ঢাকা , সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo পার্বতীপুরে মাদ্রসার ৪ একর জায়গা জবরদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo শার্শায় শিয়াল মারার ফাঁদে কৃষকের মৃত্যু    Logo তানোরে একতা যুব সংঘের নিজস্ব অর্থায়নে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন Logo ফরিদপুর পাসপোর্ট অফিসে ৩ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন দালাল আটক Logo দুর্নীতিবাজ-মাফিয়াদের রাজনীতি চাই না”— ঝালকাঠিতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ঘোষণা Logo কুষ্টিয়ায় পাউবোর কোটি টাকার তেল চুরির অভিযোগে দুদকের অভিযান Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ছেলের বউকে ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুর গ্রেফতার Logo ঠাকুরগাঁওয়ে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ৩ বিষয়ে ফেল Logo কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অস্ত্র-মাদকসহ আটক ১ Logo কুষ্টিয়া পৌরসভার গেটে আবর্জনা ফেলে কর্মবিরতিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি ৫ বছরে

আনিসুর রহমান, বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা খাদ্যগুদাম গত পাঁচ বছরে কৃষকের কাছ থেকে এক ছটাক ধানও কিনতে পারেনি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা খাদ্যগুদাম। প্রতি বছরই বোরো ও আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দিলেও তার সিকিভাগও পূরণ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে বছরের পর বছর ধান সংগ্রহ না করেই চলছে দপ্তরের কার্যক্রম।

 

কৃষকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারদর বেশি হওয়ায় গুদামে ধান দিচ্ছেন না তারা। এ ছাড়া, অনলাইনে নিবন্ধন, আর্দ্রতা যাচাই, পরিবহন খরচ ও ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনসহ নানা জটিলতার কারণে গুদামে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই কৃষকের।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত উপজেলা খাদ্যগুদামে কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৬ টন। নির্ধারিত তিন মাস সময়ে ৩০ টাকা কেজি দরে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। একই অর্থবছরে ৭ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩২ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহ অভিযান করেছিল উপজেলা খাদ্য দপ্তর। লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ৭৩ টন। কিন্তু সে সময়ও খাদ্যগুদামের সংগ্রহের পরিমাণ ছিল শূন্য।

এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত ১১ নভেম্বর থেকে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। ৩৩ টাকা কেজি দরে এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬১ টন। তবে, প্রায় দুই মাস শেষ হলেও এখনো ধান সংগ্রহের পরিমাণ শূন্য। তাই, চলতি মৌসুমেও খাদ্য অধিদপ্তরের ধান সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাগাতিপাড়া উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২০ হাজার ৮৪১ টন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২২ হাজার ৭৬ টন এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৪ হাজার ৫৬ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। উপজেলায় চাহিদার অধিক পরিমাণ ধান উৎপাদন হলেও প্রতি বছরই ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে উপজেলা খাদ্যগুদাম।

 

উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের হাটগোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক আ. হান্নান (৫০) বলেন, সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি, টাকাও পাওয়া যায় নগদ। তাই, সরকারি গুদামে ধান না দিয়ে বাইরেই বিক্রি করছি। গুদামে ধান দিতে গেলে একদিকে যেমন পরিবহন খরচ বেশি, আবার টাকাও নগদ পাওয়া যায় না।

সদর ইউনিয়নের যোগীপাড়া এলাকার আলাল উদ্দিন (৫৮) জানান, কম দাম ও আর্দ্রতাসহ বিভিন্ন অজুহাতের কারণে তারা গুদামে যেতে পারেন না। আর ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা গুদামের চেয়ে বেশি দামে বাড়ি থেকেই ধান নিয়ে যান। স্থানীয় বাজারের সঙ্গে মিল রেখে সরকারি দাম নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।

উপজেলার মালঞ্চি বাজারের ধান ব্যবসায়ী মজনু মিয়া (৪৫) বলেন, সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির আগ্রহ নেই। কৃষকরা যেখানে দাম বেশি পাবেন সেখানেই ধান বিক্রি করবেন।”


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

পার্বতীপুরে মাদ্রসার ৪ একর জায়গা জবরদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি ৫ বছরে

আপডেট টাইম : ০৩:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫
আনিসুর রহমান, বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি :

আনিসুর রহমান, বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা খাদ্যগুদাম গত পাঁচ বছরে কৃষকের কাছ থেকে এক ছটাক ধানও কিনতে পারেনি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা খাদ্যগুদাম। প্রতি বছরই বোরো ও আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দিলেও তার সিকিভাগও পূরণ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে বছরের পর বছর ধান সংগ্রহ না করেই চলছে দপ্তরের কার্যক্রম।

 

কৃষকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারদর বেশি হওয়ায় গুদামে ধান দিচ্ছেন না তারা। এ ছাড়া, অনলাইনে নিবন্ধন, আর্দ্রতা যাচাই, পরিবহন খরচ ও ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনসহ নানা জটিলতার কারণে গুদামে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই কৃষকের।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত উপজেলা খাদ্যগুদামে কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৬ টন। নির্ধারিত তিন মাস সময়ে ৩০ টাকা কেজি দরে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। একই অর্থবছরে ৭ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩২ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহ অভিযান করেছিল উপজেলা খাদ্য দপ্তর। লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ৭৩ টন। কিন্তু সে সময়ও খাদ্যগুদামের সংগ্রহের পরিমাণ ছিল শূন্য।

এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত ১১ নভেম্বর থেকে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। ৩৩ টাকা কেজি দরে এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬১ টন। তবে, প্রায় দুই মাস শেষ হলেও এখনো ধান সংগ্রহের পরিমাণ শূন্য। তাই, চলতি মৌসুমেও খাদ্য অধিদপ্তরের ধান সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাগাতিপাড়া উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২০ হাজার ৮৪১ টন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২২ হাজার ৭৬ টন এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৪ হাজার ৫৬ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। উপজেলায় চাহিদার অধিক পরিমাণ ধান উৎপাদন হলেও প্রতি বছরই ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে উপজেলা খাদ্যগুদাম।

 

উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের হাটগোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক আ. হান্নান (৫০) বলেন, সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি, টাকাও পাওয়া যায় নগদ। তাই, সরকারি গুদামে ধান না দিয়ে বাইরেই বিক্রি করছি। গুদামে ধান দিতে গেলে একদিকে যেমন পরিবহন খরচ বেশি, আবার টাকাও নগদ পাওয়া যায় না।

সদর ইউনিয়নের যোগীপাড়া এলাকার আলাল উদ্দিন (৫৮) জানান, কম দাম ও আর্দ্রতাসহ বিভিন্ন অজুহাতের কারণে তারা গুদামে যেতে পারেন না। আর ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা গুদামের চেয়ে বেশি দামে বাড়ি থেকেই ধান নিয়ে যান। স্থানীয় বাজারের সঙ্গে মিল রেখে সরকারি দাম নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।

উপজেলার মালঞ্চি বাজারের ধান ব্যবসায়ী মজনু মিয়া (৪৫) বলেন, সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির আগ্রহ নেই। কৃষকরা যেখানে দাম বেশি পাবেন সেখানেই ধান বিক্রি করবেন।”


প্রিন্ট