ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়ায় চাল সংগ্রহে কর্মকর্তার যোগসাজসে অনিয়ম, বন্ধ মিলের বরাদ্দ

ইসমাইল হোসেন বাবু, স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ায় সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ অভিযানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মিরপুর ও দৌলতপুরসহ আরও কয়েকটি উপজেলায় বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অস্তিত্বহীন মিলের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে চাল। অথচ, বরাদ্দের বিষয়ে অনেক মিল মালিকই অবগত নন।

 

সাধারণ মিল মালিকদের অভিযোগ, খাদ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই অনিয়ম চলছে।

 

জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী, লাইসেন্সধারী, সচল ও চাল সরবরাহের সক্ষমতা সম্পন্ন মিলগুলোকে চালের বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিবছর একটি বিশেষ কমিটির মাধ্যমে এই মিলগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়, এবং চালকল মালিকরা খাদ্য অফিসের সঙ্গে চুক্তি করে চাল সরবরাহ করেন।

 

তবে, অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া মিরপুর উপজেলার নিমতলা এলাকার শেখ রাইচ মিলের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ মেট্রিক টন চাল। একই এলাকার বাসনা রাইচ মিলও চার বছর আগে বিক্রি হয়ে গেছে, কিন্তু সেই মিলের নামেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১২ মেট্রিক টন চাল।

 

বন্ধ শেখ রাইচ মিলের মালিক মমিনুর রহমান বলেন, “আমাদের মিলটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তবে ২০২0 সালের পর এটি বন্ধ রয়েছে। এর আগে দুবার সরকারের কাছে চাল দিতে পেরেছি, তবে এখনো আমরা লাইসেন্স পাইনি।”

 

মিরপুরের বিআর রাইস মিলের মালিক বজলুর রহমান জানান, তার মিলের লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় এটি বাতিল হয়ে গেছে, কিন্তু তাও ১২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা তিনি জানতেন না।

 

বাসনা রাইচ মিলের বর্তমান মালিক রাশেদুজ্জামান বলেন, “মিলটি লোকসানে চলছিল, তাই বন্ধ করে দিয়েছি। ফুড লাইসেন্সের বিষয়ে আমি কিছু জানি না, কোনো কাগজও পাইনি।”

 

মিলটির পূর্ববর্তী মালিক আমিনুল ইসলাম জানান, ২০ বছর আগে ২০ লাখ টাকা সিসি লোন নেন, কিন্তু সুদের বোঝায় চাপা পড়ে তিনি দুই বছর আগে মিলটি বিক্রি করতে বাধ্য হন।

 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে, কয়েকজন মিল মালিক অভিযোগ করেন, মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলার বেশিরভাগ চালকলের অস্তিত্ব নেই বা বন্ধ হয়ে গেছে, অথচ তাদের নামে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা দাবি করেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এই অনিয়ম করছেন, এবং কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

 

অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, “মিরপুরের বেশিরভাগ চালকলের অস্তিত্ব নেই, দৌলতপুরেও একই অবস্থা। রাজনৈতিক কারণে আমরা কিছু বলতে পারি না।”

 

তবে, মিরপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা জিন্নাত জাহান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা তিনজনের একটি কমিটি করে তালিকা তৈরি করে পাঠিয়েছি। এরকম কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো মিলের তথ্য গোপন করা হয়, তাহলে জেলা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠাতে বলা হয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

চলতি আমন মৌসুমে কুষ্টিয়ায় ৪৭ টাকা কেজি দরে ১৯ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে খাদ্য বিভাগের। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে।

 

আরও পড়ুনঃ আলফাডাঙ্গায় রুর‍্যাল জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন-এর বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত

 

কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আল ওয়াজিউর রহমান বলেন, “প্রত্যেক মৌসুমের শুরুতে আমাদের একটি সার্ভে হয়। এই মৌসুমে যেসব মিল ভালো আছে, সেগুলো পরের মৌসুমে আর ভালো নাও থাকতে পারে। আমরা সেই মিলগুলোর তথ্য সার্ভেতে রেখেছি, এবং সেখানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে হত্যাচেষ্টা মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

error: Content is protected !!

কুষ্টিয়ায় চাল সংগ্রহে কর্মকর্তার যোগসাজসে অনিয়ম, বন্ধ মিলের বরাদ্দ

আপডেট টাইম : ০৪:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
ইসমাইল হােসেন বাবু, ষ্টাফ রিপােটার :

ইসমাইল হোসেন বাবু, স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ায় সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ অভিযানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মিরপুর ও দৌলতপুরসহ আরও কয়েকটি উপজেলায় বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অস্তিত্বহীন মিলের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে চাল। অথচ, বরাদ্দের বিষয়ে অনেক মিল মালিকই অবগত নন।

 

সাধারণ মিল মালিকদের অভিযোগ, খাদ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই অনিয়ম চলছে।

 

জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী, লাইসেন্সধারী, সচল ও চাল সরবরাহের সক্ষমতা সম্পন্ন মিলগুলোকে চালের বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিবছর একটি বিশেষ কমিটির মাধ্যমে এই মিলগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়, এবং চালকল মালিকরা খাদ্য অফিসের সঙ্গে চুক্তি করে চাল সরবরাহ করেন।

 

তবে, অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া মিরপুর উপজেলার নিমতলা এলাকার শেখ রাইচ মিলের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ মেট্রিক টন চাল। একই এলাকার বাসনা রাইচ মিলও চার বছর আগে বিক্রি হয়ে গেছে, কিন্তু সেই মিলের নামেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১২ মেট্রিক টন চাল।

 

বন্ধ শেখ রাইচ মিলের মালিক মমিনুর রহমান বলেন, “আমাদের মিলটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তবে ২০২0 সালের পর এটি বন্ধ রয়েছে। এর আগে দুবার সরকারের কাছে চাল দিতে পেরেছি, তবে এখনো আমরা লাইসেন্স পাইনি।”

 

মিরপুরের বিআর রাইস মিলের মালিক বজলুর রহমান জানান, তার মিলের লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় এটি বাতিল হয়ে গেছে, কিন্তু তাও ১২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা তিনি জানতেন না।

 

বাসনা রাইচ মিলের বর্তমান মালিক রাশেদুজ্জামান বলেন, “মিলটি লোকসানে চলছিল, তাই বন্ধ করে দিয়েছি। ফুড লাইসেন্সের বিষয়ে আমি কিছু জানি না, কোনো কাগজও পাইনি।”

 

মিলটির পূর্ববর্তী মালিক আমিনুল ইসলাম জানান, ২০ বছর আগে ২০ লাখ টাকা সিসি লোন নেন, কিন্তু সুদের বোঝায় চাপা পড়ে তিনি দুই বছর আগে মিলটি বিক্রি করতে বাধ্য হন।

 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে, কয়েকজন মিল মালিক অভিযোগ করেন, মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলার বেশিরভাগ চালকলের অস্তিত্ব নেই বা বন্ধ হয়ে গেছে, অথচ তাদের নামে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা দাবি করেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এই অনিয়ম করছেন, এবং কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

 

অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, “মিরপুরের বেশিরভাগ চালকলের অস্তিত্ব নেই, দৌলতপুরেও একই অবস্থা। রাজনৈতিক কারণে আমরা কিছু বলতে পারি না।”

 

তবে, মিরপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা জিন্নাত জাহান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা তিনজনের একটি কমিটি করে তালিকা তৈরি করে পাঠিয়েছি। এরকম কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো মিলের তথ্য গোপন করা হয়, তাহলে জেলা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠাতে বলা হয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

চলতি আমন মৌসুমে কুষ্টিয়ায় ৪৭ টাকা কেজি দরে ১৯ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে খাদ্য বিভাগের। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে।

 

আরও পড়ুনঃ আলফাডাঙ্গায় রুর‍্যাল জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন-এর বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত

 

কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আল ওয়াজিউর রহমান বলেন, “প্রত্যেক মৌসুমের শুরুতে আমাদের একটি সার্ভে হয়। এই মৌসুমে যেসব মিল ভালো আছে, সেগুলো পরের মৌসুমে আর ভালো নাও থাকতে পারে। আমরা সেই মিলগুলোর তথ্য সার্ভেতে রেখেছি, এবং সেখানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


প্রিন্ট