ব্রিঃ জেঃ (অবঃ) হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
মিয়ানমারে চলমান সহিংসতা বন্ধে এবং মানবিক সহায়তা ও জাতীয় সমঝোতার পথ প্রশস্ত করতে পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে (ইএএস) আসিয়ানের সদস্য দেশ সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ আসিয়ানের প্রধান অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, জাপান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সহ আটটি দেশ ইএএস’এ অংশগ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য যে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট সংঘাত বন্ধে আসিয়ান কর্তৃক প্রণীত পাঁচ দফা শান্তি পরিকল্পনার কোন অগ্রগতি হয়নি বরং সংকট আরও তীব্র আকার ধারন করেছে।
মিয়ানমারের সীমান্ত সংঘর্ষের কারনে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সীমান্ত বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি করছে। কারেন রাজ্যের মায়াওয়াদ্দি সীমান্ত দিয়ে থাইল্যান্ডের সাথে মিয়ানমারের বেশিরভাগ বাণিজ্য চলে এবং সেখানে বেশ কিছু বড় এবং লাভজনক ক্যাসিনো রয়েছে। সম্প্রতি কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (কেএনএলএ) এবং পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) মায়াওয়াদ্দি টাউনশিপ থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরের লে কে কাও শহরের কাছের জান্তার ঘাঁটি দখল করেছে। থাই সরকার মিয়ানমার সরকার ও বর্ডার গার্ড ফোর্সেসের (বিজিএফ) সহায়তায় মায়াওয়াদ্দি শহর নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। মিয়ানমারে শান্তি ফিরিয়ে আনতে আসিয়ানের প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে থাইল্যান্ড মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূমিকা জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে। থাইল্যান্ডের মনে করে, আসিয়ানের উচিত মিয়ানমারের সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ বার্তা দেওয়া যে,এই সংকটের কোনো সামরিক সমাধান নেই। জান্তা সরকার চলমান পরিস্থিতিতেও ২০২৫ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি হিসেবে দেশব্যাপী আদমশুমারি চালাচ্ছে এবং নির্বাচনের জন্য পাঁচ ধাপের ‘রোডম্যাপ’ প্রণয়ন করেছে। থাইল্যান্ড মিয়ানমারে নির্বাচনের আগে জান্তা ও বিরোধী গুষ্ঠিগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে এবং ডিসেম্বর মাসে আসিয়ানের ১০ সদস্যের একটি “অনানুষ্ঠানিক পরামর্শ” আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে। থাইল্যান্ড এই নির্বাচন সমর্থন করবে। মিয়ানমারের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে দলগুলোর মধ্যে আরও রাজনৈতিক সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ এবং মিয়ানমারের অন্য প্রভাবশালী প্রতিবেশী চীন ও ভারত শান্তি প্রচেষ্টায় ভূমিকা রাখতে পারে বলে থাইল্যান্ড মনে করে।
আরও পড়ুনঃ নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রাখাইন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের উদ্যোগ
মিয়ানমারের সাথে ভারতের ১৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান হয়। প্রায় দেড় বছর ধরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে অস্থিতিশীল অবস্থা চলছে। সম্প্রতি সেখানে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়েছে এবং এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। সীমান্তের এই পরিস্থিতি মণিপুরে অশান্তির অন্যতম কারণ বলে মনে করে ভারত সরকার। সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য ভারত-মিয়ানমারের সীমান্তে ৩১ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত বরাবর কাঁটাতার বসানো ও সড়ক নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ভারত। ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে বাণিজ্যের পাশাপাশি মিয়ানমারে ভারতের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পেও বিনিয়োগ আছে। রাখাইন ও চিন স্টেট এবং সাগাইং অঞ্চলে ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলি এখন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আরাকান আর্মি (এ এ) চীনের অর্থায়নে চকপিউ বন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ভারতের অর্থায়নে কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের মতো বিদ্যমান বিদেশি প্রকল্পগুলিকে তাদেরকে সহযোগিতা করতে ও তাদের সাথে মিলে কাজ করার বিষয়ে তাদের মনোভাব প্রকাশ করেছে।
পালেতোয়া দখল করার পর এ এ চিন ন্যাশনাল আর্মির হাতে পালেতোয়া টাউনশিপ ছেড়ে না দেয়ায় চিন ন্যাশনাল আর্মি এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। মিজোরাম-ভিত্তিক নাগরিক সমাজ সংস্থা সেন্ট্রাল ইয়াং লাই অ্যাসোসিয়েশন ২৫ মে থেকে ভারত হতে লংটলাই-পালতোয়া পথে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সাথে বাণিজ্য ও প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, পরবর্তীতে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার পর পুনরায় তা চালু করা হয়। রাখাইন রাজ্যের মানুষ ভারত থেকে ওষুধ এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহের জন্য এই রুটের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। রাখাইন রাজ্য মিয়ানমারের বাকি অংশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এই অবরোধে এসব এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পালেতোয়া এ এ’র নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভারতের সঙ্গে তাদের দর কষাকষির ক্ষমতা বেড়ে গেছে।
আরও পড়ুনঃ রোহিঙ্গা সংকটের সাত বছর – বাংলাদেশ ও মিয়ানমার পরিস্থিতি
২০১৮ সালে ভারত “লুক ইস্ট” নীতির অংশ হিসাবে মিয়ানমারের সাথে সীমান্ত এলাকায় একটি অবাধ চলাচলের ব্যবস্থা ঘোষণা করে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সরকার “অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে” এবং মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলির “জনসংখ্যাগত কাঠামো বজায় রাখার জন্য” চুক্তিটি বাতিল করে। ভারত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে, সরকারী ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা মিয়ানমার সফর করছে এবং প্রকাশ্যে জান্তার সমালোচনা করেনি। সামরিক সহযোগিতা এবং সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও উন্নয়নের জন্য যৌথ প্রচেষ্টা জোরদার করতে কিছুদিন আগে একটি ভারতীয় সেনা প্রতিনিধিদল মিয়ানমার সফর করে।
সম্প্রতি ভারত মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার, চিন, রাখাইন ও ভারত সীমান্তবর্তী কাচিন ইনডিপেন্ডেন্স আর্মিকে (কেআইএ) নভেম্বর মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় সেমিনারে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ভারত প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সঙ্গে আলোচনায় বসবে যা একটি ইতিবাচক উদ্যোগ বলে মনে করে চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। তারা সেখানে তাদের প্রতিনিধি পাঠাবে বলে জানায়, তবে এএ এবং কেআইএ এই বিষয়ে কিছু জানায়নি। ভারত মিয়ানমার সীমান্তে অস্থিতিশীলতার কারনে মিয়ানমারে ভারতের প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে এবং এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারত সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে কাজ করতে চায়।
চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের দুই হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। চীনের বাণিজ্য করিডোর স্থাপনের জন্য সীমান্ত এলাকায় প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। এই বাণিজ্য রুটে চীনের ইউনান প্রদেশের সীমান্ত শহর রুইলি ও মিয়ানমারের মিউজ শহরতলী গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের তীব্রতার কারনে স্থানীয়দের মধ্যেকার পারস্পরিক নির্ভরশীল অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। চীন, মিয়ানমার সীমান্তে যুদ্ধ বন্ধে একাধিক যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করেছে এবং সেগুলো আবার ভেঙে গেছে। চীন, জান্তা সরকারে একটি প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হলেও প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলির সাথেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। চীনে মিয়ানমার থেকে ৩.৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয় এবং চীন মিয়ানমারে ১১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। চীনের চায় যে মিয়ানমারের সংঘাত যেন চীনের সীমান্ত থেকে দূরে থাকে। চীনকে মিয়ানমারের এই বাণিজ্য পথ অর্থনীতির পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক কারনেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চীন এই সংকট মোকাবেলায় তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এনইউজি চীনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দিয়ে চীনা বিনিয়োগ ও উদ্যোগ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ রাখাইনে সেইফ জোন ও মানবিক করিডোর স্থাপন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে
তিন বছরের বেশী সময় ধরে চলমান তীব্র সংঘাতের পর সংঘাত বন্ধ ও শান্তি আলোচনা শুরুর জন্য সামরিক জান্তা ২৬ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তা সরকার বিদ্রোহীদের অস্ত্রসংবরণ করে রাজনৈতিক সংলাপে বসার আহ্বান জানায় তবে বিদ্রোহীরা এই আহ্বান বিবেচনা করার মতো নয় বলে নাকচ করে দিয়েছে। মিয়ানমার জান্তা বাহিনী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ক্রমবর্ধমান হামলায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এই সংকট মোকাবেলায় মিয়ানমারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ১২-১৫ সেপ্টেম্বর চীন সফরে গিয়ে আন্তঃসীমান্ত পরিস্থিতি, ড্রোন ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ে চীনের সহযোগিতা চেয়েছে। মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে চীন সফর করে চীনের সাথে ২টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত করে। চীন-মিয়ানমারকে ৭ লাখ ডলারের সামরিক সরঞ্জাম ও দুদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেয়। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রধান ক্ষমতা গ্রহণের পর নভেম্বর মাসে প্রথমবারের মত চীন সফর করে। মিন অং হ্লাইং অর্থনৈতিক ও বিবিধ সহযোগিতা বিকাশ ও জোরদার করতে দুই দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের বিষয়ে চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনা করেছে। মিয়ানমার সেনাপ্রধান চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর মেকং সাবরিজিয়নের দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনেও অংশগ্রহণ করেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে এএ’র সশস্ত্র সংঘাতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। মিয়ানমারে বাংলাদেশি পণ্যের অনেক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চলমান সংঘর্ষের কারনে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে আছে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৮০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। গত ২৯ বছরে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে মোট ১০ হাজার ৩১৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ২৯২ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানি ধরে রেখেছে তবে তারা মিয়ানমারে গিয়ে রপ্তানি পণ্যের বাজার সৃষ্টির সুযোগ পাচ্ছেনা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক লেনদেনের পদ্ধতি ঠিক করার অবকাশ রয়েছে। উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারলে মিয়ানমারের অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর মত বাংলাদেশও সীমান্ত বাণিজ্য থেকে লাভবান হতে পারে। এ এ বাংলাদেশের সাথে তাদের যোগাযোগ ও বাণিজ্য বাড়াতে পারে। বাংলাদেশের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল, চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত। এখান থেকে তারা তাদের নিত্যব্যবহার্য পণ্য সংগ্রহ করতে পারে। দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে এই অবস্থা থেকে উত্তোরণ সম্ভব। চলমান সংঘাতে মিয়ানমারে প্রায় তিন লক্ষ ৩০ হাজার বেসামরিক নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ত্রানসংস্থাগুলো বাংলাদেশ থেকে তাদের ত্রান সহযোগিতা চলমান রাখতে পারে।
আরও পড়ুনঃ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেয়ার সুযোগ দেয়া যাবেনা
এ এ ও রাখাইনের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে প্রতিবেশী দেশগুলো ও অন্যান্য অনেক দেশের যোগাযোগ থাকলেও বাংলাদেশের সাথে তাদের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য যোগাযোগ নেই। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই যোগাযোগ উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। ট্রাক ১.৫ ও ট্রাক ২ ডিপ্লোম্যাসির মাধ্যমে দু’দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে রাখাইনে সেফজোন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা এখন এ এ’র নিয়ন্ত্রণে, আরাকান আর্মির তত্ত্বাবধানে এ ধরনের নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এ এ’র পাশাপাশি এন ইউ জি, অন্যান্য রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গুষ্ঠির সাথে যোগাযোগ বাড়ানো গেলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে এ ধরনের উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে যা দীর্ঘদিন তেমন গুরুত্ব পায়নি। রোহিঙ্গা সংকটের কারনে বাংলাদেশ যেহেতু বেশী ক্ষতিগ্রস্থ তাই বাংলাদেশকে নিজের স্বার্থ রক্ষায় এসব উদ্যোগ নিতে হবে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মত মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের চীন সফর মিয়ানমার চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন উদ্যোগ। তারা ২০২৫ সালে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে এবং সশস্ত্র দলগুলোকে সংঘাত পরিহার করে আলোচনায় বসতে আহ্বান করেছে। চীন তার সীমান্তে সংঘাত বন্ধ করতে চাচ্ছে এবং মিয়ানমার সরকার চলমান কোণঠাসা অবস্থা থেকে পরিত্রানের উপায় খুঁজছে। চীনের সাথে নতুন করে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে তারা শক্ত হাতে বিদ্রোহ দমনে সক্রিয় হতে পারে এবং সরকার ঘোষিত নির্বাচনে চীনের সহায়তায় বিদ্রোহী দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহনে বাধ্য করার চেষ্টা করতে পারে।
মিয়ানমারে শান্তি ফিরে আসা মিয়ানমারের জনগণ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্ত সংঘর্ষের কারনে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে মিয়ানমারের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়া মিয়ানমারের অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ চীন, ভারত ও থাইল্যান্ড মিয়ানমার সরকারের সাথে সামরিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগের পাশাপাশি তাদের সীমান্ত নিরাপত্তা ও বাণিজ্য নিশ্চিত করার জন্য বিদ্রোহী গুষ্ঠিগুলোর সাথেও বিভিন্নভাবে যোগাযোগ রাখছে। মিয়ানমারে দশকের পর দশক ধরে চলা যুদ্ধ সাধারন মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কোন অবদান রাখেনি। তাই যুদ্ধ নয় প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে শান্তি ফিরে আসুক ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হোক এটাই প্রত্যাশা।
লেখকঃ
প্রিন্ট