ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ইংরেজি শিক্ষার ১৫ বছর

উপ-সম্পাদকীয়:
১৭৫৭ সাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে এ অঞ্চলে ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যায়। অফিস আদালত এবং উচ্চশিক্ষায় ইংরেজি ভাষা প্রবর্তনের ফলে এদেশীয় শিক্ষিত সমাজ ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণে বাধ্য হয়। তবে ইংরেজি মাতৃভাষা না হওয়ায় এবং শিক্ষণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসৃত না হওয়ায় তা আয়ত্ত করতে পৌনে তিনশ বছর ধরে বাঙ্গালীদের গলদধর্ম হতে হচ্ছে।
ইংরেজি অন্যতম আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ায় এবং সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হওয়ায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পরও এদেশের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি শিক্ষায় পারদর্শী হতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইংরেজি শিক্ষার কোন আধুনিক, বৈজ্ঞানিক এবং সর্বাপেক্ষা সহজ পদ্ধতি প্রয়োগ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ জটিলবৃত্তে আবদ্ধ।
একটা শিশুর জন্মের পর যদি তাকে কথা বলতে না শিখিয়ে কারক, সমাস, লিঙ্গ, সন্ধি, বাগধারা, এক কথায় প্রকাশ, বর্ণ প্রকরণ, শব্দ প্রকরণ ইত্যাদি শেখানো হতো এবং তারপর তাকে শুদ্ধভাবে বাংলায় কথা বলা শেখানোর চেষ্টা করা হতো, তাহলে ভাবুন তো কেমন হতো ? জন্মের পর কোন বাঙালি শিশু একটা পর্যায়ে প্রথমে ‘মা’ ডাক শেখে। এর কিছুদিন পর অল্পস্বল্প কথা আয়ত্ত্বে এলে ক্ষুধা লাগলে ‘মা দুধ’ কিংবা ‘মা ভাত’ বলে তার চাহিদার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। ‘মা দুধ’ কিংবা ‘মা ভাত’ উভয় বাক্যই অশুদ্ধ। কোন বাচ্চাকে যদি প্রথমেই ব্যাকরণ অনুসরণ করে শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলা শেখানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে ২০ বছর ধরে চেষ্টা করেও তাকে ফ্লুয়েন্টলি বাংলায় কথা বলা শেখানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। যে কোন শিক্ষিত বাঙালি আমার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন।
অথচ ইংরেজি শেখানোর ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের parts of speech, voice, narration ইত্যাদি শিখিয়ে ইংরেজি শেখানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে ভীতি হচ্ছে Tense। প্রচলিত পদ্ধতির পৃষ্ঠপোষক এবং অনুসারীরা মনে করেন Tense না শিখলে ইংরেজি শেখা অসম্ভব। অথচ শুধু Tense-র উপর ভিত্তি করে সমস্ত বাংলা বাক্যকে শুদ্ধভাবে ইংরেজি করা সম্ভব নয়। অথচ বছরের পর বছর সেই Tense নিয়েই  চলছে বাড়াবাড়ি। ইংরেজি শেখানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিনের প্রচলিত গ্রামার মেথডও কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। বর্তমানে কমিউনিকেটিভ ইংলিশ সিস্টেম নামের নতুন এক ধরনের উদ্ভট পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে, যা আরও বেশি অকার্যকর এবং অবৈজ্ঞানিক। ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং এর নামে শিক্ষার্থীদের মুখস্থ নির্ভরশীল করানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিক্ষিত কিংবা উচ্চশিক্ষিত হতে একজন শিক্ষার্থীকে শৈশব থেকে কমপক্ষে ১৫ বছর আবশ্যিক বিষয় ইংরেজি অধ্যয়ন করতে হয়। অথচ এতটা বছর পরও অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী ইংরেজিতে ফ্লুয়েন্টলি বলতে ও লিখতে পারে না। ইংরেজি বিষয়ের প্রতি অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর প্রচন্ড ভীতি কাজ করে।
তথাপিও তারা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের নিমিত্তে ব্যাপক প্রচলিত ইংরেজি ভাষা শিখতে চায়। শিক্ষার্থীদের সহজভাবে শেখানোর স্বার্থেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। তবে যুগের পর যুগ যেসব পদ্ধতি অনুসৃত হয়েছে তার কোনটিই উল্লেখযোগ্যভাবে ফলপ্রসূ হয়নি, দুর্বল শিক্ষার্থীদের কাছে কোনটিই আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি।
বাংলা ভাষায় আমরা সমস্ত বাঙালিরাই শুদ্ধভাবে, সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারি না। ভাষার ক্ষেত্রে রয়েছে অঞ্চলভেদে ভিন্নতা। তাই ইংরেজির ক্ষেত্রেও যাদের ইংরেজি মাতৃভাষা, তাদের সাথে বাঙালিদের উচ্চারণে, বাচনভঙ্গিতে ভিন্নতা থাকবেই। একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না।
কমিউনিকেশনের (যোগাযোগ) জন্যই ভাষা। কমিউনিকেশন করতে পারলেই হলো। গ্রামার অনুসরণ করে কথা বলা যায় না, কথোপকথনে সেনটেন্স (বাক্য) অশুদ্ধ হলেও সমস্যা নেই। ধরা যাক, একজন বাঙালি অস্ট্রেলিয়ায় গেল। তিনি অস্ট্রেলিয়ার একটি হোটেলে ঢুকে যদি বলেন, ‘আমি ভাত খাব। আমাকে মাছ-ভাত দেন।’ তাহলে ওই দেশের হোটেলের বয় কিছুই বুঝবে না। কিন্তু ‘আই রাইচ এন্ড ফিস’ বললেও দোকানদার বুঝবেন ভাত-মাছ চাচ্ছেন। দ্যাটস এনাফ। বিশুদ্ধতা অপরিহার্য নয়। এটাই কমিউনিকেশন।
কেউ একটি ভাষা যখন সাবলীলভাবে বলে, আমরা সাধারণত বুঝি যে, তার চারটি দক্ষতার উচ্চস্তর রয়েছে–শোনা (Listening), কথা বলা (Speaking), পড়া (Reading) এবং লেখা (Writing)। শোনার দক্ষতা অর্জনের জন্য অডিও ক্যাসেটে বেশি বেশি কথোপকথন শোনা শিক্ষার্থীদের জরুরি। অথচ আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে এ ধরনের সুবিধা নেই। ‘পড়া’র দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি পত্রিকা পাঠের ব্যবস্থা নেই। নামকরা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে সিলেবাস নামক বিষয়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
সবচেয়ে হতাশাজনক অবস্থা শিক্ষার্থীদের স্পিকিংয়ে দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে। শিক্ষার্থীদের পরস্পরের সাথে ইংরেজিতে কথা বলার (Speaking) অর্থাৎ স্পিকিংয়ে দক্ষতা অর্জনের কোন কার্যকর ব্যবস্থাই নেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে। স্পিকিংয়ে দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে শ্রেণিতে এমনটি করলে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আমার অভিমত। বিদ্যালয়ে সপ্তাহের একদিন শ্রেণিতে কিছু শিক্ষার্থীরা তাদের বাড়ি থেকে একটি বা দুটি করে সবজি নিয়ে আসবে। এরপর ঘোষিত ওই দিন শ্রেণিতে সবজির বাজার বসবে। বাকি শিক্ষার্থীরা এক একজনের কাছে গিয়ে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করবে ‘এই সবজিটির নাম কি? এটির কেজি কত? সবজিটি স্থানীয় নাকি বাইরে থেকে আসছে? কবেকার সবজি?’ ইত্যাদি। এতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সবজির নাম জানবে। মূল্য জিজ্ঞেস করতে শেখবে, ইত্যাদি। আবার আরেক দিন একইভাবে ফলের দোকান বসবে। সেদিন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ফলের নাম জানবে। মূল্য জিজ্ঞেস করতে শেখবে। ইত্যাদি। এভাবে এক একদিন এক একটা দ্রব্যের দোকান বসবে আর শিক্ষার্থীরা বাস্তবধর্মী শিক্ষা গ্রহণ করবে। এভাবে মুখস্থ ছাড়াই আনন্দের সাথে প্রতিষ্ঠানের দুর্বল শিক্ষার্থীরা চারটি স্তরের দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর শিক্ষা অর্জনের পর এদেশের অনেক শিক্ষার্থীরই ইংরেজি শিক্ষার অবস্থা হয় তথৈবচ। বাংলাদেশের নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ পর্বে অধ্যয়নরত তিন বন্ধু একদিন ঢাকার এক চায়ের দোকানে বসে অপরাহ্নে চা পান করছিল। তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রসঙ্গ আলোচিত হবার এক ফাঁকে এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করল ‘রহিমেরা দুই ভাই’ এটির ট্রান্সলেশন কি হবে? প্রশ্নকারীর ছোট স্কুল পড়ুয়া বোন তার নিকট ট্রান্সলেশনটি জানতে চেয়েছিল বলে সে জানায়। উপস্থিত এক বন্ধু খানিক ভেবে বলল ‘Rahim are two brothers’. অন্য বন্ধু বলল ‘Rahim is two brothers’. বাকি বন্ধুটি এমনভাবে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল যেন সে কিছুই শুনতে পারছে না। আর আমি পাশের টেবিলে উত্তপ্ত চায়ের কাপে মুখ লাগিয়ে আসিফ ও কানিজের এক সময়কার জনপ্রিয় একটি গান মনে করার চেষ্টা করলাম ‘তেমন ভূগোল জানি না আমি, তেমন জানি না অংক….কিছুই হয়নি শেখা’।

দীপঙ্কর পোদ্দার

শিক্ষক ও সাংবাদিক

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

ইংরেজি শিক্ষার ১৫ বছর

আপডেট টাইম : ৪ মিনিট আগে
সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক রিপোর্ট :
উপ-সম্পাদকীয়:
১৭৫৭ সাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে এ অঞ্চলে ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যায়। অফিস আদালত এবং উচ্চশিক্ষায় ইংরেজি ভাষা প্রবর্তনের ফলে এদেশীয় শিক্ষিত সমাজ ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণে বাধ্য হয়। তবে ইংরেজি মাতৃভাষা না হওয়ায় এবং শিক্ষণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসৃত না হওয়ায় তা আয়ত্ত করতে পৌনে তিনশ বছর ধরে বাঙ্গালীদের গলদধর্ম হতে হচ্ছে।
ইংরেজি অন্যতম আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ায় এবং সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হওয়ায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পরও এদেশের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি শিক্ষায় পারদর্শী হতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইংরেজি শিক্ষার কোন আধুনিক, বৈজ্ঞানিক এবং সর্বাপেক্ষা সহজ পদ্ধতি প্রয়োগ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ জটিলবৃত্তে আবদ্ধ।
একটা শিশুর জন্মের পর যদি তাকে কথা বলতে না শিখিয়ে কারক, সমাস, লিঙ্গ, সন্ধি, বাগধারা, এক কথায় প্রকাশ, বর্ণ প্রকরণ, শব্দ প্রকরণ ইত্যাদি শেখানো হতো এবং তারপর তাকে শুদ্ধভাবে বাংলায় কথা বলা শেখানোর চেষ্টা করা হতো, তাহলে ভাবুন তো কেমন হতো ? জন্মের পর কোন বাঙালি শিশু একটা পর্যায়ে প্রথমে ‘মা’ ডাক শেখে। এর কিছুদিন পর অল্পস্বল্প কথা আয়ত্ত্বে এলে ক্ষুধা লাগলে ‘মা দুধ’ কিংবা ‘মা ভাত’ বলে তার চাহিদার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। ‘মা দুধ’ কিংবা ‘মা ভাত’ উভয় বাক্যই অশুদ্ধ। কোন বাচ্চাকে যদি প্রথমেই ব্যাকরণ অনুসরণ করে শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলা শেখানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে ২০ বছর ধরে চেষ্টা করেও তাকে ফ্লুয়েন্টলি বাংলায় কথা বলা শেখানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। যে কোন শিক্ষিত বাঙালি আমার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন।
অথচ ইংরেজি শেখানোর ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের parts of speech, voice, narration ইত্যাদি শিখিয়ে ইংরেজি শেখানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে ভীতি হচ্ছে Tense। প্রচলিত পদ্ধতির পৃষ্ঠপোষক এবং অনুসারীরা মনে করেন Tense না শিখলে ইংরেজি শেখা অসম্ভব। অথচ শুধু Tense-র উপর ভিত্তি করে সমস্ত বাংলা বাক্যকে শুদ্ধভাবে ইংরেজি করা সম্ভব নয়। অথচ বছরের পর বছর সেই Tense নিয়েই  চলছে বাড়াবাড়ি। ইংরেজি শেখানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিনের প্রচলিত গ্রামার মেথডও কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। বর্তমানে কমিউনিকেটিভ ইংলিশ সিস্টেম নামের নতুন এক ধরনের উদ্ভট পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে, যা আরও বেশি অকার্যকর এবং অবৈজ্ঞানিক। ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং এর নামে শিক্ষার্থীদের মুখস্থ নির্ভরশীল করানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিক্ষিত কিংবা উচ্চশিক্ষিত হতে একজন শিক্ষার্থীকে শৈশব থেকে কমপক্ষে ১৫ বছর আবশ্যিক বিষয় ইংরেজি অধ্যয়ন করতে হয়। অথচ এতটা বছর পরও অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী ইংরেজিতে ফ্লুয়েন্টলি বলতে ও লিখতে পারে না। ইংরেজি বিষয়ের প্রতি অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর প্রচন্ড ভীতি কাজ করে।
তথাপিও তারা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের নিমিত্তে ব্যাপক প্রচলিত ইংরেজি ভাষা শিখতে চায়। শিক্ষার্থীদের সহজভাবে শেখানোর স্বার্থেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। তবে যুগের পর যুগ যেসব পদ্ধতি অনুসৃত হয়েছে তার কোনটিই উল্লেখযোগ্যভাবে ফলপ্রসূ হয়নি, দুর্বল শিক্ষার্থীদের কাছে কোনটিই আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি।
বাংলা ভাষায় আমরা সমস্ত বাঙালিরাই শুদ্ধভাবে, সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারি না। ভাষার ক্ষেত্রে রয়েছে অঞ্চলভেদে ভিন্নতা। তাই ইংরেজির ক্ষেত্রেও যাদের ইংরেজি মাতৃভাষা, তাদের সাথে বাঙালিদের উচ্চারণে, বাচনভঙ্গিতে ভিন্নতা থাকবেই। একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না।
কমিউনিকেশনের (যোগাযোগ) জন্যই ভাষা। কমিউনিকেশন করতে পারলেই হলো। গ্রামার অনুসরণ করে কথা বলা যায় না, কথোপকথনে সেনটেন্স (বাক্য) অশুদ্ধ হলেও সমস্যা নেই। ধরা যাক, একজন বাঙালি অস্ট্রেলিয়ায় গেল। তিনি অস্ট্রেলিয়ার একটি হোটেলে ঢুকে যদি বলেন, ‘আমি ভাত খাব। আমাকে মাছ-ভাত দেন।’ তাহলে ওই দেশের হোটেলের বয় কিছুই বুঝবে না। কিন্তু ‘আই রাইচ এন্ড ফিস’ বললেও দোকানদার বুঝবেন ভাত-মাছ চাচ্ছেন। দ্যাটস এনাফ। বিশুদ্ধতা অপরিহার্য নয়। এটাই কমিউনিকেশন।
কেউ একটি ভাষা যখন সাবলীলভাবে বলে, আমরা সাধারণত বুঝি যে, তার চারটি দক্ষতার উচ্চস্তর রয়েছে–শোনা (Listening), কথা বলা (Speaking), পড়া (Reading) এবং লেখা (Writing)। শোনার দক্ষতা অর্জনের জন্য অডিও ক্যাসেটে বেশি বেশি কথোপকথন শোনা শিক্ষার্থীদের জরুরি। অথচ আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে এ ধরনের সুবিধা নেই। ‘পড়া’র দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি পত্রিকা পাঠের ব্যবস্থা নেই। নামকরা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে সিলেবাস নামক বিষয়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
সবচেয়ে হতাশাজনক অবস্থা শিক্ষার্থীদের স্পিকিংয়ে দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে। শিক্ষার্থীদের পরস্পরের সাথে ইংরেজিতে কথা বলার (Speaking) অর্থাৎ স্পিকিংয়ে দক্ষতা অর্জনের কোন কার্যকর ব্যবস্থাই নেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে। স্পিকিংয়ে দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে শ্রেণিতে এমনটি করলে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আমার অভিমত। বিদ্যালয়ে সপ্তাহের একদিন শ্রেণিতে কিছু শিক্ষার্থীরা তাদের বাড়ি থেকে একটি বা দুটি করে সবজি নিয়ে আসবে। এরপর ঘোষিত ওই দিন শ্রেণিতে সবজির বাজার বসবে। বাকি শিক্ষার্থীরা এক একজনের কাছে গিয়ে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করবে ‘এই সবজিটির নাম কি? এটির কেজি কত? সবজিটি স্থানীয় নাকি বাইরে থেকে আসছে? কবেকার সবজি?’ ইত্যাদি। এতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সবজির নাম জানবে। মূল্য জিজ্ঞেস করতে শেখবে, ইত্যাদি। আবার আরেক দিন একইভাবে ফলের দোকান বসবে। সেদিন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ফলের নাম জানবে। মূল্য জিজ্ঞেস করতে শেখবে। ইত্যাদি। এভাবে এক একদিন এক একটা দ্রব্যের দোকান বসবে আর শিক্ষার্থীরা বাস্তবধর্মী শিক্ষা গ্রহণ করবে। এভাবে মুখস্থ ছাড়াই আনন্দের সাথে প্রতিষ্ঠানের দুর্বল শিক্ষার্থীরা চারটি স্তরের দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর শিক্ষা অর্জনের পর এদেশের অনেক শিক্ষার্থীরই ইংরেজি শিক্ষার অবস্থা হয় তথৈবচ। বাংলাদেশের নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ পর্বে অধ্যয়নরত তিন বন্ধু একদিন ঢাকার এক চায়ের দোকানে বসে অপরাহ্নে চা পান করছিল। তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রসঙ্গ আলোচিত হবার এক ফাঁকে এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করল ‘রহিমেরা দুই ভাই’ এটির ট্রান্সলেশন কি হবে? প্রশ্নকারীর ছোট স্কুল পড়ুয়া বোন তার নিকট ট্রান্সলেশনটি জানতে চেয়েছিল বলে সে জানায়। উপস্থিত এক বন্ধু খানিক ভেবে বলল ‘Rahim are two brothers’. অন্য বন্ধু বলল ‘Rahim is two brothers’. বাকি বন্ধুটি এমনভাবে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল যেন সে কিছুই শুনতে পারছে না। আর আমি পাশের টেবিলে উত্তপ্ত চায়ের কাপে মুখ লাগিয়ে আসিফ ও কানিজের এক সময়কার জনপ্রিয় একটি গান মনে করার চেষ্টা করলাম ‘তেমন ভূগোল জানি না আমি, তেমন জানি না অংক….কিছুই হয়নি শেখা’।

দীপঙ্কর পোদ্দার

শিক্ষক ও সাংবাদিক

প্রিন্ট