ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভায় মহিলা লীগ নেত্রী, দিলেন বক্তব্যও Logo মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রোগী কর্তৃক অগ্নিসংযোগ ও অফিসের আসবাবপত্র ভাংচুর Logo সদরপুরে হেরোইনসহ যুবক আটক Logo নাটোরের বড়াইগ্রামে শয়নকক্ষ থেকে যুবদল নেতার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার Logo মধুখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সেই ভ্যানের দুই যাত্রীর মৃত্যু Logo ক্লিন ইমেজের প্রার্থীর খোঁজে বিএনপি রাজশাহী-১ আলোচনায় যারা Logo দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানায় ওপেন হাউজ-ডে অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সদরপুর উপজেলার চর বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন কমিটি গঠন Logo বসতভিটায় মিন্টুর শখের বাগান Logo ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের গ্রেপ্তার এবং গাজা গণহত্যায় বন্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

টুঙ্গিপাড়ায় মধুমতি ডেইরি ফার্মের মালিকের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

মুন্সী সাদেকুর রহমান শাহিন, গোপালগঞ্জ ব্যুরো প্রধান

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মধুমতি ডেইরি ফার্মের মালিক দিলিপি কুমার হাজরার বিরুদ্ধে ১নং খাস খতিয়ানের সরকারি যায়গা ও একাধিক নিরিহ মানুষের কৃষি জমি জবরদখল সহ নদী দূষণের অভিযোগ উঠেছে।

 

ঘটনাটি ঘটেছে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের লেবুতলা গ্ৰামে।

 

এবিষয়ে সরজমিনে লেবুতলা গ্ৰামে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানায়, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে দিলিপ কুমার প্রচুর পরিমান নদীর চর দখল করছে। গরুর খামারের বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে মধুমতি নদীতে ফেলে নদী দূষণ করছে। কেউ প্রতিবাদ করলে মামলা-হামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। কয়েকদিন ধরে রাতের আঁধারে ১নং খাস খতিয়ানে জমি দখলের উদ্দেশ্যে বালু ভরাট করছে।

 

এবিষয়ে সুদাস চন্দ্র মন্ডল নামের এক ভুক্তভোগী গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে টুঙ্গিপাড়া আমলকী আদালতে ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইনে মামলা দায়ের করেছে। মামলা নম্বর- ৫৯৯/২৪। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

 

একাধিক ভুক্তভোগীদের মৌখিক অভিযোগ ও মামলার বর্ননা থেকে জানা যায়, ভূমিদস্যু দিলিপি কুমার হাজরা টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী গ্ৰামের মৃত চিত্ত রঞ্জন হাজরার ছেলে। সে এলাকার প্রভাবশালী ও আওয়ামীলীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে ছোট ডুমুরিয়া মৌজার লেবুতলা গ্ৰামে সামান্য কিছু যায়গা ক্রয় করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন কৌশলে এলাকার বেশ কিছু নিরিহ মানুষের কৃষি জমি নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে। পাশাপাশি মধুমতি নদী থেকে যেগে ওঠা চর স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের ম্যানেজ করে তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে দখল করে নেয়। ওই সময়ে লেবুতলা গ্ৰামের মৃত হুমায়ূন কবিরের ৫০ শতাংশ, শ্যামল ঘরামী ও সমর ঘরামীর ৩২শতাংশ, নিজামুল হক মোল্লার ৪০ শতাংশ, সুদাস চন্দ্র মন্ডলের ৯শতাংশ সহ এলাকার দূর্বল প্রকৃতির বেশকিছু মানুষের কৃষি জমি দখল করেন প্রভাবশালী দিলিপ কুমার হাজরা।

 

তৎকালীন সময়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও প্রতিকার পাইনি জমির প্রকৃত মালিকগণ। এরপর ২০০৬ সালে মধুমতি ডেইরি ফার্ম নামের গরুর খামার স্থাপন করেন দিলিপ কুমার। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেন। পুকুরের পাড়ে রোপন করেন বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ।অন্যান্য যায়গায় সবজি আবাদ করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন। এছাড়াও খামার স্থাপনের শুরু থেকে মধুমতি ডেইরি ফার্মের বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে মধুমতি নদীতে ফেলে নদী দূষণ করে আসছেন। ভূমিদস্যু দিলিপি হাজরা দীর্ঘ বছর বৈধ অবৈধ জায়গা মিলিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও আওয়ামী নেতাদের ভয়ে এতো দিন কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।

 

ভুক্তভোগী হেলেনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমার মৃত স্বামীর ক্রয়কৃত একবিঘা যায়গা তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে দখলে রেখেছে দিলিপ কুমার। গ্ৰামবাসীরকাছে বিচার চেয়েও ন্যায় বিচার পায়নি। এই এলাকাটিতে পুরো হিন্দু বসতি থাকায় আমরা একঘর মুসলিম নিরুপায় হয়ে পড়েছি।

 

আরেক ভুক্তভোগী শ্যামল ঘরামী জানান, গ্ৰামবাসীর বিচার সালিশে একাধিক বার তাঁদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ১০ বছরেও ফেরত দেয়নি দিলিপ কুমার।

 

মামলার বাদী সুদাস মন্ডল জানান, ভূমিদস্যু দিলিপি কুমার টাকার বিনিময়ে এলাকার লাঠিয়াল বাহিনী ব্যবহার করে জমির প্রকৃত মালিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। আমাকেও মামলা তুলে নিতে লোক মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করেছে।

এসকল অভিযোগের বিষয়ে দিলিপ কুমার হাজরা দৈনিক সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, আমি কারো যায়গা অবৈধভাবে দখল করিনি। একটি কুচক্রী মহল আমার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এলাকার সুদাস মন্ডল নামের এক খারাপ ব্যক্তি ইতিমধ্যে আমার নামে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তিনি তার খামারের বর্জ্য মধুমতি নদীতে ফেলানোর কথা শিকার করে বলেন, খুব দ্রুতই বিকল্প স্থানে বর্জ্য ফেলানোর ব্যবস্থা করা হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভায় মহিলা লীগ নেত্রী, দিলেন বক্তব্যও

error: Content is protected !!

টুঙ্গিপাড়ায় মধুমতি ডেইরি ফার্মের মালিকের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

আপডেট টাইম : ১০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
মুন্সী সাদেকুর রহমান শাহিন, গোপালগঞ্জ ব্যুরো প্রধান :

মুন্সী সাদেকুর রহমান শাহিন, গোপালগঞ্জ ব্যুরো প্রধান

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মধুমতি ডেইরি ফার্মের মালিক দিলিপি কুমার হাজরার বিরুদ্ধে ১নং খাস খতিয়ানের সরকারি যায়গা ও একাধিক নিরিহ মানুষের কৃষি জমি জবরদখল সহ নদী দূষণের অভিযোগ উঠেছে।

 

ঘটনাটি ঘটেছে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের লেবুতলা গ্ৰামে।

 

এবিষয়ে সরজমিনে লেবুতলা গ্ৰামে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানায়, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে দিলিপ কুমার প্রচুর পরিমান নদীর চর দখল করছে। গরুর খামারের বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে মধুমতি নদীতে ফেলে নদী দূষণ করছে। কেউ প্রতিবাদ করলে মামলা-হামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। কয়েকদিন ধরে রাতের আঁধারে ১নং খাস খতিয়ানে জমি দখলের উদ্দেশ্যে বালু ভরাট করছে।

 

এবিষয়ে সুদাস চন্দ্র মন্ডল নামের এক ভুক্তভোগী গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে টুঙ্গিপাড়া আমলকী আদালতে ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইনে মামলা দায়ের করেছে। মামলা নম্বর- ৫৯৯/২৪। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

 

একাধিক ভুক্তভোগীদের মৌখিক অভিযোগ ও মামলার বর্ননা থেকে জানা যায়, ভূমিদস্যু দিলিপি কুমার হাজরা টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী গ্ৰামের মৃত চিত্ত রঞ্জন হাজরার ছেলে। সে এলাকার প্রভাবশালী ও আওয়ামীলীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে ছোট ডুমুরিয়া মৌজার লেবুতলা গ্ৰামে সামান্য কিছু যায়গা ক্রয় করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন কৌশলে এলাকার বেশ কিছু নিরিহ মানুষের কৃষি জমি নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে। পাশাপাশি মধুমতি নদী থেকে যেগে ওঠা চর স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের ম্যানেজ করে তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে দখল করে নেয়। ওই সময়ে লেবুতলা গ্ৰামের মৃত হুমায়ূন কবিরের ৫০ শতাংশ, শ্যামল ঘরামী ও সমর ঘরামীর ৩২শতাংশ, নিজামুল হক মোল্লার ৪০ শতাংশ, সুদাস চন্দ্র মন্ডলের ৯শতাংশ সহ এলাকার দূর্বল প্রকৃতির বেশকিছু মানুষের কৃষি জমি দখল করেন প্রভাবশালী দিলিপ কুমার হাজরা।

 

তৎকালীন সময়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও প্রতিকার পাইনি জমির প্রকৃত মালিকগণ। এরপর ২০০৬ সালে মধুমতি ডেইরি ফার্ম নামের গরুর খামার স্থাপন করেন দিলিপ কুমার। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেন। পুকুরের পাড়ে রোপন করেন বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ।অন্যান্য যায়গায় সবজি আবাদ করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন। এছাড়াও খামার স্থাপনের শুরু থেকে মধুমতি ডেইরি ফার্মের বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে মধুমতি নদীতে ফেলে নদী দূষণ করে আসছেন। ভূমিদস্যু দিলিপি হাজরা দীর্ঘ বছর বৈধ অবৈধ জায়গা মিলিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও আওয়ামী নেতাদের ভয়ে এতো দিন কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।

 

ভুক্তভোগী হেলেনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমার মৃত স্বামীর ক্রয়কৃত একবিঘা যায়গা তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে দখলে রেখেছে দিলিপ কুমার। গ্ৰামবাসীরকাছে বিচার চেয়েও ন্যায় বিচার পায়নি। এই এলাকাটিতে পুরো হিন্দু বসতি থাকায় আমরা একঘর মুসলিম নিরুপায় হয়ে পড়েছি।

 

আরেক ভুক্তভোগী শ্যামল ঘরামী জানান, গ্ৰামবাসীর বিচার সালিশে একাধিক বার তাঁদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ১০ বছরেও ফেরত দেয়নি দিলিপ কুমার।

 

মামলার বাদী সুদাস মন্ডল জানান, ভূমিদস্যু দিলিপি কুমার টাকার বিনিময়ে এলাকার লাঠিয়াল বাহিনী ব্যবহার করে জমির প্রকৃত মালিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। আমাকেও মামলা তুলে নিতে লোক মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করেছে।

এসকল অভিযোগের বিষয়ে দিলিপ কুমার হাজরা দৈনিক সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, আমি কারো যায়গা অবৈধভাবে দখল করিনি। একটি কুচক্রী মহল আমার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এলাকার সুদাস মন্ডল নামের এক খারাপ ব্যক্তি ইতিমধ্যে আমার নামে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তিনি তার খামারের বর্জ্য মধুমতি নদীতে ফেলানোর কথা শিকার করে বলেন, খুব দ্রুতই বিকল্প স্থানে বর্জ্য ফেলানোর ব্যবস্থা করা হবে।


প্রিন্ট