মুরাদ হোসেনঃ
বর্ষাকালীন সময়ে (আষাঢ়-শ্রাবণ) বৃষ্টির উপর নির্ভর করে আমন ধান চাষ করেন কৃষকেরা। কিন্তু এবছর দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে তলিয়ে গেছে কৃষকের রোপণকৃত ধানের চারা, আবার আনেক কৃষকের জমি পানিতে ঢুবে থাকায় চারা রোপণ করতেই পারেননি। ফলে আমন ধান রোপন মৌসুমের শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে মাগুরার মহম্মদপুরের ধানের চারা বিক্রির হাট। সোনালী স্বপ্ন বুননে কেউ চারা বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করছেন, আবার কেউ আগামী দিনের খাদ্য সংগ্রহের আশায় ক্রয় করছেন।
জীবন হেঁটে চলে, রসদ যোগায়। আগামীর প্রয়োজনে স্বপ্ন বোনে নীলাকাশের নিচে। একদিন ভ্রুণ থেকে জেগে ওঠে ঘুম ভাঙ্গে। মাথা তুলে দাঁড়ায় স্বমহিমায়। তখনই হাসি ফোটে প্রান্তিক কৃষকের মুখে। সোনালি রঙ্গে অবসান হয় জীবন! অন্য প্রান্তে বুভুক্ষু মানুষের মুখে খাদ্য যোগায়।
রাতের অমানিশা ভেদ করে ঊষার স্বপ্ন আঁকে আর কঠোর পরিশ্রমের ডালা সাজিয়ে বাংলার গ্রামীণ কৃষক মিতালি পাতায় মাটির সাথে। কৃষক এভাবে সারাটি দিন পার করে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করে। পরিশ্রম তখনই স্বার্থক হয় যখন দিগন্ত জোড়া মাঠ জুড়ে দোলা দেয় সবুজ ধানের ক্ষেত। সেই সবুজ একসময় সোনালি রঙ্গে পরিপক্ক হয়। তখন গর্বিত কৃষক পরিণত হয় শহরে জীবনের ভালোবাসায়। সেই পরিশ্রমলব্দ খাদ্যে উপর তলার মানুষেরা এগিয়ে যায় রঙ্গিন জীবনে।
সেই রঙ্গিন জীবনের সোনালী স্বপ্ন বুননে ব্যাস্ত মহম্মদপুরের কৃষকেরা। আমন ধানের মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে। শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে উপজেলার আমন ধানের চারা বিক্রয়ের হাট। সরেজমিনে উপজেলার ভিভিন্ন হাটে দেখা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকেরা আপন ধানের চারা তুলে আনে বিক্রি করার আশায়। আশপাশের প্রান্তিক কৃষকেরা ছুটে আসে সেই সবুজ ধানের চারা সংগ্রহ করতে। এখানে বি আর-১৭, ৮৭,৭৫, জিরেমতী ধানসহ বিভিন্ন জাতের চারা বিক্রি হচ্ছে।
পার্শবর্তী পরিদপুর জেলার সাতৈর থেকে চারা বিক্রি করতে আশ কৃষক আরিফুল বলেন, আমি বিভিন্ন জাতের ধানের চারা এনেছি। চারা বেচে পরিবারের চাহিদা পূরণ হবে। অপরদিকে কৃষক ফিরোজ আলম এসেছেন বড়রিয়া থেকে। তিনিও বিভিন্ন প্রকার ধানের চারা এনেছেন বিক্রি করার জন্য। এভাবে মহম্মদপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকেরা এসেছেন তাদের উৎপাদিত আমন ধানের চারা নিয়ে। স্থানীয় ভাষায় ধানের চারাকে ‘পাতো’ বলা হয়। ধানের চারা ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে এবং এতে উপকৃত হচ্ছে স্থানীয়সহ আশপাশের কৃষকেরা।
ধানের চারা ক্রয় করতে আশা বাঐজানী গ্রামের কৃষক মিজান বলেন, একবার রোপণ করার পর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পানি কোমছে, তাই নিজের জমিতে ধান রোপণ করার জন্য চারা কিনতে এসেছি। আমার মতো অনেকেই এসেছেন ধানের চারা কিনতে।
দুপুর বারোটা থেকে শুরু হয় এই হাটে ধানের চারা কেনাবেচা, সন্ধ্যার আগেই শেষ হয়। কেউ নিজের উৎপাদিত চারা এই হাটে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে হয় স্বচ্ছল। অন্য দিকে কৃষক ক্রেতা সেই উৎপাদিত চারা ক্রয় করে আগামীর স্বপ্ন বোনে নিজের এবং হাজার হাজার মানুষের মুখে খাদ্য যোগাতে।
প্রিন্ট