ইসমাইল হােসেন বাবুঃ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গাজী কালু-চম্পাবতী মেলা বসানো নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা চাপাইগাছি বাজারে এ সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
জামায়াতের আহত ব্যক্তিরা হলেন আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুর রহমান ও রাহাত খান। তাঁরা কুষ্টিয়ায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ছাড়া তুহিন, হাবিবর রহমান, মোতালেব, মোহাম্মদ আলি, ইউনুস মাওলানা, জিহাদ, ইউনুস আলী কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
বিএনপির আহত ব্যক্তিরা হলেন খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান, বাঁখই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক টিপু সুলতান, সুকুর শেখ, শরীফ ও আসাকুর রহমান। আহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী-সমর্থক।
তারা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড়শ বছর ধরে হোগলা চাপাইগাছি বাজারে গাজী কালু-চম্পাবতী মেলার আয়োজন করে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
১৭ মে মেলা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি। তারপরও ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও জুয়া খেলার অভিযোগ তুলে মেলা বন্ধের দাবি তোলেন জামায়াত ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আর প্রশাসনের অনুমতি না মিললেও বিএনপির সমর্থকেরা মেলা বসানোর চেষ্টা করেন।
এ নিয়ে গতকাল বিকেল থেকে এলাকায় উভয় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ উভয় পক্ষকে কড়া নজরদারিতে রাখে। তবু একপর্যায়ে রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ভিড় করেছেন। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাদের দেখতে ছুটে এসেছেন উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন।
জগন্নাথপুর ইউনিয়ন ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মেলায় অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও জুয়ার আসর বসানো হয়। সে জন্য প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। তবুও বিএনপি ও মেলা কমিটি মেলার আয়োজন করেছে। আমরা মেলার বিষয় জানতে গেলে প্রতিপক্ষরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। আমিসহ আমাদের অনেকেই আহত হয়েছেন। থানায় মামলা করা হবে।’
বিএনপির সমর্থক ও খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান বলেন, ‘জামায়াতের শত শত লোক আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। বিচারের আশায় থানায় মামলা করব।’
রাত ১০টায় চাপাইগাছি বাজারে সরেজমিন দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। মেলার মাঠের কয়েকটি দোকানে ভাঙচুরের ক্ষত।
এ সময় প্রত্যক্ষদর্শী ও বাজারের কলা ব্যবসায়ী নাদের শেখ বলেন, ‘শত বছর ধরে মেলা হয়ে আসছে। আজ বুধবার দেখলাম দুই পক্ষের দাবড়া-দাবড়ি।’
উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন বলেন, ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জামায়াতের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ করতে গেলে মেলা কমিটির লোকজন হামলা করেছেন। থানায় মামলা করা হবে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, মেলা বসানো নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন এলাকার পরিবেশ শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রিন্ট