ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ডাবলিনে গ্রেটার মৌলভীবাজার অ্যাসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ডের বার্ষিক সভা Logo নোয়াখালী চাটখিলে চাঁদা না পেয়ে প্রবাসীকে হত্যার হুমকি Logo খোকসায় ১ম হওয়া শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান ও সকল এ+ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা Logo সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী’র ৪ শত কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক Logo বেনাপোলে যুবদলের যৌথ কর্মীসভা Logo পাংশা সরকারী কলেজে জুলাই শহিদ দিবস পালিত Logo যশোরের কেশবপুরে সমাজসেবক বদরুন্নাহার রেশমা চিরনিদ্রায় শায়িত Logo ‘জুলাই শহীদ দিবস–২৫’ উপলক্ষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে স্মরণ সভা Logo কৃষি বিজ্ঞানী ড. আলী আফজাল ফুটবল টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে মহম্মদপুর Logo কুষ্টিয়া চাঁদা তোলা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

নরসিংদীর মাধবদীতে ১৮ দিনেও উদ্ধার হয়নি কিশোরী পরিবারে আর্তনাদ !

মোঃ আলম মৃধা:

 

নরসিংদীর মাধবদীতে ১৭ বছরের এক কিশোরী অপহরণের ঘটনায় পরিবার যখন দিশেহারা, তখন থানার ওসি নজরুল ইসলামের উদাসীনতা ও খারাপ ব্যবহারে ভুক্তভোগীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। অভিযোগ উঠেছে, ওসি শুরু থেকেই মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন এবং বাদীর পরিবারের সাথে দুর্ব্যবহার করেন।

 

ভুক্তভোগী কিশোরীর মা মোছা: আছমা বেগম জানান, তার মেয়ে নরসিংদী আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী, ২৪ মার্চ কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে অপহরণ হয়। গদাইরচর ইসলাম সিএনজি পাম্পের সামনে থেকে স্থানীয় বখাটে নাসির হোসেন ও তার সহযোগীরা তাকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

 

মেয়ের সন্ধান না পেয়ে আতঙ্কিত মা আছমা বেগম আত্মীয়স্বজনসহ থানায় গিয়ে মামলা দায়েরের চেষ্টা করলে ওসি নজরুল ইসলাম মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান। শুধু তাই নয়, থানায় উপস্থিত অ্যাডভোকেট রাসেলকে অপমানজনক ভাষায় অপদস্থ করেন তিনি। পরে অ্যাডভোকেট রাসেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ফাঁসি চেয়ে একটি পোস্ট দিলে সেটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

 

ঘটনার প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমনে তথ্য প্রকাশকারী সংস্থার নরসিংদী জেলা পরিচালকের হস্তক্ষেপে পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল হান্নান বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নিজে ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলে ওসিকে মামলা নিতে নির্দেশ দেন।

 

কিন্তু ওসি নজরুল ইসলাম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি মামলা নিলেও তাতে কোনো পদক্ষেপ নেবেন না। বাস্তবে তিনিও তার কথা রেখেছেন- ১৮ দিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কিশোরীর সন্ধান মেলেনি।

 

এদিকে, পুলিশ সুপার দ্বিতীয়বার বিষয়টি নজরে নিলে তিনি ওসিকে অপরাধীর আত্মীয়-স্বজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওসি সেই নির্দেশও কার্যকর করেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “ওসি নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত। তিনি মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না।” আড়াই হাজারের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর থানার ওসি ছিলেন তিনি।

 

ওই কিশোরীর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি এখন মেয়েকে জীবিত বা মৃত—যেভাবেই হোক ফেরত চাই। আমি প্রতিদিন কাঁদছি, পুলিশের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি, কিন্তু কেউ সাহায্য করছে না।”

 

এ বিষয়ে মাধবদী থানার ওসি মোঃ নজরুল ইসলাম ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “গত চার মাসে আমি কোনো মামলায় টাকা নিইনি। টাকা না পাওয়ায় মামলার গুরুত্ব দিচ্ছি না বিষয়টা সত্য নয়। মেয়েটিকে উদ্ধারে তদন্ত কর্মকর্তাকে সব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

 

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার( ক্রাইম এন্ড অবস) সুজন চন্দ্র সরকার মোবাইলে জানান, পুলিশ এবং ডিবির অভিযান অব্যাহত আছে, তবে ১৮ দিনেও মেয়েটি উদ্ধার হয়নি বিষয়টা সত্য।

 

তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। মামলা হওয়ার ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও না আছে উদ্ধার অভিযান, না আছে অপরাধীর পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি। স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরাধী এখনো স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন তাকে আড়াল করছে।

 

অপহরণ হওয়া কিশোরীর পরিবার আজ প্রশাসনের কাছে একটাই আবেদন জানাচ্ছেন—“আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিন। ন্যায়বিচার চাই।”


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ডাবলিনে গ্রেটার মৌলভীবাজার অ্যাসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ডের বার্ষিক সভা

error: Content is protected !!

নরসিংদীর মাধবদীতে ১৮ দিনেও উদ্ধার হয়নি কিশোরী পরিবারে আর্তনাদ !

আপডেট টাইম : ০৩:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
মোঃ আলম মৃধা, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি :

মোঃ আলম মৃধা:

 

নরসিংদীর মাধবদীতে ১৭ বছরের এক কিশোরী অপহরণের ঘটনায় পরিবার যখন দিশেহারা, তখন থানার ওসি নজরুল ইসলামের উদাসীনতা ও খারাপ ব্যবহারে ভুক্তভোগীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। অভিযোগ উঠেছে, ওসি শুরু থেকেই মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন এবং বাদীর পরিবারের সাথে দুর্ব্যবহার করেন।

 

ভুক্তভোগী কিশোরীর মা মোছা: আছমা বেগম জানান, তার মেয়ে নরসিংদী আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী, ২৪ মার্চ কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে অপহরণ হয়। গদাইরচর ইসলাম সিএনজি পাম্পের সামনে থেকে স্থানীয় বখাটে নাসির হোসেন ও তার সহযোগীরা তাকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

 

মেয়ের সন্ধান না পেয়ে আতঙ্কিত মা আছমা বেগম আত্মীয়স্বজনসহ থানায় গিয়ে মামলা দায়েরের চেষ্টা করলে ওসি নজরুল ইসলাম মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান। শুধু তাই নয়, থানায় উপস্থিত অ্যাডভোকেট রাসেলকে অপমানজনক ভাষায় অপদস্থ করেন তিনি। পরে অ্যাডভোকেট রাসেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ফাঁসি চেয়ে একটি পোস্ট দিলে সেটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

 

ঘটনার প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমনে তথ্য প্রকাশকারী সংস্থার নরসিংদী জেলা পরিচালকের হস্তক্ষেপে পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল হান্নান বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নিজে ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলে ওসিকে মামলা নিতে নির্দেশ দেন।

 

কিন্তু ওসি নজরুল ইসলাম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি মামলা নিলেও তাতে কোনো পদক্ষেপ নেবেন না। বাস্তবে তিনিও তার কথা রেখেছেন- ১৮ দিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কিশোরীর সন্ধান মেলেনি।

 

এদিকে, পুলিশ সুপার দ্বিতীয়বার বিষয়টি নজরে নিলে তিনি ওসিকে অপরাধীর আত্মীয়-স্বজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওসি সেই নির্দেশও কার্যকর করেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “ওসি নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত। তিনি মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না।” আড়াই হাজারের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর থানার ওসি ছিলেন তিনি।

 

ওই কিশোরীর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি এখন মেয়েকে জীবিত বা মৃত—যেভাবেই হোক ফেরত চাই। আমি প্রতিদিন কাঁদছি, পুলিশের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি, কিন্তু কেউ সাহায্য করছে না।”

 

এ বিষয়ে মাধবদী থানার ওসি মোঃ নজরুল ইসলাম ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “গত চার মাসে আমি কোনো মামলায় টাকা নিইনি। টাকা না পাওয়ায় মামলার গুরুত্ব দিচ্ছি না বিষয়টা সত্য নয়। মেয়েটিকে উদ্ধারে তদন্ত কর্মকর্তাকে সব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

 

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার( ক্রাইম এন্ড অবস) সুজন চন্দ্র সরকার মোবাইলে জানান, পুলিশ এবং ডিবির অভিযান অব্যাহত আছে, তবে ১৮ দিনেও মেয়েটি উদ্ধার হয়নি বিষয়টা সত্য।

 

তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। মামলা হওয়ার ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও না আছে উদ্ধার অভিযান, না আছে অপরাধীর পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি। স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরাধী এখনো স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন তাকে আড়াল করছে।

 

অপহরণ হওয়া কিশোরীর পরিবার আজ প্রশাসনের কাছে একটাই আবেদন জানাচ্ছেন—“আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিন। ন্যায়বিচার চাই।”


প্রিন্ট