পূণ্য সেবার মধ্য দিয়ে শেষ হলো কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লালন আঁখড়াবাড়ীতে চলা সাধুদের সঙ্গ। সেবা শেষে সাধু ও লালন অনুসারীরা চলে যাচ্ছেন তাদের নিজস্ব আশ্রমে।
বৃহস্পতিবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশাল এই উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
লালন একাডেমির মূল মঞ্চে রাতের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মোহাঃ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়া ১ আসনের সংসদ সদস্য আঃ কাঃ মঃ সরওয়ার জাহান বাদশা।
প্রধান আলোচক ছিলেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম। আলোচনা শেষে মূল মঞ্চে একাডেমির শিল্পীরা লালন ফকিরের আধ্যাত্মিক গান পরিবেশন করেন।
ইতোমধ্যে খেলাফতধারী সাধুরা ত্যাগ করেছেন আঁখড়াবাড়ী। মানববতার বাণী নিয়ে নিজ নিজ আশ্রমে প্রচার করবেন তারা। বৃহৎ এ সাধুদের মিলন মেলা বসবে আবার লালন তিরোধান দিবসে।
শুক্রবার (১৮ মার্চ) দুপুরে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ১০ হাজার সাধুদের দুপুরের সেবা দেওয়া হয়।
লালন মাজার প্রাঙ্গণ, লালন আঁখড়াবাড়ীতে অবস্থানরত সাধুদের একসঙ্গে দেওয়া হয় দুপুরের খাবার বা সেবা। এর মধ্যে ছিল সিদ্ধ চালের সাদা ভাত, রুই মাছ, কলাইয়ের ডাল, আলুর সবজি ও দই।
দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে বাউল স¤্রাট ফকির লালন শাহ তার জীবনদশায় তার অনুসারীদের নিয়ে সাধু সঙ্গ করতেন। শোনাতেন মানবতার বাণী। সেই অনুসারে সাধু-ভক্তদের নিয়ে লালন একাডেমি লালন আঁখড়াবাড়ীতে এ আয়োজন করে আসছে।
এবারে পবিত্র শবে বরাতের কারণে একদিন আগে শুরু হয় লালন মেলা। সাধু সঙ্গের একদিন আগেই শেষ হয় আনুষ্ঠানিকভাবে এ লালন মেলার। তবে সাধুরা তাদের নিয়মনীতি অনুযায়ী দোল পূর্ণিমার রাতে মূল অধিবাস, সকালে বাল্য সেবা ও সাধু সঙ্গ শেষ হয় শুক্রবার দুপুরে পূণ্য সেবার মধ্য দিয়ে।
লালন অনুসারী দৌলতপুর থেকে আসা ফকির শরাফত আলী বলেন, সাঁইজির বাণী নিয়ে ফিরে যাচ্ছি আপন ধামে। এখানে আবার আসবো তিরোধান দিবসে। আমরা সাধু ফকিররা আশায় থাকি কবে আসবে আবার এই দিন। যেখানে সাধু ভক্তরা একসঙ্গে সাঁইজির বাণী শুনবো।
ফকির নহির শাহ বলেন, এই বিদায়ের মুহূর্তটা আমাদের কাছে সব চাইতে কষ্টের সময়। এই আশ্রম ছেড়ে আমাদের যেতে ইচ্ছা করে না।
দাউদ আলী শাহ বলেন, লালনের বাণী যদি আমরা সকলে অনুসরণ করি তাহলে সমাজ থেকে মারামারি-হানাহানি, অন্যায় অত্যাচার দূর হয়ে শান্তি বিরাজ করবে। যা জগতের সকল প্রাণির জন্যই মঙ্গলকর। মানুষের সবচেয়ে বড় হলো মানব সেবা। মানুষের সেবার কথায় সাঁইজি তার গানে বলে গেছেন।
প্রিন্ট