ঢাকা , শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo সদরপুরে নববর্ষ উদযাপন প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত Logo এসএসসি পরিক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করলেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক Logo বোয়ালমারীতে বাড়তি ভাড়া আদায় করায় গোল্ডেন লাইন পরিবহনকে জরিমানা Logo নড়াইলে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ৩ মামলায় আ’লীগের ৪৮ নেতাকর্মী কারাগারে Logo নড়াইলে সেনা অভিযানে দেশীয় অস্ত্র, ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক ৬ Logo মুকসুদপুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এস এস সি পরীক্ষা Logo ফরিদপুরে ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী বাধন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার Logo প্রশ্ন পত্র ফাঁসে জড়িত শিক্ষক সালামের খুঁটির জোর কোথায় ? Logo পাটের জিনোম আবিষ্কারক মাকসুদুল আলমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে আলোচনা সভা Logo থানায় মামলা নিতে ওসির অনীহা, পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় পরিবারের আর্তনাদ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বাংলা একাডেমির ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

কাজী নূর, যশোর জেলা প্রতিনিধি

৫২’র ভাষা আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে ভাষা শহীদদের রক্তের ঋণকে ধারণ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন বর্ধমান হাউসে স্থাপিত হয় বাংলা একাডেমির কার্যালয়।

 

সময়ের বিবর্তনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষকদের ভরসাস্থলে পরিণত হয় বাঙালির মনন ও সৃজনশীলতার পরিচয়বহ বাংলা একাডেমি। বাংলা একাডেমির লক্ষ্য ও আদর্শে উল্লেখ রয়েছে, দেশজ সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য সংরক্ষণ এবং গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির মানসিক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে বই প্রকাশ করা।

 

কিন্তু আওয়ামী লীগের বিগত দেড় দশকের সময়কালে প্রতিষ্ঠানটি দলীয় মতাদর্শ প্রচারে মূলত সর্বশক্তি নিয়োগ করে। সময়কে ধারণ করে বা এমন অনেক জরুরি বই বছরের পর বছর ছাপা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লেখা বইয়ে সয়লাব বাংলা একাডেমি। ২০২২- ২৩ সালে বাংলা একাডেমি ৬৪টি বই প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ৩৭টি ছিল শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শেখ হাসিনা ও শেখ রাসেলকে নিয়ে। আবার ২০২০- ২১ সালে মুজিব শতবর্ষে শতাধিক বিষয়ে অত্যন্ত নিম্নমানের শতাধিক বই প্রকাশ করে। খোদ বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদার সম্পাদনাতে গত তিন বছরে শেখ মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ১৩টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

 

অথচ বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র রচনাবলি পাওয়া যায় না। প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর রচনাবলিও আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি। বাংলা একাডেমির প্রস্তাবক আবুল মনসুর আহমদের রচনাবলির কাজ ১৯৯৮ সালে শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনাবলির সব খণ্ডও পাওয়া যায় না। মেলে না লেখকচরিত অভিধান ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস। এমন আরও শত শত গুরুত্বপূর্ণ বই বছরের পর বছর ধরে ছাপা হয় না। পাঠক লেখকরা এসব বইয়ের সন্ধানে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন।

 

শুধু দলদাস বৃত্তির মাঝে থেমে থাকেনি বাংলা একাডেমি। কাঙ্খিত বইয়ের অভাব, গবেষণায় অপ্রতুল বরাদ্দ, পুরস্কারে অনিয়ম, বইমেলায় স্টল বরাদ্দ নিয়ে নয়ছয়, নিয়োগে দুর্নীতিসহ বহু সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। অমর একুশে বইমেলার আয়োজনের দায়িত্বে থাকা এ প্রতিষ্ঠানটি এখানেও দায়িত্বহীনতার সর্বোচ্চটা দেখিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের মতাদর্শের বাইরের কাউকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া দেয়নি।

 

বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনের সবচেয়ে বড় পুরস্কারটিও যথেষ্ট কলুষিত হয়েছে। খোদ বাংলা একাডেমিতেই চাকরিরত অবস্থায় তিন লেখক পুরস্কার পেয়েছেন। এ নিয়ে লেখক সাহিত্যিকরা তীব্র সমালোচনা করেছেন। একাডেমির সদ্য সাবেক পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান ২০২১ সালে অনুবাদে, ২০২৩ সালে ফোকলোরের পরিচালক ড. তপন কুমার বাগচী এবং ২০১৯ সালে উপপরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। আমিনুর রহমান সুলতান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপ- কমিটির সদস্য ছিলেন। আর অন্যের সম্পাদিত লোকসাহিত্য বিষয়ক বই থেকে হুবহু লেখা নিজের নামে প্রকাশ করার অভিযোগে ড. তপন বাগচীর বাংলা একাডেমি পুরস্কার বাতিলের দাবি উঠেছিল।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সদরপুরে নববর্ষ উদযাপন প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

বাংলা একাডেমির ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

আপডেট টাইম : ১১:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
কাজী নূর, যশোর জেলা প্রতিনিধি :

কাজী নূর, যশোর জেলা প্রতিনিধি

৫২’র ভাষা আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে ভাষা শহীদদের রক্তের ঋণকে ধারণ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন বর্ধমান হাউসে স্থাপিত হয় বাংলা একাডেমির কার্যালয়।

 

সময়ের বিবর্তনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষকদের ভরসাস্থলে পরিণত হয় বাঙালির মনন ও সৃজনশীলতার পরিচয়বহ বাংলা একাডেমি। বাংলা একাডেমির লক্ষ্য ও আদর্শে উল্লেখ রয়েছে, দেশজ সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য সংরক্ষণ এবং গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির মানসিক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে বই প্রকাশ করা।

 

কিন্তু আওয়ামী লীগের বিগত দেড় দশকের সময়কালে প্রতিষ্ঠানটি দলীয় মতাদর্শ প্রচারে মূলত সর্বশক্তি নিয়োগ করে। সময়কে ধারণ করে বা এমন অনেক জরুরি বই বছরের পর বছর ছাপা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লেখা বইয়ে সয়লাব বাংলা একাডেমি। ২০২২- ২৩ সালে বাংলা একাডেমি ৬৪টি বই প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ৩৭টি ছিল শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শেখ হাসিনা ও শেখ রাসেলকে নিয়ে। আবার ২০২০- ২১ সালে মুজিব শতবর্ষে শতাধিক বিষয়ে অত্যন্ত নিম্নমানের শতাধিক বই প্রকাশ করে। খোদ বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদার সম্পাদনাতে গত তিন বছরে শেখ মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ১৩টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

 

অথচ বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র রচনাবলি পাওয়া যায় না। প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর রচনাবলিও আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি। বাংলা একাডেমির প্রস্তাবক আবুল মনসুর আহমদের রচনাবলির কাজ ১৯৯৮ সালে শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনাবলির সব খণ্ডও পাওয়া যায় না। মেলে না লেখকচরিত অভিধান ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস। এমন আরও শত শত গুরুত্বপূর্ণ বই বছরের পর বছর ধরে ছাপা হয় না। পাঠক লেখকরা এসব বইয়ের সন্ধানে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন।

 

শুধু দলদাস বৃত্তির মাঝে থেমে থাকেনি বাংলা একাডেমি। কাঙ্খিত বইয়ের অভাব, গবেষণায় অপ্রতুল বরাদ্দ, পুরস্কারে অনিয়ম, বইমেলায় স্টল বরাদ্দ নিয়ে নয়ছয়, নিয়োগে দুর্নীতিসহ বহু সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। অমর একুশে বইমেলার আয়োজনের দায়িত্বে থাকা এ প্রতিষ্ঠানটি এখানেও দায়িত্বহীনতার সর্বোচ্চটা দেখিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের মতাদর্শের বাইরের কাউকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া দেয়নি।

 

বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনের সবচেয়ে বড় পুরস্কারটিও যথেষ্ট কলুষিত হয়েছে। খোদ বাংলা একাডেমিতেই চাকরিরত অবস্থায় তিন লেখক পুরস্কার পেয়েছেন। এ নিয়ে লেখক সাহিত্যিকরা তীব্র সমালোচনা করেছেন। একাডেমির সদ্য সাবেক পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান ২০২১ সালে অনুবাদে, ২০২৩ সালে ফোকলোরের পরিচালক ড. তপন কুমার বাগচী এবং ২০১৯ সালে উপপরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। আমিনুর রহমান সুলতান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপ- কমিটির সদস্য ছিলেন। আর অন্যের সম্পাদিত লোকসাহিত্য বিষয়ক বই থেকে হুবহু লেখা নিজের নামে প্রকাশ করার অভিযোগে ড. তপন বাগচীর বাংলা একাডেমি পুরস্কার বাতিলের দাবি উঠেছিল।


প্রিন্ট