ঢাকা , বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo তানোর বিএনপির নেতৃত্বে হযরতকে দেখতে চাই তৃণমুল Logo মোহনপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা Logo ফরিদপুরে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত Logo রূপগঞ্জে দুই সাংবাদিকের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ Logo আজ খোকসা হানাদার মুক্ত দিবসঃ পালিত হবে যথাযজ্ঞ মর্যাদা Logo দৌলতপুরে জাল নোট প্রচলন প্রতিরোধে ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত Logo মধুখালীতে নবাগত ইউএনও’র যোগদান Logo বহুলীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বন্যা পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে করনীয় শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo শালিখায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়ন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত Logo প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬ দিনব্যাপী বিষয়ভিত্তিক বাংলা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কালীগঞ্জে চরম ব্যাস্ততায় সময় কাটছে মৃত শিল্পের কারিগরদের

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সিঙ্গি রায়গ্রাম মৃত শিল্প পল্লীর কারিগর পল্লীতে দেখা যায় কারীগরদের কেউ ভ্যানযোগে মাটি সংগ্রহ করছেন। কেউ কাঁদা প্রস্তুত করে চাকায় ফেলে হাতের কারুকাজে তৈরী করছেন নানা ধরনের জিনিসপত্র।

পরিবারের মেয়েরা তাদের তৈরীকৃত কাঁচা কলস, ঠিলে, হাড়ি, চাড়ি, পায়খানার স্লাভ ও গ্রামের ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের পিঠা তৈরীর ছাঁচ রোদে দিচ্ছেন শুকাতে। আবার কাজের ফাঁকে কিছুক্ষন পরপর জলন্ত পাজাতে যে যখন সময় পাচ্ছেন জ্বালানীর যোগান দিচ্ছেন।

শিবনগর গ্রামের মৃত কারিগর বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগর, বালিয়াডাঙ্গা, অনুপমপুর, রায়গ্রাম, সিঙ্গিরবাজার, গোমরাইল, কাবিলপুরসহ আরও কিছু গ্রামে তাদের এ পেশার কারিগর রয়েছেন। তার নিজ গ্রামেই ৩০/৩২ টি পরিবার মৃত শিল্পের উপর জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা অল্প বয়সেই পারিবারিক ভাবে কাজ শিখে নেয়। মাটি দিয়ে জিনিসপত্র তৈরী করতে প্রথমে তারা বাড়ির নিকট থেকেই মাটি সংগ্রহ করে থাকেন। ফলে তাদের বাড়ির আশপাশে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও এ সকল জিনিস তৈরীতে এটেল মাটি হলে ভাল হয়। পতিত জমি সব আবাদযোগ্য হয়ে যাওয়ার কারনে এ কাজে ব্যবহৃত মাটি এখন কৃষকের জমি থেকে কিনে আনতে হয়। তাদের প্রতিভ্যান মাটিতে খরচ হয় ২০০ থেকে ২৩০ টাকা।

তিনি আরো জানান, রোরো ক্ষেতের ঠান্ডা পানিতে বেশির ভাগ খেঁজুর গাছ মরে ইটভাটায় পুড়ে ছাই হয়েছে। আবাদি হয়ে যাওয়ায় আগের মত মাঠের মাঝখানে খেঁজুর গাছের ঘন বাগান আর নেই। তারপরও বসতভিটে অথবা রাস্তার পাশে, উচু অনাবাদি জমিতে,পুকুর পাড়ে যা খেঁজুর গাছ আছে। শীতকালে এ গাছগুলোর রস ও গুড় সংগ্রহের জন্য ঠিলে তৈরীতে তারা মহাব্যস্ততা থাকেন।

এছাড়াও গ্রামে অনেক সময় মেলা বসে সেখানে ছাড়াও ধর্মীয় ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য নানা ধরনের খেলনা রঙ ও নকসা করে বিক্রি করেন তারা। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের তৈরীকৃত জিনিসপত্র বাড়িতে বসেই বিক্রি করে থাকেন। তবে হাটের দিন বিভিন্ন বাজারে গিয়ে রাস্তার পাশে বসে ও বিক্রি করেন। কাবিলপুর গ্রামের কারিগর অসিত কুমার পাল জানান, তাদের তৈরী কাঁচা জিনিস গুলো প্রথমে রোদে ভাল করে শুকিয়ে শক্ত করে নিতে হয়।

এরপর পাজায় আগুন তৈরী করে এগুলো পোড়াতে হয়। ভাল করে শুকাতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লেগে যায়। হাত থেকে পড়ে গেলে পুরাটা লোকসান হবে যে কারনে রোদে শুকানো, পাঁজাতে পোড়ানো ও বাজার জাত করনের সময় তাদের কে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বণ করতে হয় না। বর্ষার সময় তাদের কাজ বাধাগ্রস্ত হয় এবং বিক্রিও কমে যায়। অনেক সময় লাগাতর বর্ষায় তাদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। একই গ্রামের ললিতা রানী পাল জানান, সাধারনত কৃষকদের সবচেযে বড় আবাদের ফসল আমন ধান শীত মৌসুমেই কৃষকের ঘরে ওঠে। সুমিষ্ট খেজুর রসের মৌসুমও তখন। কৃষানীরা খেঁজুর রস ও গুড় দিয়ে তৈরী করে নানা রকমের পিঠা ফলে এ সময় পিঠা তৈরীর ছাঁচ বিক্রির হিড়িক পড়ে। একারনে মৃত শিল্পের কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুন।

তিনি আরো জানান, প্রতিটি রসের ঠিলে তৈরী করতে তাদের প্রায় ১৫ টাকা খরচ পড়ে যায় কিন্তু বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। একজন কারিগর সারাদিন কাজ করলে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ টি পর্যন্ত ঠিলে তৈরী করতে পারেন। তবে রোদে শুকাতে ও পোড়াতে আরও সময় কেটে যায়। এতে প্রতিদিন প্রত্যেকের অন্যান্য খরচ বাদে ৫’শ থেকে সাড়ে ৬’শ টাকা আয় হয়। তৈরীকৃত জিনিসপত্র পোড়ানোর জন্য তারা করাত কলের গুড়া ও কিছু জ্বালানী কাঠ মিশিয়ে ব্যবহার করেন। তবে বর্ষার মৌসুমে শুধু করাত কলের গুড়াই ব্যবহার করে থাকেন। এতে খরচ ও কম পড়ে।

দিলীপ নামের অপর এক কারিগর জানান, এলাকাবাসী স্যানিটারী ল্যাট্টিনের জন্য তাদের তৈরীকৃত ¯øাাভ ব্যবহার করছেন। তাছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিও প্রতিষ্ঠান জন সাধারনের মাঝে বিতরনের জন্য তাদের তৈরী পায়খানার স্লাভ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। চায়না রানী পাল জানান, তিনি ২৪ বছর ধরে এ কাজের সাথে সরাসরি জড়িত। পূর্বে প্রতিটি কৃষক পরিবারের রান্না ঘরে মাটির তৈরী বাসনপত্র ব্যবহার করতেন। বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নের ফলে এবং ষ্টিল শিল্পে তৈরীকৃত সৌখিন জিনিসপত্র ব্যবহার করছেন।

এদিকে মাঠে মাঠে খেঁজুর গাছও কমে গেছে। তাই অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজে জড়িয়ে গেছেন। তবে এখনও যে পরিমান খেঁজুর গাছ আছে কারিগর কমে যাওয়ায় শীত আসলেই তাদের নাওয়া খাওয়া থাকে না। তবে আগের মত না। ছোট বেলা থেকে অধিকাংশ পরিবারের সন্তানেরা এ কাজে তারা পারদর্শী হয়ে উঠেছেন তাই পূর্ব পুরুষের পেশা তারা আকড়িয়ে ধরে আছেন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

তানোর বিএনপির নেতৃত্বে হযরতকে দেখতে চাই তৃণমুল

error: Content is protected !!

কালীগঞ্জে চরম ব্যাস্ততায় সময় কাটছে মৃত শিল্পের কারিগরদের

আপডেট টাইম : ০৮:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ জানুয়ারী ২০২১
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ :

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সিঙ্গি রায়গ্রাম মৃত শিল্প পল্লীর কারিগর পল্লীতে দেখা যায় কারীগরদের কেউ ভ্যানযোগে মাটি সংগ্রহ করছেন। কেউ কাঁদা প্রস্তুত করে চাকায় ফেলে হাতের কারুকাজে তৈরী করছেন নানা ধরনের জিনিসপত্র।

পরিবারের মেয়েরা তাদের তৈরীকৃত কাঁচা কলস, ঠিলে, হাড়ি, চাড়ি, পায়খানার স্লাভ ও গ্রামের ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের পিঠা তৈরীর ছাঁচ রোদে দিচ্ছেন শুকাতে। আবার কাজের ফাঁকে কিছুক্ষন পরপর জলন্ত পাজাতে যে যখন সময় পাচ্ছেন জ্বালানীর যোগান দিচ্ছেন।

শিবনগর গ্রামের মৃত কারিগর বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগর, বালিয়াডাঙ্গা, অনুপমপুর, রায়গ্রাম, সিঙ্গিরবাজার, গোমরাইল, কাবিলপুরসহ আরও কিছু গ্রামে তাদের এ পেশার কারিগর রয়েছেন। তার নিজ গ্রামেই ৩০/৩২ টি পরিবার মৃত শিল্পের উপর জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা অল্প বয়সেই পারিবারিক ভাবে কাজ শিখে নেয়। মাটি দিয়ে জিনিসপত্র তৈরী করতে প্রথমে তারা বাড়ির নিকট থেকেই মাটি সংগ্রহ করে থাকেন। ফলে তাদের বাড়ির আশপাশে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও এ সকল জিনিস তৈরীতে এটেল মাটি হলে ভাল হয়। পতিত জমি সব আবাদযোগ্য হয়ে যাওয়ার কারনে এ কাজে ব্যবহৃত মাটি এখন কৃষকের জমি থেকে কিনে আনতে হয়। তাদের প্রতিভ্যান মাটিতে খরচ হয় ২০০ থেকে ২৩০ টাকা।

তিনি আরো জানান, রোরো ক্ষেতের ঠান্ডা পানিতে বেশির ভাগ খেঁজুর গাছ মরে ইটভাটায় পুড়ে ছাই হয়েছে। আবাদি হয়ে যাওয়ায় আগের মত মাঠের মাঝখানে খেঁজুর গাছের ঘন বাগান আর নেই। তারপরও বসতভিটে অথবা রাস্তার পাশে, উচু অনাবাদি জমিতে,পুকুর পাড়ে যা খেঁজুর গাছ আছে। শীতকালে এ গাছগুলোর রস ও গুড় সংগ্রহের জন্য ঠিলে তৈরীতে তারা মহাব্যস্ততা থাকেন।

এছাড়াও গ্রামে অনেক সময় মেলা বসে সেখানে ছাড়াও ধর্মীয় ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য নানা ধরনের খেলনা রঙ ও নকসা করে বিক্রি করেন তারা। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের তৈরীকৃত জিনিসপত্র বাড়িতে বসেই বিক্রি করে থাকেন। তবে হাটের দিন বিভিন্ন বাজারে গিয়ে রাস্তার পাশে বসে ও বিক্রি করেন। কাবিলপুর গ্রামের কারিগর অসিত কুমার পাল জানান, তাদের তৈরী কাঁচা জিনিস গুলো প্রথমে রোদে ভাল করে শুকিয়ে শক্ত করে নিতে হয়।

এরপর পাজায় আগুন তৈরী করে এগুলো পোড়াতে হয়। ভাল করে শুকাতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লেগে যায়। হাত থেকে পড়ে গেলে পুরাটা লোকসান হবে যে কারনে রোদে শুকানো, পাঁজাতে পোড়ানো ও বাজার জাত করনের সময় তাদের কে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বণ করতে হয় না। বর্ষার সময় তাদের কাজ বাধাগ্রস্ত হয় এবং বিক্রিও কমে যায়। অনেক সময় লাগাতর বর্ষায় তাদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। একই গ্রামের ললিতা রানী পাল জানান, সাধারনত কৃষকদের সবচেযে বড় আবাদের ফসল আমন ধান শীত মৌসুমেই কৃষকের ঘরে ওঠে। সুমিষ্ট খেজুর রসের মৌসুমও তখন। কৃষানীরা খেঁজুর রস ও গুড় দিয়ে তৈরী করে নানা রকমের পিঠা ফলে এ সময় পিঠা তৈরীর ছাঁচ বিক্রির হিড়িক পড়ে। একারনে মৃত শিল্পের কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুন।

তিনি আরো জানান, প্রতিটি রসের ঠিলে তৈরী করতে তাদের প্রায় ১৫ টাকা খরচ পড়ে যায় কিন্তু বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। একজন কারিগর সারাদিন কাজ করলে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ টি পর্যন্ত ঠিলে তৈরী করতে পারেন। তবে রোদে শুকাতে ও পোড়াতে আরও সময় কেটে যায়। এতে প্রতিদিন প্রত্যেকের অন্যান্য খরচ বাদে ৫’শ থেকে সাড়ে ৬’শ টাকা আয় হয়। তৈরীকৃত জিনিসপত্র পোড়ানোর জন্য তারা করাত কলের গুড়া ও কিছু জ্বালানী কাঠ মিশিয়ে ব্যবহার করেন। তবে বর্ষার মৌসুমে শুধু করাত কলের গুড়াই ব্যবহার করে থাকেন। এতে খরচ ও কম পড়ে।

দিলীপ নামের অপর এক কারিগর জানান, এলাকাবাসী স্যানিটারী ল্যাট্টিনের জন্য তাদের তৈরীকৃত ¯øাাভ ব্যবহার করছেন। তাছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিও প্রতিষ্ঠান জন সাধারনের মাঝে বিতরনের জন্য তাদের তৈরী পায়খানার স্লাভ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। চায়না রানী পাল জানান, তিনি ২৪ বছর ধরে এ কাজের সাথে সরাসরি জড়িত। পূর্বে প্রতিটি কৃষক পরিবারের রান্না ঘরে মাটির তৈরী বাসনপত্র ব্যবহার করতেন। বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নের ফলে এবং ষ্টিল শিল্পে তৈরীকৃত সৌখিন জিনিসপত্র ব্যবহার করছেন।

এদিকে মাঠে মাঠে খেঁজুর গাছও কমে গেছে। তাই অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজে জড়িয়ে গেছেন। তবে এখনও যে পরিমান খেঁজুর গাছ আছে কারিগর কমে যাওয়ায় শীত আসলেই তাদের নাওয়া খাওয়া থাকে না। তবে আগের মত না। ছোট বেলা থেকে অধিকাংশ পরিবারের সন্তানেরা এ কাজে তারা পারদর্শী হয়ে উঠেছেন তাই পূর্ব পুরুষের পেশা তারা আকড়িয়ে ধরে আছেন।


প্রিন্ট