ঝালকাঠির নলছিটির কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই এলাকায় দুটি স্কুলের পাশে গড়ে উঠেছে একটি অবৈধ ইটভাটা। এতে ধোঁয়ায় ধূসর তো হচ্ছেই, স্কুল ঘেঁষে বেপোরোয়া শব্দে চলা ট্রলির কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, ইটভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কিছুই করতে পারছেন না। সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরেও কোন প্রতিকার মেলেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলটির পাশ ঘেঁষে অবস্থিত ইটভাটায় আগুন জ্বলে এবং ইট পোড়ানোর কাজ চলছে। মাটি, খড়ি ও ইট বোঝাই ট্রলি পর ট্রলি আসছে। ধুলো আর ধোঁয়ায় আছন্ন হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। এর মধ্যেই শিক্ষার্থীরা তাদের আসা-যাওয়া, পড়াশোনা এবং খেলাধুলা করছে। সরই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০ গজ এবং মাটিভাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে কয়েক মিনিট হাঁটার দূরত্বে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে রিয়াজ ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা। নদী তীরবর্তী এই দুটি স্কুলের পাশেই ফসলি জমি রয়েছে এবং সেখানেই অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া নলছিটিতে আরও কিছু অবৈধ ইটভাটা রয়েছে, যা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশে এবং ফসলি জমিতে অবস্থিত। এসব ইটভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, আইন অমান্য করেও ইটভাটা চালানো হচ্ছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
নিবন্ধনবিহীন এসব ইটভাটায় মাটি সংগ্রহ ও ইট সরবরাহ করতে স্কুলের সড়ক দিয়ে বেপোরোয়া ট্রলি চলছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে যে, কালো ধোঁয়ার কারণে তাদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে এবং সড়কে ট্রলির শব্দে তারা আতঙ্কিত হয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে।
সরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনিরা আক্তারসহ অন্যান্যরা জানিয়েছেন, স্কুলের পাশে ইটভাটার কালো ধোঁয়া শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুলের সড়ক দিয়ে বেপোরোয়া গতিতে ট্রলি চলায় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিতভাবে চলাফেরা করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু কনসালটেন্ট ডা. ফয়সাল হাসান ভুইয়া বলেন, ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলি শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে এজমা ও এলার্জি হতে পারে, যা আশপাশের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
১৯নং সরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিরিন আক্তার জানান, স্কুলের পাশে ইটভাটা স্থাপনের বিষয়ে এবং ট্রলির অস্বাভাবিক গতিতে চলাচলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও, ইটভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কিছুই করতে পারছেন না। তবুও তারা উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি কৃষি বিভাগ থেকে দেয়া হয় না। কিন্তু, এসব অবৈধ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, যার ফলে ফসলের ফলন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন ২০১৯ অনুযায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু, সেই আইন অমান্য করে রিয়াজ ব্রিকস ইটভাটা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নজরুল ইসলাম জানান, স্কুল সংলগ্ন ইটভাটা বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে, বসতবাড়ি ও স্কুলের পাশে ইটভাটা স্থাপন আইনের লঙ্ঘন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স ছাড়াই ইটভাটা স্থাপন করা আইনগতভাবে অনুমোদিত নয়। অভিযোগের সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুনঃ দৌলতপুরে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হকের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন
এ বিষয়ে ইটভাটা মালিক কথা বলতে রাজি হননি। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটা মালিক জানান, লাইসেন্স বিহীন ইটভাটাগুলো ম্যানেজ করেই চালানো হয় এবং এসব ভাটায় মোটা অংকের অর্থের লেনদেন হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে অবৈধভাবে ইটভাটা চালানো সম্ভব হচ্ছে।
প্রিন্ট