আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
দুই মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরেছে দুই বন্ধু। আহত অপর একজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেভ জানা যায়,এক মোটরসাইকেলে ছিল ৩ জন আরেকটিতে ২জন। বাড়িতে ফেরার পথে আখ পরিবহনের একটি ট্রাক্টর এর সাইড কেটে পার হওয়ার সময় সামনে থেকে আসা ট্রাকের চাপায় পড়ে মারা যায়, এক মোটরসাইকেলে থাকা ৩বন্ধুর মধ্যে ২জন-ফয়সাল আহমেদ (১৬) ও নাসির উদ্দীন (২১)। প্রাণে বেঁচে যায় হামজা আহমেদ দিপু(১৮)। আরেক মোটরসাইকেলে পেছনে থাকা দুই বন্ধু-পিপুল হোসেন(২২) ও আব্দুল্লাহ মাহমুদ (২১) মূমূর্ষ অবস্থায় আহত ফয়সাল আহমেদ ও নাসির উদ্দীনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষনা করেন। আহত অপরজন হামজা আহমেদ দিপু চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে।
সোমবার (১৩জানুয়ারী) রাত সাড়ে ৭ টায় বানেশ্বর-ঈশ্বরদী আঞ্চলিক সড়কের রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের বিনোদপুর সাজির বটতলায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাঘা থানা পুলিশ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ময়না তদন্তের পর মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে গ্রামের বাড়িতে আনা হয় তাদের মরদেহ। সকাল সাড়ে ১০টায় মোহরকয়া-মোমিনপুর চকসের পাড়া গোরস্থানে তাদের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।
বাবর আলীর ছেলে নিহত ফয়সাল আহমেদ ৯বম শ্রেণীতে লেখাপড়া করতো। মানিক হোসেনের ছেলে নাসির উদ্দীন ছিলেন সাংসারিক। হামজা আহমেদ দিপু আইএ লেখাপড়া করে। তারা সকলেই নাটেরের লালপুর উপজেলার মোমিনপুর বাকনা গ্রামের বাসিন্দা। অকাল মৃত্যুর খবরে নেমে আসে দুই পরিবারের স্বজনদের আহাজারি। তাদের আর্তনাতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি স্থানীয়রাও।
মঙ্গলবার(১৪ জানুয়ারি) নিহতদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়,নিহত নাসিরের স্ত্রী আসমা বেগমের কোলে পাঁচ মাসের ফুটফুটে পুত্র সন্তান। অল্প বয়সে স্বামী হারানোর ব্যথায় কাতর আসমা বেগম কোলের সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে বাকরুদ্ধ। কথা বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছেন। সংসার শুরুর দুই বছরের মাথায় জন্ম নেয় তার পাঁচ মাসের সন্তান।
মা চুনু বেগম বুক চাপড়িয়ে কান্না করে বলছিলেন এখন আমাদের দেখবে কে? পিতা মানিক জানান,লালপুর বাজারে ঘাষ কিনে বাড়িতে ফিরে তিনি ছেলে মুত্যুর খবর জানতে পেরেছেন। এর আগে তার ছেলেকে বাড়িতে রেখে লালপুর বাজারে গিয়েছেলেন।
নিহত ফয়সাল আহমেদ এর বাড়িতেও ছিল বাবা-মা আর স্বজনদের আর্তনাথ। বাবর আলী ও মা বিলকিস বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রলাপ বকে বলছিলেন, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার আশা ছিল তাদের। কিন্তু সব আশাই যেন নিমিষের মুত্যুতে শেষ হয়ে গেল তাদের।
বেঁচে থাকা হামজা আহমেদ দিপু জানান, তারা বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ এলাকা থেকে এক মোটরসাইকেলে তিনজন বাড়িতে ফিরছিলেন। তিনি ছিলেন মোটর সাইকেলের পেছনে। মোটর সাইকেল চালাচ্ছিল নাসির উদ্দীন। পথিমধ্যে আখ পরিবহনের একটি ট্রাক্টর এর সাইড কেটে পর হওয়ার সময় সামনে থেকে অপর একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ে যান। পরে কি হযেছে না হয়েছে তা বলতে পারবো না। তিনি চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।
পেছনের মোটরসাইকেলে থাকা পিপুল হোসেন জানান,তার মোটরসাইকেল ছিল ৫মিনিটের রাস্তার ব্যবধানে। সামনে গিয়ে দেখেন, মোটরসাইকেল চুর্ণ বিচুর্ণ আর তারা অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতারের জরুরি বিভাগে নেন। সেখানকার চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষনা করেন।
উদ্দেশ্য বিহিন ঘুরতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। যদিও মীরগঞ্জ এলাকায় রেশম বীজাগার ছাড়া দর্শনীয় কোন স্থান নেই। তবে মাদক প্রবন এলাকা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। এমন প্রশ্নে তারা কোনো নেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা? তবে,পরিবারের দাবি তারা কেউ তা জানেন না।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,রাত সাড়ে ৭ টায় হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শুনতে পান। পরে ঘটনাস্থল এলাকায় গিয়ে দেখেন, এক মোটরসাইকেলে থাকা তিনজন আরোহী রাস্তায় পড়ে আছে। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তবে দৃর্ঘটনায় জড়িত কোন যানবাহনকে তারা আটকাতে পারেননি। তাদের ধারনা, এমনও হতে পারে চালকরা বুঝতে পারেননি অথবা বোঝার পর সটকে পড়েছেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বাঘা থানার উপ পরিদর্শক(এস আই) মাহমুদুল ইমরান। তিনি জানান, আমরা যাওয়ার আগেই স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। ট্রাক ও ট্রাক্টরটির হদিস পাওয়া যায়নি। পরে ভাঙা চোরা মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। নিহতের ঘটনায ইউডি মামলা হয়েছে।
প্রিন্ট