ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী, স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠ বোয়ালমারী জর্জ একাডেমী স্কুলটি বর্তমানে চরম এক ক্রান্তিকালীন অতিক্রম করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গোটা প্রতিষ্ঠানের কাছে এখন গলগ্রহ হয়ে দাড়িয়েছেন বিদ্যালয় সভাপতি মোঃ কামরুল হাসান।
দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা, ক্ষমতার অপব্যবহার, ভিন্ন মতের শিক্ষকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্য পূর্ণ আচরণ,পছন্দের শিক্ষক-কর্মচারীকে বেআইনী সুবিধা দিয়ে বিবেদ সৃষ্টি, একাডেমিক কার্যক্রমে প্রধান শিক্ষককে অসহযোগিতা সহ ইত্যাকার অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে থানায় জেনারেল ডায়েরি করেছেন স্বয়ং প্রধান শিক্ষক মোঃআব্দুল আজিজ মোল্লা।
আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারী ডাকাতি মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার
সভাপতির এহেন অসাধু ও নেতিবাচক কর্মকান্ডে ভেঙ্গে পড়েছে বিদ্যালয় প্রশাসন,ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম, স্থবির হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক অগ্রযাত্রা।
প্রধান শিক্ষককের ডায়েরি ও স্কুলের বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়, সভাপতি নির্বাচিত হবার পর থেকেই কামরুল হাসান তার অনুগত শিক্ষক কর্মচারীদের বেআইনী সুযোগ সুবিধা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেন। এ নিয়ে স্কুলের শিক্ষক মন্ডলী ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পরস্পর কাঁদা ছুঁড়া-ছুড়িতে লিপ্ত হন। সভাপতি তার ভিন্নমতের শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তাদের বেতন-ভাতার ফাইলে সাক্ষর দিতে চাননা। সভাপতির অনিহার কারণে স্কুলের কারিগরি শাখার শিক্ষক কর্মচারীরা বেশ কয়েক মাস বেতন-ভাতা পাননা। তিনি নিয়মিত স্কুলে না আসায় তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে খাতাপত্রে সাক্ষর আনতে হয়। জরুরী প্রয়োজন হলেও তিনি স্কুল কমিটির কোন সভা ডাকেননা। ফলে বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ আঁটকে থাকে। নির্বাচিত হওয়ার পর দীর্ঘ ৬ মাসের মধ্যে সভাপতি মাত্র একটি সভা করেছেন বলে অভিযোগ সূত্রগুলোর।
জানাযায় শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব,ম্যানেজিং কমিটির সদস্যের পরস্পর বিরোধী কার্যকলাপে গোটা পরিচালনা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। চেইন অব কমান্ড না থাকায় চরম বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে চলছে সকল কর্মকাণ্ড।
ম্যানেজিং কমিটির সভায় ঘটছে রেজুলেশন খাতা ছেড়ার মত দূঃখ জনক ঘটনা।সূত্রগুলো
আরো জানায়,একটি বিশেষ মহলের আজ্ঞাবহ সভাপতি মো. কামরুল হাসান সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম কে বিধি বহির্ভুতভাবে কারিগরি শাখা হতে সম্মানী প্রদানে চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। গত ২৮ জুলাই এ বিষয়ে একটি জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যগণ আপত্তিপূর্বক পূর্বে নেওয়া সিদ্ধান্তটি বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এতে সভাপতি কামরুল হাসান ক্ষিপ্ত হয়ে কার্যবিবরণীর একটি পাতা ছিড়ে নিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন।
এছাড়াও ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্নভাবে প্রধান শিক্ষককে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করেত থাকেন। বিদ্যালয়টির স্বার্থে এসব অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক সভাপতির চক্ষুশুলে পরিনত হয়েছেন। ফলে অনেক তুচ্ছ ঘটনায়ও প্রধান শিক্ষককে শোকজ করে কৈফিয়ত তলব করেন সভাপতি।
যাকে বেআইনি ও ক্ষমতার অপব্যবহার বলে মন্তব্য করে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ বলেন,আমাকে শোকজ করতে হলে ম্যানেজিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু তিনি সেটা না করে আক্রোশ বসতঃ ক্ষমতার অপব্যবহার করে একক সিদ্ধান্তে আমাকে শোকজ করেছেন। প্রধান শিক্ষক আবদুল আজিজ বলেন, স্কুলের কোন কর্মকাণ্ডে সভাপতি আমাকে কোন সহযোগিতা করছেননা। আমার কোন মতামত বা সিদ্ধান্তের কোন পাত্তাই নেই তার কাছে। ফলে পরিস্থিতির চাপে গত ৫ আগস্ট থানায় অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি।
জানতে চাইলে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. কামরুল হাসান জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগটি ভিত্তিহীন মনগড়া। প্রথম সভায় সহকারি প্রধান শিক্ষককে কারিগরি শাখা হতে সম্মানী দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের প্ররোচনায় রেজুলেশানের পাতা ছিড়েছে কমিটির এক সদস্য, এ বিষয়ে আমি থানায় একটি জিডি করেছি।
আরও পড়ুনঃ শান্ত নড়াইলে অশান্ত জনপদঃ সাত মাসে নিহত ১০, সাম্প্রদায়িক হামলা ২
এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও বোয়ালমারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের দুর্ভাগ্য বিদ্যালয়ের সভাপতি মহোদয় একজন শিক্ষকের গৃহপালিত, আজ্ঞাবহ হাতের পুতুল। তিনি ওই শিক্ষক ও নিজের স্বার্থ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ও শিক্ষার উন্নয়নে কোন প্রকার পদক্ষেপ নেয়নি। বরং প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এ ব্যাপারে অচিরেই সচেতন অভিভাবকদের ডেকে সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে।
এ ঘটনার তদন্তকারি কর্মকর্তা বোয়ালমারী থানা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. ছরোয়ার হোসেন জানান, তদন্তের কাজ চলমান।
প্রিন্ট