ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় এ বছর মুড়িকাঠা পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অর্থনৈতিক ভাবে লোকসানে পরেছে কৃষক।এবার মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজ আবাদের সময় অতিবৃষ্টিতে ফলন ভালো না হওয়া ও বাজার দর কম থাকায় উপজেলার চাষিরা পেঁয়াজ বিক্রি করে লোকসানের মুখে পরেছে। এ উপজেলায় পৌষ,মাগ ও ফালগুন এই তিন মাস থাকে পেঁয়াজের মৌসুম।উপজেলার সদর বাজারে (শুক্রবার ও সোমবার)হাট বসে।
গত দুই সপ্তাহ এ হাট ঘুরে জানা যায় মৌসুমের শুরুতে প্রতিমন মুরিকাঠা পেঁয়াজ ৭০০/৮ শত টাকা দরে বিক্রী করে বিঘাপ্রতি ৪০/৪৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে কৃষকের।এছাড়া মৌসুমের শেষ দিকে এসে গত ২৫ ফেব্রæয়ারী শুক্রবার এক হাটে ১১শত থেকে ১২ শত টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রী করে কিছু সংখ্যক কৃষক কোন রকম পুজি উঠিয়েছে। গত বছরও ছিল একই চিত্র বাজার দর ভালো না থাকায় লাভের মুখ দেখেনি তারা।সদর বাজারের এ হাটে আসা পেয়াজ ঢাকা,গাজীপুর,বরিসাল,ভৈরব ও ময়মনসিংহ সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপপ্তানি হয়ে থাকে বলে জানায় স্থানীয় ব্যাপারীরা।
সদর ইউনিয়নের বালিয়া ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ইব্রাহীম খাঁন(৫২) জানান তিনি এ বছর ৫২ শতাংশে বিঘার ৩বিঘা জমিতে পেয়াজ রোপন করেছিলেন। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হয়ে জমিতে পানি বেধেঁ যাওয়ায় পুনরায় মুড়িকাঠা পেয়াজ রোপন করে দ্বীগুন খরচ হয়েছে তার। কয়েক ধাপে বাজার মূল্য ওঠা নামা করায় পেয়াজ বিক্রী করে এ বছর প্রায় লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে তার।
চর হরিরামপুর ইউনিয়নের ইনতাজ মোল্লা ডাঙ্গী গ্রামের শেখ জলিল ৩ বিঘা,গাজিরটেক ইউনিয়নের খালাশি ডাঙ্গীর রমজান খালাশি দুই বিঘা ও উত্তর আলম নগর গ্রামেরে লুৎফর রহমান শিকদার এক বিঘা জমিতে মুড়িকাঠা পেয়াজ লাগিয়ে ছিলেন। মৌসুমের শুরুর দিকে ৭০০/৮০০ টাকা দরে প্রতিমন পেয়াজ বিক্রী করে অনেক টাকা লোকসান হয়েছে তাদের।বর্তমানে চলতি সপ্তাহে ১১/১২ শত টাকা দর পেয়ে বাকী অর্ধেক জমির পেয়াজ বিক্রী করে কোন রকম পুজি তুলতে পেরেছেন তারা।
তারা আরও জানান বর্তমানে জ্বালানি তেলের মূল্য ও লেবার খরচ বেশি হওয়ায় লাগানো থেকে শুরু করে সেচ,পেয়াজের হাই ভাঙ্গা ও হাটে উঠানো পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকা। এ বছর আশানুরুপ ফলন হয়নি তাদের।ফলন ভালো হলে বিঘাপ্রতি ৯০ থেকে ১শত মন পেয়াজ পাওয়া যেত তাতে কিছুটা লোকসান পুষিয়ে যেত তাদের।আাগামী দু’এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার দর না বাড়লে এ বছর আর লাভের মুখ দেখবেনা বলে মন্তব্য করেন পেঁয়াজ চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়,এ বছর মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির ফলে পেয়াজ চাষীরা ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়েছে। এ বছর বৃষ্টিতে কৃষকের মুড়িকাঠা পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় পুনরায় পেঁয়াজ আবাদ করায় অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে কৃষকের।এ ছাড়া মান ভালো না হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন মোটামুটি হয়েছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়,এখানকার পদ্মার উর্বর পলল ভুমিতে মুরিকাঠা পেয়াজের আবাদ বেশি উপযোগি। এ বছর অত্র উপজেলায় প্রায় ৬ শত ৫০হেক্টর (৫২ শতাংশের ৩ হাজার দুই শত পঞ্চাশ বিঘা)জমিতে মুড়িকাঠা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নে ১৫৭ হেক্টর,গাজিরটেকে ২৭১,চর হরিরামপুরে ১৪৫ ও চর ঝাউকান্দায় ৭৭ হেক্টর জমিতে মুড়িকাঠা পেয়াজের আবাদ করেছেন কৃষকরা।এ ছাড়া উপজেলার চর ঝাউকান্দা বাদে অন্য তিনটি ইউনিয়নে এ বছর ১৬০ হেক্টর জমিতে দানা পেয়াজের আবাদ হয়েছে বলে জানায় কৃষি অফিস।
মুড়িকাঠা পেঁয়াজ আবাদ করে এ বছর কৃষকরা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির স্বীকার হওয়ার বিষয়ে রবিবার ২৭ ফেব্রæয়ারী উপজেলা সহকারি কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানায় ‘এ অঞ্চলে মুড়িকাঠা ও দানা পেঁয়াজের আবাদ একই সঙ্গে হলেও হালি পেঁয়াজের আবাদ দেরিতে করে কৃষক। এ বছর আমাদের দেশে মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় পেঁয়াজ চাষীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
এ অঞ্চলে হালি/গুটি পেঁয়াজ সংরক্ষনের প্রক্রিয়া কৃষকের জানা থাকলেও মুড়িকাঠা পেঁয়াজ বেশী পচনশীল হওয়ায় এখন পর্যন্ত এটা সংরক্ষনে কৃষকদের কোন সহযোগীতা আমরা কৃষি অফিস করতে পারছিনা ।সেই সাথে উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা কম থাকায় পেঁয়াজের বাজার মূল্য কমে গিয়ে কৃষক অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে বলে জানায় এই সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ’।
প্রিন্ট