কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম এ রায় দেন।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আজিজুল ইসলাম (৩৭) কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউপির চর বানিয়াপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, আসামি আজিজুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেশী জেসমিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরস্পর ভালোবেসে ২০১৩ সালে গোপনে বিয়ে করে তারা। বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে জেসমিন আক্তারের পরিবার তার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে জামাই হিসেবে আজিজুল ইসলামকে মেনে নেয়। কিন্তু আজিজুল ইসলামের পরিবার জেসমিনকে মন থেকে মানেন না। অকারণে জেসমিনের ওপর অত্যাচার করে। পরে স্বামী আজিজুল ইসলামও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের ওপর অত্যাচার করা শুরু করে। সব অত্যাচার, নির্যাতন, দুর্ব্যবহার মেনে নিয়ে স্বামীর ঘর সংসার করতে থাকে।
এমতাবস্থায় তিন-চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর স্বামী ও স্বামীর পরিবারের লোকজন অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বিয়ের প্রায় সাত-আট মাসের মাথায় স্বামী আজিজুল তার নিজ ঘরে নির্যাতন করে খুন করে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর জেসমিন আক্তারকে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল গভীর রাতে স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে নির্মম নির্যাতন ও মারপিট করে হত্যা করে স্বামী আজিজুল ইসলাম। হত্যাকাণ্ডের পর বিষয়টি ভোরের দিকে জানাজানি হয়। আসামির ঘর থেকে কুমারখালী থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। পরে নিহতের বাবা ও চর বানিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রওশন আলী মালিথা বাদী হয়ে আজিজুল ইসলামসহ তার পরিবারের ৫ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে ৩১ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। এ মামলায় ৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে রোববার আদালত এ রায় দেন। রায় ঘোষণার পরপরই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আজিজুল ইসলামকে পুলিশ পাহারায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে জেসমিন আক্তারের স্বজনরা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তার স্বজনরা জানান, জেসমিনকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করে আসামি। ছয় বছর আদালতে মামলার কার্যক্রম শেষে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ে তারা খুশি। তবে আসামির ফাঁসি হলে আরো বেশি খুশি হতেন।
আদালতের পিপি অনুপ কুমার নন্দী বলেন, হত্যা মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আসামি আজিজুল ইসলামকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
প্রিন্ট