আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরের তালন্দ ললিত মোহন ডিগ্রি কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ ড, জসিম উদ্দিন মৃধার বিরুদ্ধে আওয়ামী প্রীতির অভিযোগ উঠেছে।এনিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও সচেতন শিক্ষানুরাগী মহলে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।স্থানীয়রা জানান, সকলের কাছে শ্রদ্ধীয় ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ সম্পন্ন বিএনপির পরিক্ষিত নেতা এবং একই কলেজের সাবেক অধ্যাপক ফনির উদ্দিনকে কলেজ সভাপতি করা হয়েছে। কিন্ত্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড, জসিম উদ্দিন মৃধা তাকে সরিয়ে পচ্ছন্দের ব্যক্তিকে সভাপতি করার জন্য কলেজের শিক্ষকদের স্বাক্ষর জাল করে সভাপতির বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন।এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষকগণ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অধ্যক্ষের কাছে এর ব্যাখ্যা দাবি করেছেন।এনিয়ে অধ্যক্ষ-শিক্ষক মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের একগুঁয়েমির জন্য কলেজে প্রায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে। কলেজের সভাপতি হবেন কে সেটা দেখবেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ,এখানে সভাপতি নিয়ে অধ্যক্ষ বা শিক্ষকের তো আপত্তি তোলার কোনো সুযোগ নাই। কখানো যদি আপত্তি তোলে তাহলে বুঝতে হবে নেপথ্যে অদৃশ্য কিছু রয়েছে।
স্থানীয় একটি সুত্র জানায়, অধ্যক্ষের মদদপুষ্ট একটি গোষ্ঠী নিয়োগ বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে তাদের পচ্ছন্দের ব্যক্তি একই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সেলিম উদ্দিন কবিরাজকে সভাপতি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অথচ তার বিরুদ্ধে আওয়ামী মতাদর্শীতার অভিযোগ রয়েছে। তার অবস্থানও ছিলো জুলাই বিপ্লবের বিপক্ষে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশে তানোর মহিল ডিগ্রী কলেজে দু’বার ও তালন্দ কলেজে একবার সভাপতি ছিলেন।আওয়ামী লীগের ১৭ বছরে দেশের কোথাও কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিএনপির মতাদর্শী কেউ সভাপতি ছিলেন এমন নজির নাই। স্থানীয় অভিভাবকগণ বলেন,সাবেক অধ্যাপক ফনির উদ্দিনকে বাদ দিয়ে যদি সাবেক অধ্যক্ষ সেলিম উদ্দিন কবিরাজকে সভাপতি করা হয়,তবে তারা কঠোর আন্দোলন কর্মসুচি ঘোষণা করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, জসিম উদ্দিন মৃধাকে (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ করার পর থেকেই কলেজে নানা সংকট সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর যাবত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। যা নীতিমালা বর্হিভুত বলে তারা মনে করছেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, নিয়মিত গভর্নিং বডি গঠনের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ সভাপতি পদে তিন জনের নাম প্রস্তাব করে। গত ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো এ তালিকায় ছিলেন সেলিম উদ্দিন কবিরাজ, আইনুল হক ও দেওয়ান মো. মকসেদুর রহমান। তবে এরা আওয়ামী মতাদর্শী বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর ডিওলেটার নিয়ে সেলিম উদ্দিন কবিরাজ তানোর মহিলা ডিগ্রী কলেজের সভাপতি হয়েছিলেন।
এদিকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজের সাবেক অধ্যাপক বিএনপি নেতা ফনির উদ্দিনকে সভাপতি করে চিঠি পাঠানো হয়। এমতাববস্থায় তালিকার বাইরের একজনকে সভাপতি করার অজুহাতে কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ ড. মো. জসিম উদ্দীন মৃধা পরদিনই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন করেন। এ বেদনপত্রে কলেজের ৬৩ জন শিক্ষক স্বাক্ষর করেন বলে তার দাবি। তবে শিক্ষকগণ জানান,তারা এমন আবেদনপত্রে কোনো স্বাক্ষর করেননি।
এই তালিকা চাইলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তালিকা সভাপতি ফনির উদ্দিনকে দিতে পারেনি। এরপর গত ১১ মার্চ গভর্নিং বডির সভা ডাকেন সভাপতি অধ্যাপক ফনির উদ্দিন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের তালিকার বাইরে থাকা সভাপতি হওয়ার অজুহাতে সদস্যরা সভায় যোগ দেননি। ১৫ মার্চ বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শককে চিঠি দিয়ে অবহিত করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। সভাপতি ফনির উদ্দিন গত ২৭ মার্চ ও ৩ এপ্রিল আরো দুটি সভা ডাকলেও গভর্নিং বড়ির সদস্যরা তাতে উপস্থিত হননি।
গত ৯ এপ্রিল অধ্যক্ষ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ এপ্রিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেলিম উদ্দিন কবিরাজকে সভাপতি হিসাবে মনোনয়ন দেয়। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ৩০ এপ্রিল ফের অধ্যাপক ফনির উদ্দিনকে সভাপতি করে চিঠি দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ এ চিঠি হাতে পায় ৪ মে। এ নিয়ে ৬ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চিঠি দিয়েছেন সাবেক সভাপতি সেলিম উদ্দিন কবিরাজ। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ২৯ এপ্রিল তাকে সভাপতি করা হলে তিনি ৩ মে গভর্নিং বডির সভা ডাকেন এবং সব সদস্য তাতে অংশ নেন। কিন্তু ৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি চিঠিতে তিনি দেখতে পান, ৩০ এপ্রিলের তারিখে অধ্যাপক ফনির উদ্দিনকে আবারও সভাপতি করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সুশির সমাজের অভিমত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি দিয়েছে সেটা নিয়ে সাধারণ শিক্ষকদের বিরোধিতা করার তো কিছু নাই। বরং যিনি দায়িত্ব নিয়ে কোনো কাজ শুরু করতে পারেননি তার বিরুদ্ধে কি অপরাধে অনাস্থা আনা হয়েছে, নিশ্চয় এর নেপথ্যে অন্য কিছু রয়েছে, তারা এবিষয়ে অধিকতর তদন্তের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ও সচিব আমিনুল আক্তার বলেন, তালন্দ কলেজ নিয়ে আমরাও খুব বেকায়দায় আছি। আমাদের উপাচার্য পুরো হতাশ হয়ে গেছেন। একবার সভাপতি দেওয়া হয়, তার নামে অভিযোগ আসে। পরিবর্তন করলে আরেকজন আবার ওপর থেকে ফোন করান। ফলে একজনকে বাদ দিয়ে আরেকজনকে দিতে হয়। আমাদের কোনো দোষ নেই। এখন এসব বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে বলেছি। নির্বাচন হলে কোনো সমস্যা হবে না।
এ বিষয়ে সভাপতি অধ্যাপক ফনির উদ্দিন বলেন,বিগত দিনে প্রদিপ কুমার মজুমদার সভাপতি থাকা অবস্থায় কয়েকটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সভাপতিকে না জানিয়ে গোপণে তিনটি সভা করে স্বাক্ষর নিতে গেলে সভাপতি (তৎকালীন) প্রদিপ কুমার মজুমদার ৩টি রেজুলেশনে স্বাক্ষর না করে ফিরিয়ে দেন। তিনি বলেন, দাতা সদস্য হতে তিন লাখ টাকা ও হিতৈষী সদস্য হতে ৫০ হাজার টাকা কলেজ উন্নয়ন তহবিলে জমা দিতে হয়।কিন্ত্ত এদুটি সদস্যর নামে কলেজ উন্নয়ন ফান্ডে কোনো টাকা জমা নাই। এসব নিয়ে প্রশ্ন করায় তার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ অবস্থান নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. জসিম উদ্দীন মৃধা নানা অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সভাপতির পদ নিয়ে জটিলতার ফলে কলেজে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সভাপতি ফনির উদ্দীনের পরামর্শে পর পর তিনটি সভা ডাকি, কিন্তু কেউ আসেননি। কমিটির সদস্যরা ওনার সঙ্গে কাজ করতে চান না। ফলে কলেজে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্ন হচ্ছে। এটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়, ওনারা কীভাবে সমাধান করবেন জানি না।
প্রিন্ট