যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাক্তার আবু হাসনাত মো. আহসান হাবিবকে ২০ লাখ টাকাসহ আটক করেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ। তবে আটকের কয়েক ঘন্টা পর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্থক্ষেপে দুপুরে দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অর্থের উৎসের ডকুমেন্ট দিতে না পারায় ২০ লাখ টাকা ইমিগ্রেশন পুলিশ জব্দ করে। তবে উপযুক্ত প্রমাণ ও ব্যাংক একাউন্টের তথ্যাদি জমা দিয়ে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ডাক্তার আবু হাসনাত মো. আহসান হাবিব নিজে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাক্তার আবু হাসনাত মো. আহসান হাবিব জানান, গত ১৯ নভেম্বর সকালে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ এর কিছু মালামাল কেনার জন্য তিনি ঢাকায় যান। এ জন্য ঐদিন সকালে তিনি বিমানযোগে যশোর থেকে ঢাকায় যান। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকিং করার সময় তার ব্যাগে অনেক টাকার অস্তিত্ব পান। তখন ইমিগ্রেশন পুলিশ অধ্যক্ষকে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় টাকার বিপরীতে কোন প্রমাণ পত্র ও উপযুক্ত কারন দেখাতে না পারার কারনে টাকাসহ ডাক্তার আবু হাসনাত মো. আহসান হাবিবকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুণ অর রশিদ কিছু মেশিনারীজ পণ্য ক্রয়ের অর্ডার কপি মোবাইল ফোনে পাঠালে এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুপারিশে ডাক্তার আবু হাসনাত মো. আহসান হাবিবকে ঐদিন দুপুরের দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাংক একাউন্টসহ উপযুক্ত অন্যান্য ডকুমেন্ট দিয়ে টাকা ছাড়িয়ে নেওয়া জন্য বলেন ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, যশোর মেডিকেল কলেজের একটি সূত্র জানিয়েছে, মেডিকেল কলেজের ১৩ কোটি টাকা অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য ২০ লাখ টাকা নিয়ে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ঢাকায় গিয়েছিলেন।
অপরদিকে, যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মে মাসে সাজেদা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় হাসপাতালে আইসিইউ বিভাগ চালু হয়। সাজেদা ফাউন্ডেশন চলে গেলে স্থানীয় ব্যবস্থায় একই বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে এনেস্থিসিয়া বিভাগের প্রধান ডা. আবু হাসনাত মো. আহসান হাবিবকে আইসিইউ এর দায়িত্ব দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। সেই সময় থেকে তিনি অত্র বিভাগের টাকা ব্যাংকে না রেখে নিজের কাছে রাখতেন। অফিসে কোন হিসাব কখনও দিতেন না। সেই সময় থেকে রোগীর ভর্তি ফি এক হাজার টাকা এবং দিন প্রতি বেড ভাড়া ৫শ টাকা নেওয়া হতো। ২০২৩ সালে অডিট আপত্তি করেন কর্মকর্তারা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করার নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু এরপরও অধ্যক্ষ ব্যাংক একাউন্ট না কারে নিজের কাছে টাকা রাখতেন। পরে গত ১৯ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০ লাখ টাকাসহ আটক হওয়ার পরে এখন সকল কাগজপত্র ম্যানেজ করে ব্যাংকে একাউন্ট করে জমা দিয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রাশিদ বলেন, বিষয়টি এয়ারপোর্ট থেকে তাকে জানানো হয়। তখন হাসপাতালের ২১ সালের জেলা স্বাস্থ্য কমিটির মিটিং এর কাগজপত্র ও হাসপাতালের টাকা বলে ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানান তিনি। অধ্যক্ষের কাছে কতো টাকা রয়েছে সে সময় তিনি বলতে পারেননি পুলিশকে। এ সময় হাসপাতালের আইসিইউর আয় ব্যায়ের হিসাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি অধ্যক্ষ বলতে পারবেন। এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। কিছু জানতে হলে অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে জানতে হবে।
যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাক্তার আবু হাসনাত মো. আহসান হাবিব বলেন, আইসিইউর মেশিনারীজ পণ্য কেনার জন্য সাথে করে টাকা নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। কিন্তু ইমিগ্রেশন পুলিশ একসাথে ২০ লাখ টাকা ব্যাগে দেখেন। পরে টাকার বিপরীতে কাগজপত্র দেখতে চান তারা। কিন্তু তখন টাকার উৎস ও ব্যাংক একাউন্টের কাগজপত্র দিতে না পারায় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে ছেড়ে দিন। অধ্যক্ষ আরও বলেন, সোমবার ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। একাউন্ট খোলা হলে ডকুমেন্ট তৈরী করে ঢাকা ইমিগ্রেশনে দিলে তারা টাকা ফেরত দিয়ে দিবেন।
প্রিন্ট