ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মধুমতী নদীর ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প অনুমোদনের আশ্বাস স্বপ্নই রয়ে গেছে। বর্ষা শুরুতে মধুমতী নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে উপজেলার তিন ইউনিয়নের ১০ গ্রাম। গত ১৫ দিনের ভাঙনে একাধিক বসতবাড়িসহ হাজারো একর জমি, ধমীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীনের পথে হাজারো বসতবাড়ি, সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাদি জমি, খেলার মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,মসজিদ-মাদ্রাসা,ঈদগাহসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
বন্যার পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার পর থেকে উপজেলা পাচুড়িয়া, টগরবন্দ ও গোপালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। অন্তত ১০ গ্রামের ওপর দিয়ে প্রভাহিত মধুমতীর লাগামহীন ভাঙন এলাকাবাসীর ঘুম কেড়ে নিয়েছে। বিশেষ করে পাচুড়িয়া ও টগরবন্দ ইউনিয়নের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাচুড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চরনারানদিয়া গ্রাম প্রায় বিলীন হতে বসেছে।
এই করোনা কালিন সময়ে ইতোমধ্যে ঘর বাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন ও সর্বহারা হয়ে পড়ছে অনেক পরিবার। ভাঙনের কবলে রয়েছে প্রায় কয়েক শতাধিক পরিবার। সেখানে বিশাল এলাকাজুড়ে ফাটল ধসে পড়ছে প্রতিদিন।হুমকির মুখে সেখানকার প্রাইমারি স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ অনেক স্থাপনা।
এলাকাবাসী গত কয়েক বছরের ভাঙন রোধে চেয়েছে স্থায়ী সমাধান পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে তাদের আশার বাণী সুনাচ্ছে নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হওয়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া চরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাচুড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চরনারানদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মধুমতির পাড় ঘেষে দাড়িয়ে রয়েছে যে কোন মুহুত্বে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে উপজেলার এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
উপজেলা পাচুড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চরনারানদিয়া গ্রামের কামাল শিকদার বলেন, আমার বসতবাড়িগত বৃহস্পতিবার রাতে মধুমতি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সর্বস্ব হারিয়ে আমার পরিবার নিয়ে রাস্তার উপর খোলা আকাশের নিচে রয়েছি। এখন সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোন সাহায্য সহযোগীতা পাইনি।
বাজড়া চরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা পারভিন জানান, গত বছরের ভাঙনে বিলীন হতে বসেছিল বিদ্যালয়টি জিও ব্যাগ ফেলে কোন রকম ভাঙন রোধ করা হয়েছিল, তখন সুনেছিলাম ভাঙন রোধে এখাানে স্থায়ী বাধ নির্মাণ হবে এখনও কোন কাজ হলোনা এবছরও নদীতে আগের মতো জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী বাধ নির্মাণ না হলে বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলার দায়িত্বে থাকা বোয়ালমারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সন্তোষ কর্মকার জানান, নদীভাঙন রোধে বৃহৎ প্রকল্পের দরকার। পাউবো থেকে ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্থায়ী বাধ নির্মাণের জন্য আবেদন করে ফাইল জমা দিয়েছি। এ প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙনকবলিত স্থানে ভাঙন রোধে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
ইউএনও তৌহিদ এলাহি জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক নদী ভাঙন কবলিত অঞ্চল পরিদর্শন করেছে। বন্যার সময় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ভাঙনের বিষয়টি জানানো হয়েছে। নদী ভাঙন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগীতা করা হবে।
প্রিন্ট