আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরসহ প্রচন্ড খরাপ্রবণ বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের সারা বছর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিএমডিএ’র (ইআইইসিডি) প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগের ১২২টি উপজেলায় বিলের আবাদি জমিতে সারাবছর এই প্রকল্পের আওতায় পানি পাবে কৃষক। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ‘ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকা ও সেচ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পরীক্ষামূলকভাবে ডিপ সেচ পদ্ধতির প্রচলন (ইআইইসিডি)’ প্রকল্পে ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ডিপ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে আবাদি জমিতে পানি সরবরাহের কাজ। ৪ হাজার ৫০০টি পাইপের মাধ্যমে ২২ হাজার ৫০০ মিটার পাইপলাইনে ৪ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।
প্রকল্প এলাকার কৃষকরা বলছেন, পর্যাপ্ত সেচের পানি পাওয়ায় জমিতে সারা বছর ধান, ফল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করতে পারবে তারা।রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষক আলফাজ আলী ও মেহেদী বলেন,তালন্দ বিলে আগে সব জমিতে পানি নেয়া যেতো না।কিন্ত্ত পাইপ লাইন বসানোর পর সব জমিতে পানি নেয়া যাচ্ছে। গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক নূর হোসেন এই বিষয়ে বলেন, “আগে আমাদের বিলের সব জমিতে পানি নেওয়া যেতো না। এখন বিলের ড্রিপ লাইনের মাধ্যমে এই পাইপগুলো বসানো হচ্ছে। এতে এখন বিলের সব জমিতে আমরা পানি পাবো। এই প্রকল্পের জন্য আমরা কৃষকের পক্ষ থেকে বিএমডিএকে ধন্যবাদ জানাই।”
বেলাল আলী নামের অপর একজন কৃষক বলেন, “আমাদের এই অঞ্চল খরাপ্রবণ হওয়ায় পানি নিয়ে আমাদের চিন্তায় থাকতে হতো। কিন্তু আমাদের বিলে নতুন করে পাইপলাইন সংযোগের কাজ চলছে। এই কাজ হয়ে গেলে আমরা বিলের জমিতে সারাবছর পানি পাবো। ধান থেকে শুরু করে সব ধরণের সবজি রোপণ করতে পারবো। এই প্রকল্প আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়েছে। আমাদের পানির কষ্ট দূর হয়েছে।”
এই প্রকল্পের মাধ্যমে পানির সুষ্ঠবন্ঠন ও অপচয়রোধে ৪ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সাইফুল ইসলাম নামের এক প্রশিক্ষণার্থী এই বিষয়ে বলেন, ‘আগে আমরা যেভাবে জমিতে পানি নিতাম তাতে অনেক পানি নষ্ট হতো। কিন্তু আমরা এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। এখন আমরা খুব সহজেই পানির বাড়তি অপচয়রোধ ছাড়াই জমিতে পানি নিতে পারবো।’
বিএমডিএ থেকে আরো জানা যায়, এই প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। যার মাধ্যমে ৩ দশমিক ৬০ লাখ টন ফসল উৎপাদন করতে পারবে এই অঞ্চলের কৃষক। এতে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করেন তারা।
পানি না থাকায় আমাগো জমিত এক ফসলই হইত, দুই ফসল লাগাইতে পারতাম না। এই দিকটা পানির অভাব খুবই আছিল, জমিতে পানি পাওন যাইত না। কিন্তু এখন বিএমডি যে কাজ করছে, তাইহানে বছরভর পানি পাইবো আমরা।’ কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার চকদর্শনপাড়া এলাকার ৪৫ বছর বয়সী কৃষক রফিকুল ইসলাম । তিনি জানান ড্পি(গভীর নলকূপ) থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিলের সব জমিতে সারাবছর পানি দেওয়ার জন্য তাদের বিলে কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে বিলে ফসলের জন্য পানির অভাব দূর হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক শহীদুর রহমান বলেন, “আমরা কৃষকের জন্য কাজ করি। আমাদের এই অঞ্চলগুলো খরাপ্রবণ হওয়ায় সারাবছর পানি পাওয়া যায় না। কিন্তু (ইআইইসিডি) প্রকল্পের আওতায় এখন থেকে কৃষকরা সারাবছর তাদের জমিতে পানি পাবে। তাতে ধান থেকে শুরু করে সবধরণের ফসলের জন্য পানির অভাব দূর হবে ইনশাল্লাহ।#
প্রিন্ট