ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৮টিতেই নৌকার প্রার্থীদের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। ১টিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা এবং ৫ টিতে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন। ২৬ অক্টোবর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। বরং তারা ইউনিয়নগুলোতে শক্ত অবস্থানে থেকে নির্বাচনে প্রতিদ›দ্বীতা করছেন। বিএনপির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নীরবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী ১১ নভেম্বর উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলার চরযোশরদী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান সাহেব ফকির। তার বিরুদ্ধে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ দপ্তর সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান পথিক। তিনি বলেন, আমি ৫ বছর চেয়ারম্যান ছিলাম। জনগনের পাশে থেকে তাদের সেবা করেছি। তাদের অনুরোধে আমি প্রার্থী হয়েছি। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার ওয়াহিদুল বারী আলম বিদ্রোহী সতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন।
কাইচাইল ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা হোসেন খান এবারও নৌকার প্রার্থী হয়েছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান কবির হোসেন ঠান্ডু এ ইউনিয়নে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এছাড়াও এই ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ›দ্বীতা করছেন জিয়া সিকদার।
ডাঙ্গী ইউনিয়নে এবারও নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারমান কাজী আবুল কালাম। তার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরদারের ছোট ভাই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সরদার সাইফুজ্জামান বুলবুল।
কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন জেলা পরিষদ সদস্য খন্দকার জাকির হোসেন নিলু। তার প্রধান প্রতিদ›দ্বী প্রার্থী হচ্ছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তরুন সমাজ সেবক মোহাম্মদ ইমাম উল ইসলাম ইমাম। তিনি এলাকায় বেশ দাপটের সঙ্গে প্রচার চালাচ্ছেন। এছাড়াও এ ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত একক প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুজ্জামান অনু।
পুরাপাড়া ইউনিয়নে নৌকার মাঝি হয়েছেন ব্রাক্ষনডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন মিয়া। তার শক্ত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন একমাত্র সতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমাম বাবু ফকির। বাবু ফকির ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত সফল চেয়ারম্যান মানব সেবক নামে খ্যাত মরহুম আব্দুল মান্নান ফকিরের ভাতিজা। ইউনিয়নবাসির অনেকেই বক্তব্য মান্নান ফকিরের ঋণ শোধ দিতেই আমরা তার ভাতিজাকে ভোট দিবো।
তালমা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক রনজিত কুমার মন্ডল। তার মূল প্রতিদ›দ্বী জেলা পরিষদ সদস্য কামাল হোসেন মিয়া। কামাল হোসেনের পিতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবু সহিদ মিয়া এবং তার মা বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ারা বেগম।
রামনগর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মান্দার ফকির। এখানে তার প্রতিদনদ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আঃ কুদ্দুস ফকির ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান কাইমুদ্দিন মন্ডল।
লস্করদিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসকেন্দার মাতুব্বর। তার মূল প্রতিদ›দ্বী উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ সভাপতি, পরপর দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বাবুল তালুকদার।
ফুলসুতী ইউনিয়নে নৌকার মাঝি হয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগের ক্রীড়া সম্পাদক নৌকার টিকিট নিয়ে নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন। তার প্রতিদদ্বী প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান। এছাড়াও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন খন্দকার তৌহিদুর রহমান টিটো।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মিয়া বলেন, দলের নির্দেশ অমান্য করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠণিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ দিকে বিদ্রোহীরা নৌকা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ তুলছেন। তাদের প্রচার প্রচারণায় বাধা দেওয়া, নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা ভাংচুর করা ও কর্মী সমর্থকদের ভয় প্রদর্শন সহ বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিকট।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার সোমবার বিকালে উপজেলা মাল্টিপারপাস হল রুমে প্রার্থীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা করেন। এসময় তিনি বলেন, কোন সন্ত্রাস মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকের সাথে জড়িত এমন কাউকে ভোট দেবেন না। সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের হুসিয়ার করে তিনি বলেন, কেউ আচরণ বিধি লংঘন করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
প্রিন্ট