ১০ বছর এর সন্তোষজনক কোন অগ্রগতি হয়নি। জনবল কাঠামো ও নিয়োগবিধির প্রস্তাবটি দীর্ঘদিন পূর্বে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলেও বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপন করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ এর আলোকে জনবল কাঠামো এবং নিয়োগবিধি বাস্তবায়ন কার্যক্রম পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগন সূচনালগ্ন হতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে। এছাড়াও ৪১৬ টি বিভিন্ন পদ শূন্য থাকায় অধিদপ্তর এবং মাঠ পর্যায়ের কাজকর্মে স্থরিরতা নেমে এসেছে। ফলে এ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সংযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা সভা, স্মারকলিপি প্রদান, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচী পালন করে আসছে। এসব দাবির যৌক্তিকত পর্যালোচনায় কর্তৃপক্ষ ঐক্যমত প্রকাশ করলেও বাস্তবায়নের কোন কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত না হওয়ায় এ অধিদপ্তরের সংযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে ৫ টি দাবী বাস্তবায়নের জন্য, দাবী গুলো হলো যথাক্রমে- ক. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ এর আলোকে প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো ও নিয়োগবিধি বাস্তবায়ন। খ. জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কমকর্তা (ডিআরআরও) পদ আপগ্রেডেশন। গ. উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমকর্তা (পিআইও) পদ আপগ্রেডেশন। ঘ. সচিবালয়ের ন্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মচারীদের পদনাম পরিবর্তন। ঙ. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সকল শূন্যপদ পদোন্নতি, চলতি দায়িত্ব ও নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মাগুরা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিনকে জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নায্য দাবী আদায়ের লক্ষ্যে, ঢাকা কেন্দ্রীয় ঘোষিত (ডিআরআরও) সভাপতি ইসমাইল হোসেন এর নির্দেশনায়, অধিদপ্তরাধীন সংযুক্ত কল্যাণ পরিষদ সোমবার ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বৃহস্পতিবার ১৫ সেপ্টেম্বর দেশের সকল জেলা, উপজেলা এবং অধিদপ্তরে অর্ধদিবস সকাল ৮ টার সময় থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত কর্মবিরতী পালন করা হবে।
আরও পড়ুনঃ শারদীয়া দুর্গাপুজা উপলক্ষে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ততা বাড়ছে পালদের
বৃহস্পতিবার ১৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১২.০৫ টায় মাগুরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর দাবী দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। পরবর্তী কর্মসূচী প্রণয়নের লক্ষ্যে শনিবার ১৭ সেপ্টেম্বর পুনরায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে সংযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণ পরিষদের সভা আহবান করা হবে।
প্রিন্ট