ঢাকা , সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বোয়ালমারীতে শত্রুতার জেরে ১৬ লাখ টাকা পিঁয়াজের দানা বিষ প্রয়োগে নষ্ট

এস.এম রবিউল ইসলাম রুবেল, স্টাফ রিপোর্টার

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পূর্বশত্রুতার জের ধরে কৃষকদের লিজ নেয়া জমির সদ্য রোপণকৃত ১৬ লাখ টাকা মূল্যের পিঁয়াজের দানা নষ্ট করতে বিষ প্রয়োগে অভিযোগ উঠেছে জিতেন বৈরাগীর বিরুদ্ধে।

 

জানা যায়, উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের মোড়া গ্রামের বাসিন্দা অরুন টিকেদার, বকুল টিকেদার, দিলিপ টিকেদার, ও সুজন বৈরাগী মোড়ার মাঠে তাদের লিজ নেয়া খন্ড খন্ড জমিতে পেঁয়াজের দানা রোপন করেন। পূর্বশত্রুতার জেরে একই এলাকার মৃত মনোহর বৈরাগীর ছেলে জিতেন বৈরাগী গত বছরের (২ ডিসেম্বর) রাতে ওই পিঁয়াজের দানা খেতে বিষ প্রয়োগ করে বিনষ্ট করে। বিষ প্রয়োগের সময় খেতের মালিকগণ ওই খেত থেকে হাতেনাতে জিতেন বৈরাগীকে আটক করে।

 

এনিয়ে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের মোড়া গ্রামে সকল জনগণ ও সুশীল সমাজ মিলিত হয়ে একটি সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সালিশ বৈঠকে জিতেন বৈরাগী দানার খেতে বিষ প্রয়োগের কথা অকপটে স্বীকার করেন। এলাকার হিন্দু মুসলিম মিলে ৫০ জন সাক্ষরিত সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে জিতেন বৈরাগীকে ১৬ লাখ টাকার পরিবর্তে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। জিতেন বৈরাগী সে জরিমানার টাকা গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর দেয়া কথা ছিল। তবে সে কিছু দুষ্টু চক্রের পরামর্শে সে জরিমানার টাকা পরিশোধ করেননি। জিতেন বৈরাগীর সমর্থক মোড়া গ্রামের হাসেন মোল্লার ছেলে কামরুল মোল্লা, বাবুল মোল্লা, ঠান্ডু মোল্লা ও একই গ্রামের ওহাব মোল্লার ছেলে পলু মোল্লার নেতৃত্বে জরিমানার টাকা না দিয়ে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি লোকজন এনে মোড়া গ্রামের এক অংশে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বাড়ি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে ২০ জন আহত করে। এ হামলায় প্রায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরপর থেকে মামলার আসামী পক্ষের লোকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আসামী মো. সিরাজুল ইসলাম ঠান্ডুর স্ত্রী বাদী হয়ে চলতি বছরে ২৩ জানুয়ারি পাল্টা মামলা দায়ের করেন।

 

বকুল টিকাদার বলেন, ওবায়দুর নামে একজনের জমি আমরা লিজ নিয়ে ফসল উৎপাদন করে থাকি। সেই জমি জিতেন বৈরাগী নিজে চাষ করতে জমির মালিককে বেশি টাকা অফার করেন। সেই জমি আমরা ওই বেশি দামে লিজ নিয়ে পেঁয়াজের দানা আবাদ করি। ওই জমি জিতেন না নিতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ফসল নষ্ট করেছে। গ্রামের জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ গত বছর ৯ ডিসেম্বর সালিশ করে ১৬ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি মাত্র ৪ লাখ ৫০ টাকা ক্ষতিপূরণ ধরে। আমরা সেটা মেনে নিয়েছিলাম। তবে সে ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়ে বিবাদী অন্য লোকজন নিয়ে মোড়া গ্রামের এক অংশে হামলা ও বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে আবার প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। আমরা চাই আমাদের ক্ষতিপূরণ। এনিয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করিছি।

 

জিতেন বৈরাগী পালাতক ও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকার কারণে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এঘটনার পরে বাড়ি ঘর পোড়ানো, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ করায় কামরুলসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। এ আসামীরাও বর্তমানে পলাতক রয়েছে।

 

বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক মো. মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরীফ আব্দুর রশিদ বলেন, একই ঘটনায় দু’পক্ষের লোকজন পৃথক পৃথক তিনটি মামলা থানায় ও একটি আদালতে করেছে। এ মামলায় সিরাজুল ইসলাম ঠান্ডুর ছেলে রিয়াজ ও মামাতো ভাই সুমন নামের দুই জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি মামলার আসমীদের পুলিশ গ্রেফতারের প্রস্তুত নিচ্ছেন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

error: Content is protected !!

বোয়ালমারীতে শত্রুতার জেরে ১৬ লাখ টাকা পিঁয়াজের দানা বিষ প্রয়োগে নষ্ট

আপডেট টাইম : ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
এস.এম রবিউল ইসলাম রুবেল, স্টাফ রিপোর্টার :

এস.এম রবিউল ইসলাম রুবেল, স্টাফ রিপোর্টার

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পূর্বশত্রুতার জের ধরে কৃষকদের লিজ নেয়া জমির সদ্য রোপণকৃত ১৬ লাখ টাকা মূল্যের পিঁয়াজের দানা নষ্ট করতে বিষ প্রয়োগে অভিযোগ উঠেছে জিতেন বৈরাগীর বিরুদ্ধে।

 

জানা যায়, উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের মোড়া গ্রামের বাসিন্দা অরুন টিকেদার, বকুল টিকেদার, দিলিপ টিকেদার, ও সুজন বৈরাগী মোড়ার মাঠে তাদের লিজ নেয়া খন্ড খন্ড জমিতে পেঁয়াজের দানা রোপন করেন। পূর্বশত্রুতার জেরে একই এলাকার মৃত মনোহর বৈরাগীর ছেলে জিতেন বৈরাগী গত বছরের (২ ডিসেম্বর) রাতে ওই পিঁয়াজের দানা খেতে বিষ প্রয়োগ করে বিনষ্ট করে। বিষ প্রয়োগের সময় খেতের মালিকগণ ওই খেত থেকে হাতেনাতে জিতেন বৈরাগীকে আটক করে।

 

এনিয়ে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের মোড়া গ্রামে সকল জনগণ ও সুশীল সমাজ মিলিত হয়ে একটি সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সালিশ বৈঠকে জিতেন বৈরাগী দানার খেতে বিষ প্রয়োগের কথা অকপটে স্বীকার করেন। এলাকার হিন্দু মুসলিম মিলে ৫০ জন সাক্ষরিত সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে জিতেন বৈরাগীকে ১৬ লাখ টাকার পরিবর্তে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। জিতেন বৈরাগী সে জরিমানার টাকা গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর দেয়া কথা ছিল। তবে সে কিছু দুষ্টু চক্রের পরামর্শে সে জরিমানার টাকা পরিশোধ করেননি। জিতেন বৈরাগীর সমর্থক মোড়া গ্রামের হাসেন মোল্লার ছেলে কামরুল মোল্লা, বাবুল মোল্লা, ঠান্ডু মোল্লা ও একই গ্রামের ওহাব মোল্লার ছেলে পলু মোল্লার নেতৃত্বে জরিমানার টাকা না দিয়ে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি লোকজন এনে মোড়া গ্রামের এক অংশে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বাড়ি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে ২০ জন আহত করে। এ হামলায় প্রায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরপর থেকে মামলার আসামী পক্ষের লোকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আসামী মো. সিরাজুল ইসলাম ঠান্ডুর স্ত্রী বাদী হয়ে চলতি বছরে ২৩ জানুয়ারি পাল্টা মামলা দায়ের করেন।

 

বকুল টিকাদার বলেন, ওবায়দুর নামে একজনের জমি আমরা লিজ নিয়ে ফসল উৎপাদন করে থাকি। সেই জমি জিতেন বৈরাগী নিজে চাষ করতে জমির মালিককে বেশি টাকা অফার করেন। সেই জমি আমরা ওই বেশি দামে লিজ নিয়ে পেঁয়াজের দানা আবাদ করি। ওই জমি জিতেন না নিতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ফসল নষ্ট করেছে। গ্রামের জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ গত বছর ৯ ডিসেম্বর সালিশ করে ১৬ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি মাত্র ৪ লাখ ৫০ টাকা ক্ষতিপূরণ ধরে। আমরা সেটা মেনে নিয়েছিলাম। তবে সে ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়ে বিবাদী অন্য লোকজন নিয়ে মোড়া গ্রামের এক অংশে হামলা ও বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে আবার প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। আমরা চাই আমাদের ক্ষতিপূরণ। এনিয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করিছি।

 

জিতেন বৈরাগী পালাতক ও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকার কারণে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এঘটনার পরে বাড়ি ঘর পোড়ানো, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ করায় কামরুলসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। এ আসামীরাও বর্তমানে পলাতক রয়েছে।

 

বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক মো. মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরীফ আব্দুর রশিদ বলেন, একই ঘটনায় দু’পক্ষের লোকজন পৃথক পৃথক তিনটি মামলা থানায় ও একটি আদালতে করেছে। এ মামলায় সিরাজুল ইসলাম ঠান্ডুর ছেলে রিয়াজ ও মামাতো ভাই সুমন নামের দুই জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি মামলার আসমীদের পুলিশ গ্রেফতারের প্রস্তুত নিচ্ছেন।


প্রিন্ট