মুন্সী সাদেকুর রহমান শাহীন, গোপালগঞ্জ ব্যুরো প্রধান
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্মের শিক্ষক না থাকায় দীর্ঘ ১০ বছর যাবত ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ের ইসলাম ধর্মীয় শিশু শিক্ষার্থীরা ।
এ বিষয়ে কোটালীপাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর বছরের পর বছর ধরে আবেদন করলেও অদৃশ্য কারণে এখন পর্যন্ত কোন সমাধান পায়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় এলাকার মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের ৫৫ নম্বর নারিকেল বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এবিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার ব্যুরো প্রধান। বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী রমজান, বাইজিদ, রিয়াজ, আরিয়ান, সোহান ও ঝুমুরের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের স্কুলে কোন ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষক না থাকার কারণে তারা ইসলাম ধর্মের ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা আরো বলে, মাঝে মাঝে প্রধান শিক্ষিকা ম্যাডাম রেভারানী ধর্ম ক্লাসে এসে ইসলাম ধর্মের বই আমাদের মত করে পড়তে বলেন। অন্যান্য হিন্দু শিক্ষকেরা ইসলাম ধর্ম পড়াতে না পারায় আমরা ইসলাম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
জানা গেছে প্রধান শিক্ষক রেভারানী বণিক সহ ছয় জন শিক্ষক রয়েছে, তারা প্রত্যেকেই হিন্দু ধর্মের। প্রধান শিক্ষিকা রেভারানী বনিক সমস্যাটি স্বীকার করে দৈনিক সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, আমি বিগত ১০ বছর যাবত এই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছি । বেশ কয়েকবার রেজুলেশন করে কোটালীপাড়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্যারের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে বিষয়টি জানালেও আজ অব্দি কোন প্রকার মুসলিম শিক্ষক আমাদের স্কুলে পোস্টিং দেয়নি ।
যে কারণে আমাদের স্কুলের বেশ কিছু সংখ্যক মুসলিম ছাত্র-ছাত্রী দশ বছর যাবত ইসলাম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমরা এখন নিরুপায় হয়ে পড়েছি, আপনাদের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের এই স্কুলটিতে ন্যূনতম একজন ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষক পোস্টিং দিলে কোমলমতি ছেলে-মেয়েরা ইসলাম শিক্ষা পেয়ে ভবিষ্যতে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করছি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ১০ বছরের মত আমরা এই স্কুলটিতে কোন ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষক দেখিনি। আমাদের শিশুরা এই স্কুল থেকে কোন প্রকার ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে পড়ালেখা শিখতে পারছে না। আর এ কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা ইসলাম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে দিনদিন নৈতিক অবক্ষয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই। ভবিষ্যতে আমাদের এলাকার শিশু শিক্ষার্থীরা যেন ইসলাম এবং নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে একজন সৎ ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে তার সুব্যবস্থা করার জন্য কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের একটি সূত্রে জানাগেছে কোটালীপাড়ার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন বিদ্যালয়ের উন্নয়নে খুব একটা আগ্ৰহী নন। তিনি শুধু টাকার বিনিময়ে চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষকদের নিজ এলাকা ও পছন্দের বিদ্যালয়ে বদলি বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়াও শিক্ষদের বিভিন্ন ভুলত্রুটি ধরে উৎকোচ আদায়ের উদ্দেশ্যে বেশি সময় পার করেন। এভাবে তিনি তার আয়বহির্ভূত আয় দিয়ে গাড়ি, বাড়ি সহ ব্যাংকে প্রচুর টাকা জমিয়েছেন।
এ সকল অভিযোগের বিষয়ে কোটালীপাড়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন এর সাথে অফিসে গিয়ে ও ০১৭১৬০২০৪১৭ নম্বরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রিন্ট