ঢাকা , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

খাল-বিলে পানি শুন্য,পাটনিয়ে কৃষকের মাথায় হাত

কুষ্টিয়ায় অতি খরায় পাট পঁচানোর পানি নিয়ে হাহাকার

বর্ষাকালে আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ মাস। কিন্তু, অতি খরায় পাট পঁচানোর পানি নিয়ে হাহাকার চারদিকে। বিপাকে পাট চাষিরা।

কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায় খাল-বিলে পানি শুন্য। শুধু খরা আর খরা। অনাবৃষ্টিতে পাট ক্ষেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছে না। পাট নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ভেড়ামারার কৃষকরা। কয়েকদিন একটু বৃষ্টি হয়েছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। বেশ কিছুদিনের খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে পাট চাষিরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।

ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই। অধিকাংশ খাল, বিল, ডোবা ও জলাশয়ে পানি শুন্য। ছিটে ফুটা বৃষ্টিতে যেটুকু পানি আছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে পাটচাষিরা বৃষ্টির আশায় পাট কেটে জমিতে ফেলে রেখেছেন। পুকুর-নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কেউ কেউ সেচের মাধ্যমে পাটজাগ দিচ্ছে। যা সবার পক্ষে সম্ভাব হচ্ছে না। অনেক দুরে সেচ পুকুরে গাড়িতে করে পাট নিয়ে গিয়ে জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই কারণে লোকসানের আশংকায় মাথায় হাত কৃষকদের।

চলতি বছর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৪১২০ হেক্টর জমিতে পাট এর টার্গেট ছিলো। বাস্তবে আবাদ হয়েছে ৪২৯০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। পাটচাষ বেশি হলেও, পানির অভাবে সমস্যা দেখা দিয়েছে পাট জাগ নিয়ে।

উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামের কৃষক আম্বু জানান, এ বছর তিনি চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না তিনি। গত বছর পাটের দাম বেশি পাওয়ায় চলতি বছর পাটের আবাদে ঝুঁকে পড়েন কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার কৃষকরা। পাট আবাদ নির্বিঘ্নেহলেও এখন পাট কাটা ও জাগ দেওয়া নিয়ে মহা বিপদে পড়েছেন কৃষকরা।

কেউ কেউ শ্যালো মেশিন দিয়ে পানির ব্যবস্থা করলেও তাতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। নিশ্চিত লাভ জেনেও পানির অভাবে কৃষকের স্বপ্ন অধরা থেকে যাচ্ছে। এমনিতেই পাট চাষে অনেক পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়। পঁচা পানিতে আঁশ এড়ানো শ্রমিকদের মজুরীও বেশি।

উপজেলার জগশ্বর গ্রামের পাটচাষী আব্দুর রাজ্জাক ও পরানখালী গ্রামের শাবান আলী জানান, এবার বৃষ্টিপাত কম, পাট জাগ দিতে পারছিনা। তাছাড়া নদীতে পাট জাগ দিতে গেলে আনা নেওয়ার খরচ উঠবে না। আশপাশে শ্যালো মোটরের ব্যবস্থা না থাকায় সেচের পানিও পাচ্ছিনা।

জুনিয়াদহ মির্জাপুর কৃষক আমিরুর ইসলাম বলেন, উপযুক্ত পানি নাথাকায় পাট জাগ দেওয়া খুব সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।

ভেড়ামারা কৃষি অফিসার শায়খুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এবার জমিতে পাটের আবাদ অনেক ভালো হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তবে যে বৃষ্টি হয়েছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। বেশ কিছুদিনের খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে পাট চাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। বিল অঞ্চলে একটু পানি রয়েছে। কিন্তু উঁচু অঞ্চলে একবারেই পানির সংকট। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে এ সমস্যা দূর হবে বলে তিনি আশা করেন।

আরও পড়ুনঃসালথায় ৮০বছরের বৃদ্ধ নিখোঁজ

কৃষি সম্প্রসারন অফিসার শাহানাজ ফেরদৌসী বলেন, তবে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে কৃষক যাতে পাট পচাতে পারেন সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ পরামর্শ দেয়া হয়েছে।এ রকম পানির সংকটে পরলে আমরা যদি রিবন রেটিং পদ্ধতিটা ফলো করি তাহলে কৃষকরা অল্প জাগায় অনেক বেশি পাট জাগ দিতে পারবেন।

পাটজাগ দেয়ার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ায় মানসম্মত পাট পাওয়া এবং কাংখিত মূল্য নিয়ে শংকায় কৃষক।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বাগাতিপাড়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে দোয়া প্রার্থী মোঃ সেলিম রেজা

error: Content is protected !!

খাল-বিলে পানি শুন্য,পাটনিয়ে কৃষকের মাথায় হাত

কুষ্টিয়ায় অতি খরায় পাট পঁচানোর পানি নিয়ে হাহাকার

আপডেট টাইম : ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ অগাস্ট ২০২২

বর্ষাকালে আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ মাস। কিন্তু, অতি খরায় পাট পঁচানোর পানি নিয়ে হাহাকার চারদিকে। বিপাকে পাট চাষিরা।

কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায় খাল-বিলে পানি শুন্য। শুধু খরা আর খরা। অনাবৃষ্টিতে পাট ক্ষেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছে না। পাট নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ভেড়ামারার কৃষকরা। কয়েকদিন একটু বৃষ্টি হয়েছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। বেশ কিছুদিনের খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে পাট চাষিরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।

ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই। অধিকাংশ খাল, বিল, ডোবা ও জলাশয়ে পানি শুন্য। ছিটে ফুটা বৃষ্টিতে যেটুকু পানি আছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে পাটচাষিরা বৃষ্টির আশায় পাট কেটে জমিতে ফেলে রেখেছেন। পুকুর-নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কেউ কেউ সেচের মাধ্যমে পাটজাগ দিচ্ছে। যা সবার পক্ষে সম্ভাব হচ্ছে না। অনেক দুরে সেচ পুকুরে গাড়িতে করে পাট নিয়ে গিয়ে জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই কারণে লোকসানের আশংকায় মাথায় হাত কৃষকদের।

চলতি বছর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৪১২০ হেক্টর জমিতে পাট এর টার্গেট ছিলো। বাস্তবে আবাদ হয়েছে ৪২৯০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। পাটচাষ বেশি হলেও, পানির অভাবে সমস্যা দেখা দিয়েছে পাট জাগ নিয়ে।

উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামের কৃষক আম্বু জানান, এ বছর তিনি চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না তিনি। গত বছর পাটের দাম বেশি পাওয়ায় চলতি বছর পাটের আবাদে ঝুঁকে পড়েন কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার কৃষকরা। পাট আবাদ নির্বিঘ্নেহলেও এখন পাট কাটা ও জাগ দেওয়া নিয়ে মহা বিপদে পড়েছেন কৃষকরা।

কেউ কেউ শ্যালো মেশিন দিয়ে পানির ব্যবস্থা করলেও তাতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। নিশ্চিত লাভ জেনেও পানির অভাবে কৃষকের স্বপ্ন অধরা থেকে যাচ্ছে। এমনিতেই পাট চাষে অনেক পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়। পঁচা পানিতে আঁশ এড়ানো শ্রমিকদের মজুরীও বেশি।

উপজেলার জগশ্বর গ্রামের পাটচাষী আব্দুর রাজ্জাক ও পরানখালী গ্রামের শাবান আলী জানান, এবার বৃষ্টিপাত কম, পাট জাগ দিতে পারছিনা। তাছাড়া নদীতে পাট জাগ দিতে গেলে আনা নেওয়ার খরচ উঠবে না। আশপাশে শ্যালো মোটরের ব্যবস্থা না থাকায় সেচের পানিও পাচ্ছিনা।

জুনিয়াদহ মির্জাপুর কৃষক আমিরুর ইসলাম বলেন, উপযুক্ত পানি নাথাকায় পাট জাগ দেওয়া খুব সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।

ভেড়ামারা কৃষি অফিসার শায়খুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এবার জমিতে পাটের আবাদ অনেক ভালো হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তবে যে বৃষ্টি হয়েছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। বেশ কিছুদিনের খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে পাট চাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। বিল অঞ্চলে একটু পানি রয়েছে। কিন্তু উঁচু অঞ্চলে একবারেই পানির সংকট। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে এ সমস্যা দূর হবে বলে তিনি আশা করেন।

আরও পড়ুনঃসালথায় ৮০বছরের বৃদ্ধ নিখোঁজ

কৃষি সম্প্রসারন অফিসার শাহানাজ ফেরদৌসী বলেন, তবে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে কৃষক যাতে পাট পচাতে পারেন সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ পরামর্শ দেয়া হয়েছে।এ রকম পানির সংকটে পরলে আমরা যদি রিবন রেটিং পদ্ধতিটা ফলো করি তাহলে কৃষকরা অল্প জাগায় অনেক বেশি পাট জাগ দিতে পারবেন।

পাটজাগ দেয়ার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ায় মানসম্মত পাট পাওয়া এবং কাংখিত মূল্য নিয়ে শংকায় কৃষক।