কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আলোচিত চাঞ্চল্যকর রক্সি পেইন্ট কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার লোকমান হত্যার ২জন আসামীকে গ্রেফতার। আজ ৮আগষ্ট সোমবার সকাল ১১টার সময় কুষ্টিয়া র্যাব-১২ দপ্তরে প্রেসব্রিফিং করে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য- লোকমান হত্যাকান্ডের প্রেক্ষিতে নিহতের স্ত্রী জিন্নাত আরা টুম্পা বাদী হয়ে ৩ আগষ্ট ভেড়ামারা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নাম্বার-৬, তারিখ-০৩/০৮/২০২২, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড। উক্ত হত্যাকান্ডটি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রæতিতে, আসামিদের গ্রেফতারে র্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে।
র্যাব-১২, সিপিসি-১, কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান এর নেতৃত্বে একটি চৌকষ আভিযানিক দল র্যাব সদর দপ্তর এর গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় গত ৭ আগষ্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা জেলার সাভার এলাকা হতে লোকমান হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামী ভেড়ামারার সোহানুর রহমান সোহান (২২), পিতা-মোঃ দর্পণ আলী ও দর্পণ আলী (৬১), পিতা-মৃত দাউদ খন্দকার, কে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামি সোহানুর রহমান সোহান এর দেখানো মতে হত্যাকান্ডের স্থান ‘দর্পণ হার্ডওয়্যার’ এর ভাড়াকৃত গোডাউন হতে হত্যাকারীদের রক্তমাখা পোশাক উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামলার ২নং আসামি মোঃ সোহানুর রহমান সোহান লোকমান হোসেন হত্যাকান্ডে তার সক্রিয় অংশগ্রহনের কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে কুষ্টিয়া র্যাব-১২ সিপিসি-১, কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান এর কাছে।
নিহত লোকমান হোসেন ভেড়ামারা উপজেলায় অবস্থিত দর্পণ হার্ডওয়্যার এর নিকট কোম্পানির বকেয়া বিল আদায়ের উদ্দেশ্যে গেলে উক্ত দোকানের মালিক মোঃ দর্পণ আলীর ছেলে মোঃ আব্দুল আউয়াল র্যাভেন তার বাবা কর্তৃক তার নিকট প্রদত্ত বকেয়া টাকা কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে লোকমান হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে র্যাভেনের ছোট ভাই সোহান ভিকটিমকে তাদের ভাড়াকৃত গোডাউনে হত্যার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা প্রান্ত ইসলাম সাব্বির (২১), পিতা- মোঃ শেরেগুল ইসলাম এবং ৪ নং আসামি মোঃ শুভ (২৩), পিতা- মোঃ তাহাজ, উভয় সাং-কাচারিপাড়া, থানা-ভেড়ামারা, জেলা-কুষ্টিয়াদের সহযোগিতায় ভিকটিমকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং শ^াসরোধ করে হত্যাকান্ড সম্পন্ন করে।
হত্যাকান্ডের পরের দিন সকালে সোহান তার বাবা দর্পণ আলীকে বিষয়টি জানায়। তখন দর্পণ আলী সোহানকে মৃতদেহটি গুম করে ফেলার নির্দেশ দেয়। ২ আগষ্ট নিহত লোকমানের খোঁজে তার স্ত্রী দর্পণ হার্ডওয়্যার এ আসলে দর্পণ আলী জানায় যে, লোকমান আগেরদিন তার দোকানে এসেছিল এবং বকেয়া টাকা নিয়ে চলে গেছে। একই দিন গভীর রাতে র্যাভেন এর বন্ধু জীবন এবং দর্পণ হার্ডওয়্যার এর কর্মচারী তুহিন এর পাহাড়ায় ভিকটিম এর মৃতদেহ ভেড়ামারা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে পরিত্যাক্ত ড্রেনের পাসে লাশ ফেলে রাখে। ৩ আগষ্ট সকালে পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে দর্পণ আলী তার ছোট ছেলে সোহানকে নিয়ে বাড়ি থেকে আত্মগোপনে চলে যায়।
নিহত লোকমান হোসেন (২৬) বাগেরহাটের সাইদুর রহমানের ছেলে। তিনি রং কোম্পানি রক্সি পেইন্টের কুষ্টিয়ার এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কুষ্টিয়া শহরের চৌরহাঁস মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
গত ৩১ জুলাই দুপুরে রক্সি পেইন্টের এরিয়া ম্যানেজার লোকমান হোসেন ভেড়ামারা শহর থেকে নিখোঁজ হন। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান না পাওয়ায় তার স্ত্রী জিনাত আরা টুম্পা ভেড়ামারা থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। ভেড়ামারা থানার ডায়েরি নং-৬৩ তাং-০২-০৮-২০২২ ইং। পরদিন ৩ আগষ্ট বুধবার সকালে স্থানীয়রা শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে পরিত্যক্ত ড্রেনের পাস বস্তাবন্দি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে ভেড়ামারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বস্তাবন্দি মরদেটি উদ্ধার করলে তার স্ত্রী লাশ দেখে শনাক্ত করেন আমার স্বামী লোকমানের লাশ।
নিহত লোকমানের সহধর্মিনী জিন্নাত আরা টুম্পা ৩ আগষ্ট বাদী হয়ে ভেড়ামারা থানায় ৭ জন কে আসামি করে মামলা দেয় ভেড়ামারা থানায়। যার মামলা নং ০৬ তারিখ ৩/৮/২২।
সেই আলোচিত মামলার আসামী ভেড়ামারা শহরের দর্পণ হার্ডওয়্যার দোকানের মালিক দর্পন ও তার চোট ছেলে সোহানুর রহমান সোহান কে আটক করেছে র্যাব- ১২ কুষ্টিয়া।
ওসি মজিবুর রহমান বলেন, ‘মরদেহ চটের বস্তায় পুরোপুরি মোড়ানো ছিল। ভেতরে আরেক ধাপে সাদা পলিথিন দিয়ে মোড়ানো। মাথাসহ সারা শরীর রক্তাক্ত, আঘাতের চিহ্ন ছিলো। নিহতের আত্মীয়স্বজন জানান, ভেড়ামারার দর্পণ হার্ডওয়্যারের সঙ্গে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক নিয়ে লোকমানের সাথে ঝামেলার কথা শোনা গেছে। এই কারণেই সে খুন হতে পারে।
নিহত লোকমান বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬নং খাওউলিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বরিশাল গ্রামের সাইদুল রহমানের ছেলে। কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাঁস মোড় এলাকায় তিনি বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ বসবাস করতেন।
আরও পড়ুনঃ শান্ত নড়াইলে অশান্ত জনপদঃ সাত মাসে নিহত ১০, সাম্প্রদায়িক হামলা ২
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভেড়ামারা সার্কেল মো. ইয়াছির আরাফাত জানান, ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশ ও টাকা-পয়সাজনিত কোনো কারণে তাকে হত্যা করা হতে পারে। তবে এ হত্যাকান্ডে সঙ্গে জড়িত কোন ব্যাক্তিই রেহায় পাবে না।
জিনাত আরা টুম্পা বলেন, আমার স্বামী রক্সি পেইন্টের এরিয়া ম্যানেজার লোকমান হোসেন কে দর্পন ও তার ছেলে পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি বাকী হত্যাকারীদেও কে অবিলম্বে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে জোরদাবী ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করছি।
প্রিন্ট