রাশিদুল ইসলাম রাশেদঃ
ঢেমশি। যার ইংরেজি নাম Buck Wheat (বাক হুইট) এবং বৈজ্ঞানিক নাম ফাগোফাইরাম ইসকুলিনটাম। পোয়াকসেই পরিবারভুক্ত তিনকোনা দানাদার বহুমাত্রিক এই শস্যটি বহু পুষ্টিগুণে সম্বৃদ্ধ যা ভাত কিংবা আটা করে রুটি হিসেবে এবং ফুল আসার আগে শাক হিসেবে খাওয়া যায়। এটি শুধু খাদ্য নয়, অনেক রোগের মহৌষধ বলে জানিয়েছেন পুষ্টি বিজ্ঞানীরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে প্রায় সাড়ে তিন দশক পর নাটোরের লালপুরে পদ্মার চরে পরীক্ষামূলকভাবে আবার চাষ হচ্ছে বহুগুণে গুনান্বিত বিলুপ্তপ্রায় এই ফসলটি।
সরজমিনে দেখা যায়, পদ্মা নদীর চরে ধানের জমির পাশে ঢেমশির গাছে ফল ধরেছে। দোল খাচ্ছে বাতাসে। এসময় কথা হয় ঢেমশি চাষী মুনতাজ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এবছর ১৭ শতাংশ জমিতে ঢেমশি চাষ করেছি। ভালো ফুল এসেছে, আশা করছি ফলনও ভালো হবে। এতে প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমার ঢেমশি চাষ দেখে অনেকেই ঢেমশি চাষের জন্য আমার থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। আমি নিজেও আগামী মৌসুমে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে আবাদ করবো।
ঢেমশির পুষ্টি গুণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পুষ্টিবিদ অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ আব্দুজ জাহের বলেন, ঢেমশির চাল এবং আটাতে রয়েছে অতিমাত্রায় প্রোটিন, মিনারেল এবং ফাইবার যা আমাদের উত্তম খাদ্য। আরো রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ফসফরাস,পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, মাল্টিভিটামিন ও সেলেনিয়াম সহ নানা পুষ্টিকর উপাদান। তাই ঢেমসির চাল, আটা বা শাক খেলে আমাদের ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ, এ্যাজমা, হার্টের রোগের ঝুকি কমায় বা নিরাময় করে।
এছাড়া শিশুর ওজন, উচ্চতা, মেধাশক্তি, পেশি শক্তি, হিমোগ্লোবিন লেভেল বাড়ায়। ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং মন ও দেহ সুস্থ থাকে, হাঁড়ের ক্ষয়রোধ ও মজবুত করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, আশির দশকে এ অঞ্চলে ঢেমশি চাষ হতো। স্বল্প খরচ ও অল্প সময়ে উৎপাদিত পুষ্টিসমৃদ্ধ এ ফসলের আবাদ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এ বছর পদ্মার চরে কৃষক মুনতাজ আলীর ১৭ শতক জমিতে চাষ করা হচ্ছে। এটি স্বল্প জীবনকালের একটি বিশেষ ফসল। বছরের যে সময়ে জমি পতিত থাকে বা ধান আবাদ করা সম্ভব হয় না সেসব জমিতে সাথী ফসল হিসেবেও ঢেমশি আবাদ করা যায়।
আবার যেখানে ফসল হয় না সেখানেও এটি সহজে চাষাবাদ করা সম্ভব। এর জন্য একদিকে যেমন রাসায়নিক সার দরকার হয় না তেমনি পোকামাকড় খুব একটা আক্রমণ করে না বলে বালাইনাশকেরও খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। চর এলাকার মাটি এবং বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো আবাদ হয় এর এবং নিজেই আগাছা নষ্ট করে বলে আলাদা করে আগাছা দমন করতে হয় না। জৈবসার ব্যবহার করলে ফলন কিছুটা ভালো হয়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে প্রতি একর জমিতে ১২ কেজি বীজ বপন করে ৩ মাসেই একর প্রতি ১ টন পর্যন্ত ঢেমশি বীজ উৎপাদন ও ১২০ কেজি পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করা যায়। অন্য কৃষকরা শস্যটি চাষ করতে চাইলে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে।
প্রিন্ট