ঢাকা , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সদ্যজাত শিশুটি ছিল কন্যা, তাই ছুড়ে ফেলে হত্যা করেন পাষণ্ড নানা!

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
  • ২৩৪ বার পঠিত

শিশুটির মা দিপীকা মন্ডল।

সদ্যজাত শিশুটি ছিল কন্যা। আর এ কারণেই তাকে ব্রিজের ওপর থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। শিশুটির নানা কার্তিক মন্ডল কুল্ল্যা গুনাকরকাটী ব্রিজ থেকে নিচে বেতনার চরে ছুড়ে ফেলে দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।

একইসঙ্গে এর সঙ্গে জড়িত শিশুটির মা ও তার বাবাসহ অন্যদেরও পরিচয় পাওয়া গেছে।

সাংবাদিক ও গ্রামবাসীর দুদিনের অনুসন্ধানে এভাবেই বেরিয়ে এসেছে ব্রিজের ওপর থেকে সদ্যজাত শিশুটিকে ছুড়ে ফেলে হত্যার কাহিনি।

পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশাশুনি থানার ওসি জানিয়েছেন।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, কন্যাশিশুটির জন্মদাতা মায়ের নাম দিপীকা মন্ডল। তার স্বামীর নাম মৃন্ময় মন্ডল। আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ফকরাবাদ গ্রামে তাদের বাড়ি।

শিশুটির নানা কার্তিক মন্ডল ও তার নানি উর্মি মন্ডল একই এলাকার বাসিন্দা। কার্তিক মন্ডল পেশায় একজন তেল ব্যবসায়ী।

মঙ্গলবার ভোরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কার্তিক মন্ডল শিশুটিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার কথা বলে আশাশুনির কুল্ল্যা গুনাকরকাটী ব্রিজের ওপর থেকে নিচের চরে ছুড়ে ফেলে দেন। এতে তার মাথা থেতলে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। খবর পেয়ে কুল্ল্যা ইউপি চেয়ারম্যান মো. হারুন শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেন।

আশাশুনি থানা পুলিশ চিকিৎসার জন্য কন্যাশিশুটিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মারা যায় শিশুটি। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিপীকা মন্ডল অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আশাশুনির বুধহাটা জনসেবা স্বাস্থ্য ক্লিনিকের কেয়ারে ছিলেন। প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পর তাকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। আল্ট্রাসনোতে শিশুটি কন্যা এবং বিকলাঙ্গ বলে জানা যায়।

সোমবার সন্ধ্যায় সিজারের মাধ্যমে দিপীকা মন্ডল ওই কন্যা শিশুটির জন্ম দেন। রাতেই তার অবস্থা ভালো না থাকায় তাকে সাতক্ষীরায় চিকিৎসার জন্য আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দিপীকা জানান, তার পিতা কার্তিক মন্ডল শিশুটিকে নিয়ে যান। এরপর শিশুটি কোথায় তা তিনি জানেন না।

শিশুটির নানি উর্মি মন্ডল জানান, চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে তিনি তার স্বামীর হাতে তুলে দেন। তিনিও জানেন না শিশুটির ভাগ্যে কী ঘটেছে।

তবে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, দিপীকার স্বামী ও পরিবারের লোকজন আগেই বলেছিল মেয়ে শিশু হলে তাকে ঘরে রাখা হবে না। প্রয়োজনে দিপীকাকেও তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এজন্যই হয় তো শিশুটিকে ব্রিজের ওপর থেকে ফেলে দেওয়া হয় বলে ধারণা করছেন তারা।

ঘটনার পর থেকে কার্তিক মন্ডলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দিপীকা মন্ডল ও তার মা উর্মি মন্ডল বুধহাটা জনসেবা ক্লিনিকে এখনও রয়েছেন।

আশাশুনি থানার ওসি মো. গোলাম কবির জানান, তিনি নিজেও এসব তথ্য পেয়েছেন। ফেসবুকে দেখেছেন এবং বিভিন্ন সূত্র থেকেও খবরগুলো পেয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি জেনেছি কন্যা শিশু হওয়ায় তাকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। আমি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি যাচাই বাছাই করছি এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বাগাতিপাড়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে দোয়া প্রার্থী মোঃ সেলিম রেজা

error: Content is protected !!

সদ্যজাত শিশুটি ছিল কন্যা, তাই ছুড়ে ফেলে হত্যা করেন পাষণ্ড নানা!

আপডেট টাইম : ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

সদ্যজাত শিশুটি ছিল কন্যা। আর এ কারণেই তাকে ব্রিজের ওপর থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। শিশুটির নানা কার্তিক মন্ডল কুল্ল্যা গুনাকরকাটী ব্রিজ থেকে নিচে বেতনার চরে ছুড়ে ফেলে দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।

একইসঙ্গে এর সঙ্গে জড়িত শিশুটির মা ও তার বাবাসহ অন্যদেরও পরিচয় পাওয়া গেছে।

সাংবাদিক ও গ্রামবাসীর দুদিনের অনুসন্ধানে এভাবেই বেরিয়ে এসেছে ব্রিজের ওপর থেকে সদ্যজাত শিশুটিকে ছুড়ে ফেলে হত্যার কাহিনি।

পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশাশুনি থানার ওসি জানিয়েছেন।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, কন্যাশিশুটির জন্মদাতা মায়ের নাম দিপীকা মন্ডল। তার স্বামীর নাম মৃন্ময় মন্ডল। আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ফকরাবাদ গ্রামে তাদের বাড়ি।

শিশুটির নানা কার্তিক মন্ডল ও তার নানি উর্মি মন্ডল একই এলাকার বাসিন্দা। কার্তিক মন্ডল পেশায় একজন তেল ব্যবসায়ী।

মঙ্গলবার ভোরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কার্তিক মন্ডল শিশুটিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার কথা বলে আশাশুনির কুল্ল্যা গুনাকরকাটী ব্রিজের ওপর থেকে নিচের চরে ছুড়ে ফেলে দেন। এতে তার মাথা থেতলে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। খবর পেয়ে কুল্ল্যা ইউপি চেয়ারম্যান মো. হারুন শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেন।

আশাশুনি থানা পুলিশ চিকিৎসার জন্য কন্যাশিশুটিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মারা যায় শিশুটি। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিপীকা মন্ডল অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আশাশুনির বুধহাটা জনসেবা স্বাস্থ্য ক্লিনিকের কেয়ারে ছিলেন। প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পর তাকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। আল্ট্রাসনোতে শিশুটি কন্যা এবং বিকলাঙ্গ বলে জানা যায়।

সোমবার সন্ধ্যায় সিজারের মাধ্যমে দিপীকা মন্ডল ওই কন্যা শিশুটির জন্ম দেন। রাতেই তার অবস্থা ভালো না থাকায় তাকে সাতক্ষীরায় চিকিৎসার জন্য আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দিপীকা জানান, তার পিতা কার্তিক মন্ডল শিশুটিকে নিয়ে যান। এরপর শিশুটি কোথায় তা তিনি জানেন না।

শিশুটির নানি উর্মি মন্ডল জানান, চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে তিনি তার স্বামীর হাতে তুলে দেন। তিনিও জানেন না শিশুটির ভাগ্যে কী ঘটেছে।

তবে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, দিপীকার স্বামী ও পরিবারের লোকজন আগেই বলেছিল মেয়ে শিশু হলে তাকে ঘরে রাখা হবে না। প্রয়োজনে দিপীকাকেও তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এজন্যই হয় তো শিশুটিকে ব্রিজের ওপর থেকে ফেলে দেওয়া হয় বলে ধারণা করছেন তারা।

ঘটনার পর থেকে কার্তিক মন্ডলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দিপীকা মন্ডল ও তার মা উর্মি মন্ডল বুধহাটা জনসেবা ক্লিনিকে এখনও রয়েছেন।

আশাশুনি থানার ওসি মো. গোলাম কবির জানান, তিনি নিজেও এসব তথ্য পেয়েছেন। ফেসবুকে দেখেছেন এবং বিভিন্ন সূত্র থেকেও খবরগুলো পেয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি জেনেছি কন্যা শিশু হওয়ায় তাকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। আমি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি যাচাই বাছাই করছি এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।