মোঃ রনি আহমেদ রাজুঃ
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। সোমবার (৫ মে) প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করা কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এখন থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে আর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরাসরি দেখা করতে পারবেন না। তাদেরকে শুধুমাত্র ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য পাঠানোর অনুমতি থাকবে।
এই সিদ্ধান্তকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একটি বড় উৎস বন্ধের উদ্যোগ। চিকিৎসকদের কাছে ওষুধ কোম্পানির উপহার, ভ্রমণ স্পনসর বা আর্থিক প্রলোভন দেওয়ার সংস্কৃতি চিকিৎসাসেবার গুণমান ও নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছিল।
কমিশনের প্রতিবেদনে আরও সুপারিশ করা হয়েছে:
সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা
এমবিবিএস চিকিৎসক ছাড়া কেউ যেন অ্যান্টিবায়োটিক না দেন
ওষুধ, পরীক্ষার মূল্য ও চিকিৎসকের ফি নির্ধারণ করে দেওয়া
চিকিৎসকদেরকে উপহার বা নমুনা দেওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা
স্বাস্থ্যখাতে স্বাধীন ও স্থায়ী বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন গঠন
নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাবনা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে দিতে হবে, যেন কেউ অর্থাভাবে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয়। স্বাস্থ্যসেবাকে সকলের জন্য সহজলভ্য করতে উপজেলা পর্যায়ে সেকেন্ডারি সেবা এবং জেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত টারশিয়ারি সেবা চালুর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিশ্বমানের একটি আধুনিক হাসপাতাল স্থাপন করার সুপারিশ এসেছে, যাতে আঞ্চলিকভাবে জটিল ও উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান সম্ভব হয় এবং রাজধানীভিত্তিক চাপ কমে।
২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর গঠিত এই ১২ সদস্যের স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। প্রতিবেদনে চিকিৎসা খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন, ন্যায্যতা এবং জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে পারে। বিশেষত চিকিৎসকদের উপর ওষুধ কোম্পানির প্রভাব কমানো এবং স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া—এই দুটি পদক্ষেপই জনগণের জন্য বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়।
প্রিন্ট