ফরিদপুরের সালথায় পরকিয়ায় জড়িয়ে আফরুজা বেগম নামে এক সন্তানের জননীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছেন মিলন শেখ (২৫) নামে এক যুবক। এটা হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন। তবে নিহতের পরিবারের দাবি আগের স্বামী তাকে হত্যা করে গাছে বুঝিয়ে রেখেছিল। নিহত মিলন সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের কামদিয়া গ্রামের মো. ময়নদ্দিন শেখের ছেলে। আফরুজা একই গ্রামের প্রতিবেশী মো. মালেক মুন্সীর মেয়ে।
কামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মো. নুরুল ইসলাম বলেন, গত চার বছর আগে আফরুজার সাথে পাশ্ববর্তী তালমা ইউনিয়নের তালেশ্বর গ্রামের শহিদ মাতুব্বরের ছেলে বাবু মাতুব্বরের বিয়ে হয়। আলামিন নামে তিন বছর বয়সী তাদের একটি সন্তান রয়েছে। তবে বিয়ের পর ঘনঘন বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসতো আফরুজা। এরই মধ্যে মিলনের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে তিনি। একপর্যায় গত ৩০ জুলাই আফরুজাকে নিয়ে পালিয়ে যায় মিলন।
তিনি বলেন, পালিয়ে গিয়ে মিলন তার প্রতিবেশী হাবিলের সহযোগিতায় দোহার থানার নারিশা বাজারে একটি বাসা ভাড়া নেয়। হাবিল আগে থেকেই দোহারে থাকেন। সেখানে মিলন-আফরুজা বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করে। মঙ্গলবার রাতে খবর আসে দোহারে মিলনের লাশ পাওয়া গেছে। পরে পরিবারের লোকজন দোহার থানা থেকে মিলনের লাশ নিয়ে এসে বুধবার রাতে দাফন করেন। আমাদের ধারনা মিলনকে হত্যা করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃনিউজ প্রকাশের পর সেই নিখোঁজ কলেজ ছাত্রী উদ্ধার
মিলনের বাবা মো. ময়দ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে মিলন দোহার থাকতো। সেথানে থেকে রাজমিস্ত্রি কাজ করতো। কয়দিন আগে প্রতিবেশী মালেক মুন্সীর বিবাহিত মেয়ে আফরুজা আমার ছেলের বাসায় গিয়ে উঠে। এই খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে আফরুজার আগের স্বামী মাদকাসক্ত বাবু লোকজন নিয়ে দোহার মিলনের বাসায় গিয়ে তাকে শ^সরোধ করে হত্যা করে গাছে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। এ ঘটনায় দোহার থানা পুলিশ আফরুজা ও হাবিলসহ ৩ জনকে আটক করেছিল। তবে পরে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। আমরা দোহার থানায় হত্যা মামলা করতে গেলেও তা নেয়নি পুলিশ। বরং থানা থেকে আমাদের বের করে দেয়া হয়। পরে আমরা লাশ নিয়ে চলে আসি। এখন আদালতে মামলা করবো।
আফরুজার আগের স্বামী অভিযুক্ত বাবু মাতব্বর হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এক সপ্তাহ আগে আমার স্ত্রী আফরুজাকে নিয়ে পালিয়ে যায় মিলন। সাথে আমার সন্তানকেও নিয়ে যায়। তারপর আমি তাদের অনেক খুজতে থাকি। মঙ্গলবার রাত ১১ টাকার দিকে হাবিল আমাকে ফোন করে বলে- তোর স্ত্রী আফরুজা আর মিলনের লাশ পাওয়া গেছে দোহার নারিশা বাজারে, তুই জরুরী ১০ হাজার টাকা পাঠা, ওদের লাশ নিতে হবে। পরে খোজখবর নিয়ে জানতে পারি আফরুজা মারা যায়নি- মিলন মারা গেছে। এর বাহিরে আমি কিছুই জানি না। আমার সাথে এখনও আফরুজার কোন যোগাযোগ হয়নি।
মিলনের লাশ উদ্ধারকারী দোহার থানার এসআই শরিফুল ইসলাম বলেন- ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পারি, কয়দিন আগে সালথা থেকে মিলন ও আফরুজা দোহারে এসে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে থাকতেন। তাদের সাথে একটি সন্তানও ছিল। তারা পরকিয়া করে বিয়ে করে বলে জানতে পারি। বিষয়টি মিলনের পরিবার জানতে পেরে মঙ্গলবার ফোনে তাকে রাগারাগি করে। আফরুজার আগের স্বামীও মিলনকে ফোনে হুমকি দেন। বিষয়টি নিয়ে মিলন ও আফরুজার মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়।
আরও পড়ুনঃ সালথা উপজেলা কৃষক লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদন ও পরিচিতি সভা
একপর্যায় রাগারাগি করে মিলন বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাসার পাশে একটি গাছের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠাই। এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আফরুজা ও নাবিলসহ ৩ জনকে থানায় নিয়ে আসি। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। ময়না তদন্তের রির্পোট আসার পর বুঝা যাবে এটা হত্যা, না আত্মহত্যা।
প্রিন্ট