জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও সীমান্তে শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজ নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন পাহারা চৌকি স্থাপন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আর এসব চৌকি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমান্ত দৈর্ঘ্য চার হাজার ১৫৬ কিলোমিটার। ঠাকুরগাঁওয়ের সাথে ভারতের সীমান্ত দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৬ কিলোমিটার। এ জেলায় সর্বমোট বিওপি সংখ্যা ২৯টি। চলমান পরিস্থিতি ঘিরে প্রতিটি বিওপিতে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি ও পেট্রোলিং বাড়ানোর সাথে পাহারা জোরদার করেছে ঠাকুরগাঁও ৫০ ও দিনাজপুর ৪২ বিজিবি।
ঠাকুরগাঁও সীমান্ত ঘুরে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজ ভেতরেই পাহারা চৌকি বসিয়েছে বিএসএফ।
ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গীর রত্নাই সীমান্তের ৩৭৯ থেকে ৩৮০ নং পিলারের মাঝে শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজ দূরত্বের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তিনটি পাহারা চৌকি স্থাপন করেছে বিএসএফ। এছাড়াও বালিয়াডাঙ্গী ধনতলা সীমান্তেও শূন্যরেখার কাছাকাছি বেশ কিছু পাহারা চৌকি চোখে পড়েছে।
যদিও আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজ ভিতরে ফসল ফলানো ছাড়া কোনো স্থাপনা বা সীমান্ত দেয়াল স্থাপন করার সুযোগ নেই।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ফকিরভিটা বেলপুকুর গ্রামের মহাদেব কুমার সিংহ। গত ৯ সেপ্টেম্বর বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় তার শিশুপুত্র জয়ন্ত। সার্বিক বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সীমান্তে ভারতের এসব পাহারা চৌকি থেকে মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশে এসে মানুষ ও তাদের গরু-ছাগল ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। কখনও গুলি করে মেরে ফেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রামী জীবনযাপন করছে এসব সীমান্তবর্তী মানুষ।
কুমার সিংহ আরও জানান, স্বজনহারা কষ্ট, শঙ্কা ও ঝুঁকি নিয়েই বসবাস সীমান্ত লাগোয়া বাসিন্দাদের। সীমান্তে বসবাসকারী বেশিরভাগ পরিবারের কোনো না কোনো স্বজন সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছে। গত সাত মাসেই শুধু মাত্র ঠাকুরগাঁও সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছে দুইজন বাংলাদেশি। আহত হয়েছেন আরও তিনজন।
ঠাকুরগাঁও পাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সীমান্তের কৃষক রেজা ইসলাম বলেন, আমরা নিজেদের জায়গায় চাষাবাদ করতে পারি না। ওরা যখন তখন আমাদের ধাওয়া করে। গরু-ছাগল ধরে নিয়ে যায়। আর ওরা শূন্যরেখার কাছাকাছি পাহারা ঘর বানিয়ে বসে আছে।
ধনতলা সীমান্তের বাসিন্দা সহিদুর রহমান বলেন, কাঁটাতারের ভেতরে আমাদের দিকে ওরা ছোটো ছোটো ঘর বানিয়েছে। সেই ঘরগুলোতে ঢুকে থাকে। যখন তখন আমাদের এলাকায় ঢুকে যায়। আর আমার উপরে অত্যাচার করে। আমরা শান্তিতে নিজেদের এলাকায় বসবাস করতে চাই। আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই।
রন্তাই সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা ইরফান শুক্কুর শূন্যরেখার কাছেই নিজ জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, আমার জমি যেখানে শেষ হইছে, তার ১০ হাত কাছেই বিএসএফ পাহারা চৌকি বসাইছে। ১৫০ গজ দূরে বানানোর নিয়ম হয়তো আমাদের জন্যে। ওদের কখনও ১৫০ গজের নিয়ম বা শূন্যরেখার কোনো নিয়ম মানতে দেখিনি।
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজিম আহমেদ জানান, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ১৫০ গজের ভিতরে স্থাপনা থাকলে বিএসএফকে আপত্তি জানানো হবে।
ঠাকুরগাঁও বিজিবি সেক্টর কমান্ডার গোলাম রব্বানী বলেন, দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতের সাথে উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ঠাকুরগাঁও বিজিবি। পাহারা বাড়ানোর পাশাপাশি সীমান্ত লাগোয়া বাসিন্দাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিতে নিয়মিত উঠোন বৈঠকের আয়োজন করছে বিজিবি।
প্রিন্ট