হানিফ উদ্দিন সাকিবঃ
গভীর রাতে মায়ের পাশ থেকে চুরি করা হয় ঘুমন্ত শিশুকে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় শিশুটি কেঁদে ফেলেন। কান্নার আওয়াজ থামাতে গিয়ে মুখ চেপে ধরা হয়। আর তাতেই মৃত্যু হয় আদনান আমিন (৫) নামের শিশুটির। মৃত্যু নিশ্চিত হলে ফেলে দেওয়া হয় পুকুরে। সম্প্রতি এই ঘটনায় আটক প্রধান আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এসব কথা বলেন।
এর আগে গত ৩ জুন, নোয়াখালীর হাতিয়ার চরকিং ৯ নং ওয়ার্ডের ফরাজী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার দুদিন পর বাড়ির পাশের ডোবা থেকে নিহত শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
মামলার সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, নিহত আদনান আমিন একই এলাকার মো: হকলাল এর ছেলে। তার মা হাসিনা আক্তারের বাবার বাড়ি এই এলাকায়। এই ঘটনায় আটক হওয়া একজন হলেন কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মো: সারু মিয়ার ছেলে মো: জামাল হোসেন (৩০), অন্যজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার জালসুগা গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে পাখি বেগম (২৭)। আটক মো: জামাল উদ্দিন শিশুটির মায়ের বর্তমান স্বামী। শিশুটির পিতার সাথে মা হাসিনা আক্তারের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো: আব্দুল বারী জানান, গভীর রাতে জামাল ও পাখি হাসিনাদের ঘরে প্রবেশ করে। উদ্দেশ্য ছিল হাসিনার ক্ষতি করা। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মায়ের পাশে থাকা শিশু আমিনকে নিয়ে চলে আসে। ঘরের বাইরে এলে আমিনের ঘুম ভেঙে যায়, সে কান্না করে ওঠে। কান্না থামাতে তারা দ্রুত আমিনের মুখ চেপে ধরে। এতে অন্ধকারে শিশুর সাড়া-শব্দ না দেখে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ফেলে দেয় পুকুরে।
এসআই বারী আরও জানান, এই ঘটনার কয়েকদিন আগে জামাল ও তার সঙ্গে থাকা পাখি নামের ওই মহিলা হাতিয়া আসেন। তারা স্থানীয় একজনের সহযোগিতা নেন। কয়েকদিন তারা সেই সহযোগীর বাড়িতে অবস্থান করেন। সুযোগ বুঝে ৩ জুন রাতে তারা হাসিনার ঘরে হিং কুড়ে প্রবেশ করে।
হাসিনা বেগম নিহত শিশুর বাবার সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত জামালের সাথে সংসার করে আসছিলেন। কিছুদিন আগে জামালের সাথেও তার মনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে হাসিনা তাকেও ছেড়ে শিশুটিকে নিয়ে বাবার বাড়ি হাতিয়া চলে আসেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জামাল তার সহযোগী পাখি নামের এক মহিলাকে নিয়ে হাসিনার ক্ষতি করার পরিকল্পনা করেন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জামাল নিজেই এসব স্বীকারোক্তি দেন।
এই ঘটনার পরদিন জামাল, নিহত শিশুর মা হাসিনা বেগমকে ফোনে জানান যে, শিশুটি তার কাছেই আছে এবং শিশুকে বাঁচাতে হলে হাসিনাকে কুমিল্লার দেবিদ্বার জামালের কাছে চলে যেতে হবে বলে শর্ত দেন। বিষয়টি হাসিনা হাতিয়া থানায় জানান। এরপরদিন শিশুটির মৃতদেহ হাসিনার বাবার বাড়ির পাশে ডোবায় পাওয়া যায়। পরে জামালকে ১ নম্বর আসামি করে হাতিয়া থানায় মামলা করেন শিশু আমিনের মা হাসিনা। পুলিশ র্যাবের সহযোগিতায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে জামাল ও তার সহযোগী পাখিকে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আটক করে।
হাসিনার মামা মাহফুজ জানান, শিশু আমিন হত্যাকাণ্ডে এলাকায় শোকের মাতাম চলেছে। দুজন আটক হয়েছে এই ঘটনায়। যারা হত্যাকারীদের সহযোগিতা করেছেন, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। তিনি আরও জানান, হাসিনার বড় বোনের জামাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। এ সুবাদে হাসিনার আরও তিন বোনের সেখানে বিয়ে হয়।
এই বিষয়ে হাতিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ.কে.এম আজমল হুদা বলেন, “এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। অনেক দূর থেকে এসে তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এতে স্থানীয় সহযোগী আছে বলে মনে হচ্ছে। পুলিশের তদন্তের মাধ্যমে সেটিও বের করা হবে।”
প্রিন্ট