ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে গ্রীষ্মকালীন মাধ্যমিক স্কুল মাদ্রাসা পর্যায়ে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের বিরুদ্ধে পূর্বভাটদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে দাদপুর ইউনিয়নের রাঙ্গামুলারকান্দী স্কুল মাঠে কাদিরদী স্কুল বনাম পূর্বভাটদী ইসলামিয়া মাদ্রাসার সেমি ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে মাদ্রাসা ও স্কুলের ছাত্ররা ভালই খেলছিল। ১০ মিনিট খেলার শেষার্ধের সময় কাদিরদী স্কুল পক্ষের একজন খেলোয়ার ইচ্ছাকৃতভাবে মাদ্রাসার খেলোয়রদের ডি-বক্সের ভেতর পড়ে যায়। আম্পিয়ার মাদ্রাসার খেলোয়ারদের ফাউল ধরে স্কুলের অনুকুলে ফ্রি কিক দেয়। মাদ্রাসার ছাত্ররা সে সিদ্ধান্ত মেনে না নিলে আধাঘন্টার তর্কাতর্কির এক পর্যায় খেলা অমীমাংশিত রয়ে যায়। পরে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা ছাত্রদের খেলার স্থান ত্যাগ করতে বলে। সে রাগে ক্ষোভে বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্ররা মাদ্রাসার দরজা, জানালা, বেঞ্চ, লাইট, সুইচ ভাঙচুর করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৮সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা -২০২২ এর ফুটবল ম্যাচের প্রথম রাইন্ডের খেলায় কুন্দারদিয়া আলিয়া মাদ্রসাকে ৪-০ গোলের ব্যবধানে পূর্বভাটদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্ররা জয় লাভ করেন। মাদ্রাসা ভাঙচুরের ঘটনার কথা স্বীকার করে মো. রাজিব নামের এক ছাত্র বলেন, আমি একাই এ মাদ্রাসা ভাঙচুর করেছি। আমার সাথে আর কেউ ছিল না।
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গ্রাম্য দলাদলির রেশ ধরে নৈশপ্রহরী আজিজুর রহমানকে জড়িয়ে ওই ছাত্র বলেন, এর ইন্দন দাতা নৈশপ্রহরী মো. আজিজুর রহমান টুক। তবে মাদ্রাসার পাশের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা বলেন, পঁাচ থেকে ছয় জন মাদ্রাসার ছাত্ররা জার্সি পরিহিত অবস্থায় মাদ্রাসার ভেতর ঢুকে মাদ্রাসা ভাঙচুর করে। মাদ্রাসা ভাঙচুর করে যে ছাত্ররা তাদের তিন জনকে আমি চিনতে পেরেছি তারা হলেন, মো.রাজিব শেখ, মো. ফরুক খান, মো. মাসুম শেখ। মাদ্রাসার দপ্তরী আব্দুল জব্বার বলেন, গ্রীষ্মকালীন মাধ্যমিক স্কুল মাদ্রাসা পর্যায়ে ফুটবল খেলা অমীমাংশিত থাকার কারণে মাদ্রাসার ছাত্ররা ক্ষিপÍ হয়ে মাদ্রাসা ভাঙচুর করে। আব্দুল জব্বার আরও বলেন, এ ভাঙচুরের ঘটনা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিতে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অহেতুক ভাবে নৈশপ্রহরী মো. আজিজুর রহমান টুকুকে ফঁাসাতে মিথ্যা নাটক উদ্ভব করছে।
নৈশপ্রহরী মো. আজিজুর রহমান টুক বলেন, বৃহস্পতিবার (৮সেপ্টেম্বর) সকালে আমার ফরিদপুর আদালতে একটি মামলার শুনানীর দিন ধার্য্য ছিল, সেখানে আমি চলে যায়। পরে বিকেলে বাড়ি ফিরে আসি। বাড়িতে আসার পরে মাদ্রাসার সুপার মো. ইলিয়াস মোল্যা আমাকে ফোন করে বলে কারা যেন মাদ্রাসা ভাঙচুর করছে দেখতো । তখন আমি মাদ্রাসায় গিয়ে ভাঙচুরের দৃশ্য দেখতে পায়। তখন ছাত্ররা সেখান থেকে চলে যায়। তিনি অভিযোগ দিয়ে বলেন, আমি ওই দিন এলাকায় ছিলাম না, এ বিষয়ে কিছু জানিনা অথচ আমার নাম জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। আমি এর বিচার চাই। এবং যারা মাদ্রাসা ভাঙচুরের ঘটনা অন্য খাতে নিতে চায় তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবী জানাই।
ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. ইলিয়াস মোল্যা বলেন, ছাত্ররা মাদ্রাসা ভাঙচুর করেছে এটা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক বিষয়। এটা নিয়ে আমরা মাদ্রাসা পর্ষদের সভাপতি ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে শুক্রবার মীমাংশার জন্য বসেছি। তবে এখনও কোন মীমাংশা হয়নি। এ বিষয় নিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাজিবসহ পঁাচজন ছাত্র মাদ্রাসায় ঢোকে এবং সে একাই না কি ভাঙচুর করেছে এমনটিই বলেছে রাজিব। আমরা আবার কিছু দিন পরে এটা নিয়ে বসে মীমাংশা করে দিব।
আরও পড়ুনঃ সদরপুরে আলোকধারা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. রকিবুল হাসান বলেন, এমন ঘটনা আমি জানিনা, আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। যে ছাত্ররা তার নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করতে পারে সে আর যাই হোক মানুষ হতে আসে না।
প্রিন্ট