কুষ্টিয়া ভেড়ামারায় গোলাপনগর আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষ হযরত সোলাইমান শাহ্ চিশতী (র.) ওরশ মোবারক ও গ্রামীণ মেলা শুরু হয়েছে। ১০এপ্রিল থেকে ১২এপ্রিল পর্যন্ত একটানা ৩দিন ব্যাপী চলবে এই মেলা । আজ রবিবার থেকে বাৎসরিক এই ওরশ শরীফে গ্রামীণ মেলায় ভীড় জমেছিলো।করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ওরশ শরীফ বন্ধ রেখেছিলেন স্থানীয় প্রশাসন।
উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নির্জন এলাকা পদ্মা নদীর পশ্চিম তীরে সবুজ গাছপালায় ঘেরা চর গোলাপনগর নামক এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষের পবিত্র সমাধি স্থল। এখানেই ঘুমিয়ে আছেন লাখো ভক্তের হৃদয়ের প্রাণ পুরুষ মহান ব্যক্তিত্ব শাহ্ সুফী হযরত মাওলনানা সোলাইমান শাহ্ চিশ্তী (রঃ)।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনীর ব্রাশফায়ারে তিনি এবং তিনার ৮সহচর শহীদ হয়। তারপর থেকেই উক্ত আশেকানরা এখানে গড়ে তোলে মাজার ও সোলাইমান শাহ্র দরবার শরীফ।
আরও পড়ুনঃ আজ ভেড়ামারা সোলাইমান শাহ্ (র.) ওরশ ও গ্রামীণ মেলা শুরু হচ্ছে
তার ভক্ত আশীকানরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ ভারত-ভূটান ও পাকিস্তান থেকে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে প্রতি বছর ২৭,২৮ ও ২৯শে চৈত্র তিন দিন ব্যাপী ওরশ শরীফে যোগদেয়। সোলাইমান শাহ্র এই ওরশে লাখো নারী-পুরুষের সমাবেশ ঘটে।
মাজার শরীফের খাদেম রবিউল ইসলাম বলেন,ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্যেই ঊনবিংশ শতকে যে সকল মনীষী, আউলিয়া, গাউজ, কুতুব, দরবেশ, ফকির এই উপমহাদেশে তথা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন হযরত সোলাইমান শাহ্ (রঃ) তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন।
মোকারিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ওরশ কমিটির সভাপতি আব্দুস সামাদ বলেন,৬০ এর দশকে সোলেইমান শাহ্ এসে পদ্মার নদীর তীরবর্তী স্থানে অবস্থান নেন। সেখানে একটা খড়ের কুঁড়ে ঘরে থাকতেন। বাবা সোলেমান শাহ্ বরিশাল জেলার লোক ছিলেন বলে তিনি জানান। যৌবন আরম্ভ হলে তিনি গৃহ ত্যাগ করেন এবং ভারতের পশ্চিম বাংলার করিমপুর থানায় এবং খাজুরে বর্ডারে কিছুদিন বসবাস করেন। এখান থেকে রাজশাহীর চরেও কিছুকাল থাকেন। তারপর সেখান থেকে আসেন ভেড়ামারা ঘোষপাড়া গ্রামে সাতবাড়ীয়া মসজিদের উত্তরের মাঠে এক বাবলা গাছের নীচেও কিছু দিন থাকেন। শেষে গোলাপনগরের পদ্মা নদীর তীরে অবস্থান নিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন।
ওরশ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বলেন,৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী পাকশীসাঁড়া ঘাট পার হয়ে গোলাপনগরে প্রবেশ করেন। সে সময় সোলেমান শাহ্ তার ৮জন মুরিদ ভক্তসহ কুঁড়ে ঘরে ছিলেন। পাক সেনাদের ব্রাশ ফায়ারে সোলেমান শাহসহ আমির আলী (গোবরগাড়া), আব্দুল লতিফ (দলডাঙা ভারত), আমিন উদ্দীন (স্থানীয়), আব্দুল ওহাব (কুমিল্লা), আয়ুব আলী (মুর্শিবাদ ভারত), আব্দুর রহমান (স্থানীয়), ওলি উল্লাহ (নারায়নগঞ্জ) এবং নাম না জানা একজন সহ ৮জন শহীদ হন। তিনি এবং সঙ্গীরা শহীদ হওয়ার পর থেকেই এখানে গড়ে উঠেছে পবিত্র মাজার শরীফ।
আধ্যাত্মি এই সাধক পুরুষের সমাধি স্থলে প্রতিদিনি বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষ জিয়ারত করতে ও দর্শনের উদ্দেশ্যে সমবেত হন। মাজারকে ঘিরে এলাকায় অনেকেই এখন জীবিকার আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন। এই মাজারকে ঘিরে দলাদলি, হিংসা বিদ্বেষ, রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীর প্রভাবে পরিচালিত হতো। মাজার শরীফ সুষ্ঠু তদারকি পরিচালনার নেতৃত্ব নিয়ে তৎকালীন সময় গোলাপনগর গ্রামে বহুবার দাঙ্গা হাঙ্গামাসহ বহুবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সংগঠিত হয়। এরই কারণে গত ২০০৮ সাল হতে আজঅবদী এই মাজারটি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হচ্ছে।
বর্তমান মাজার শরীফে সভাপতি ভেড়ামারা উপজেলার নির্বাহী অফিসার দীনেশ সরকার বলেন, দেশে করোনা কালীন চলাসময় গত দুই বছর ওরশ শরীফ বন্ধ ছিলো। এবছর ওরশ মোবারক ৩ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। দরবার শরীফ এলাকায় কোনো রকম বিশৃংখলা সৃষ্টি কেউ করতে চাইলে তা রুখে দিতে ৯টি স্তরে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদেরকে ডিউটিতে রাখা হয়েছে। এখানে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দলে দলে আসা হাজার হাজার নারী পুরুষ ও ভক্ত আশীকানরা মাজার ঘিরে ভীড় করে আছেন।
প্রিন্ট