আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বরে পাকহানাদার বাহিনীর টহল ট্রেনে অ্যামবুশের দায়িত্ব পড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলীর। গেরিলা হামলায় জনবসতি শূণ্যে নাবির পাড়াকে নির্ধারণ করেন। কিন্তু ট্রেনটি অদূরে আবদুলপুর রেলওয়ে জংশনে এসে থেমে যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আজাদ আলী সহযোদ্ধাদের নিয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করছিলেন। কথা ছিল, টহল ট্রেন অ্যামবুশস্থলে এলে তাঁরা বিস্ফোরণ ঘটাবেন। কিন্তু তাঁর এক সহযোদ্ধার ভুলে ট্রেন আসার আগেই ছয়টি মাইন একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের পর আজাদ আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানের দিকে চলে যান। এই বিস্ফোরণে তাঁর বাঁ হাতের কবজি উড়ে যায়। স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের পর খেতাব পাপ্ত হন বীর প্রতীক হিসেবে। ( খেতাবের সনদ নম্বর ৩৬৬)।
সোমবার (১৩ জানুয়ারী) রাত ৯ ঢাকার সিএমইউচ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত আজাদ আলী। ইন্নালিল্লাহি—রাজিউন। তিনি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার কুশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। মৃত আরজান আলী প্রামাণিক ও মা রাজিয়া খাতুন দম্পতির ছেলে বীর প্রতীক আজাদ আলী। আদি নিবাস কুশবাড়িয়া গ্রামে হলেও ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএস বসবাস করতেন।
তাঁর স্ত্রী আজাদ সুলতানাসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে,তার জানাযার নামাজ বসবারত এলাকায় হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর ভাতিজা আড়ানী পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক।
চাচার উদ্ধৃতি দিয়ে তোজাম্মেল হক জানান, নাটোরের অন্তর্গত নাবিরপাড়া, ঈশ্বরদী-রাজশাহী রেলপথ। নাবিরপাড়ার কাছেই আবদুলপুর রেলওয়ে জংশন। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্থানি সেনাবাহিনী রেলপথ সচল রাখার জন্য ট্রেনে নিয়মিত টহল দিত।
১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বরে আজাদ আলীর নেতৃত্বাধীন গেরিলাদলের ওপর ওই টহল ট্রেনে অ্যামবুশের দায়িত্ব পড়ে। তাঁরা রেকি করে নির্ধারণ করেন নাবিরপাড়াকে। তখন সেখানে জনবসতি ছিল না। দুই পাশে ছিল বিস্তৃত আখখেত।
সেদিন লাইনের নিচে বিস্ফোরক স্থাপনের পর তাঁরা যখন মাইনের সঙ্গে যুক্ত তার আড়াল করছিলেন, তখন দূরে ট্রেনের আলো দেখতে পায়। ট্রেনটি অদূরে আবদুলপুর রেলওয়ে জংশনে এসে থেমে যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আজাদ আলী সহযোদ্ধাদের নিয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করছিলেন। কথা ছিল, টহল ট্রেন অ্যামবুশস্থলে এলে তাঁরা বিস্ফোরণ ঘটাবেন। কিন্তু তাঁর এক সহযোদ্ধার ভুলে ট্রেন আসার আগেই ছয়টি মাইন একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের পর আজাদ আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানের দিকে চলে যান। এই বিস্ফোরণে তাঁর বাঁ হাতের কবজি উড়ে যায়।
বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আবদুলপুরে অবস্থানরত টহল ট্রেনটি দ্রুত নাবিরপাড়ার দিকে আসার সময় মাইন বিস্ফোরণে সৃষ্ট গর্তে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগি প্রচন্ড শব্দে খাদের ভেতর উল্টে পড়ে। এতে ১৬ জন পাকিস্থানী সেনা হতাহত হয়।
বাঘার স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি জানান, বাঘার মাদ্রাসায় অবস্থান নিয়ে পাশের ঐতিহাসিক তেঁতুল তলায় পাকিস্থানীদের দোসর রাজাকাররা বাঙ্কার করেছিল। সেই সময় তিনিসহ তাদের আস্তায় হামলায় নের্তৃত্ব দিয়েছেন বীরপ্রতীক আজাদ আলী।
আজাদ আলী ১৯৭১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান শ্রেণীর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। মে মাসে ভারতে যান। জুনের শেষে তাঁকে মুক্তিবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে চাকুলিয়ায় প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা সাব-সেক্টর এলাকায় গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশন করেন তিনি।
প্রিন্ট