রনি আহমেদ রাজু, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি
মাগুরা সদর উপজেলার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের পাথরা গ্রামে এলএসটি মামলা চলাকালে জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর উক্ত মামলা দায়ের কৃত জমি পাথরা গ্রামের আপন বড় ভাই শওকত আলী খান তার আপন ছোট ভাই লিয়াকত আলী খানের কাছে ড্রাগ সেবন করিয়ে সুকৌশলে নাম মাত্র মুল্যে তাহার জমি সুকৌশলে লিখে নিয়েছে। লিয়াকত আলীর পরিবারের স্ত্রী সন্তানরা বলে এক লক্ষ,আবার কেউ বলে তিন লক্ষ টাকা দিবে বলে জমি রেজিস্ট্রি করে দলিল করে নিয়েছে।
সরেজমিনে গত বুধবার ২৭ নভেম্বর, সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে পাথরা গ্রামের মৃত আদম খানের পুত্র মোঃ লিয়াকত আলী খানের স্ত্রী শিল্পী খাতুন জানান, আমার বড় ভাসুর মো: শওকত আলী খান, মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও লেবু বাগানের জমি সহপাশের জমি লিখে নিয়েছে ১৯ শতকের একটু বেশি, যাহার বাজার মূল্য ১৯ লাখ টাকার উপরে। লিয়াকত আলীর স্ত্রী বলেন ১ লাখ টাকা দিয়েছে তার স্বামীকে আর পরে দিবে ২থেকে ৩ লাখ টাকা, এসময় তিনি ক্রন্দনরত হয়ে বলেন আমার ৩ ছেলে ও একটা বৌমা, সেলিম খান, শামীম খান, শাহরিয়ার খান ও বড় পুত্রের স্ত্রী চাঁদনি, মাঠের জমির শেষ সম্বল টুকু ঐ জমি, এর আগে মাগুরা শহরের কাঁচা বাজার আরতের জমিটুকু ফাকি দিয়ে লিখে নিয়েছে তার স্বামীর আপন বড় ভাই মো: শওকত আলী। এখন আমার বাড়ির জমি ছাড়া আর কিছুই নেই, আমি আইনের মাধ্যমে সঠিক বিচার চাই। তিনি বলেন মামলা চলছে সেই জমি কিভাবে রেজিষ্ট্রি হলো, এটার সঠিক তদন্ত করে বিচারের দাবি কামনা করছি।
মৃত আদম খানের বড় কন্যা আনোয়ারা খাতুন জানান, শওকত আলী সব জমিগুলো ফাঁকি দিয়েছে আমাদের দুই ভাই বোনের, ফাঁকি দিয়ে ঢাকার রোডের কাঁচা বাজারের জমি নিয়েছে। আমার ছোট ভাই লিয়াকত হলো ড্রাগ অ্যাটাক্টেড পাগল আর ভালো শওকত আলী, আনোয়ারা খাতুন বলেন আমি বাবার অংশ পাব কিন্তু তারা আমার বাবার অংশ পাব তা বলবে না। জমি বিক্রি হলে গাছ বিক্রি হয়, আর শওকত এর বউ ও মেয়ে কাঠাল নিয়ে চলে যায়। শওকতের বোন বলেন এই গ্রামের মাথা তুই আজ তুই শওকত বাড়ি ছাড়া রাজনীতি করার কারণে ও মানুষকে অওি আচার করার কারণে, হাসিনা চলে গেছে, ও নৌকার দল করত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ২ নং ওয়ার্ডের সভাপতি ছিল সে। ১৫ থেকে ২০ দিন বাড়ি নাই। ওর যে ছেলে হুলিয়ে দিচ্ছে, সে হচ্ছে শাহিন আর সে উস্কানি দিচ্ছে সে আর্মির চাকরি করে। আমার বাড়ির পাশে দুই শতক জমি ৪০ হাজার টাকায় পাগল ভাই লিয়াকত আলীর কাছে থেকে লিখে নেই এবং মাগুরা আদালতে মামলা চলমান জমি ফাঁকি দিয়ে লিখে নিয়েছে লিয়াকত আলীর কাছে থেকে।
তিনি আরো জানান আমার ছোট ভাই লিয়াকত আলীর বড় ছেলে সেলিম খান মাগুরা ব্রাকের গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে, মেজো ছেলে শামীম খান মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অনার্সে পড়ে, সে রাজমিস্ত্রির কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালায়, ছোট ছেলে শরিয়ার খান মাগুরা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। জমি বিক্রির কথা শুনতে গেলে আমার ছেলে রিপনকে ঢাকার রোড থেকে মারতে গেছে লিয়াকত। তিনি বলেন আমি ভাই বোনদের মধ্যে সবার বড় আমার দুই ভাই হলো আস্ত হারামি লোক।রিপন, সেলিম খান ও সোহেল খানের কাছে লিয়াকত আলীর দোকান লুটপাট ও তাকে মারধর করা হয়েছে এ সম্পর্কে শোনা হলে তারা জানান আমরা এসব কিছুই জানি না। শওকত আলী খানের স্ত্রীর বক্তব্য নিতে গেলে তিনি কোন বক্তব্য দিবেন না বলে জানান। কিন্তু এ সময়ে তার বড় পুত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টাঙ্গাইল ক্যান্টনমেন্ট বেঙ্গল সৈনিক শাহিনের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলান।
সেনাবাহিনীর কর্মরত শাহীন রাগান্বিত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন আমাদের তথ্য আপনারা কোথায় পালেন, আপনারা সাংবাদিক আমি গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্ট এ চাকরি করি আমাকে এই সমস্ত ভূগোল বুঝায়েন না,আমি এর থেকেও বড় বড় ক্রাইম সমাধান করি আপনারা আমাকে ভূগোল বুঝায়েন না। এলাকাবাসীর লোকজন জানাই শওকত আলী তার নিজের আপন ছোট ভাইয়ের জমি গুলো ফাঁকি দিয়ে নিয়ে নিয়েছে এবং তার বোনের কোন জমি দেয়নি। তারা আরো জানান শওকতের ছেলে সেনাবাহিনীর চাকরি করে শাহীন বাড়িতে এসে এলাকার লোকজন দের ভয়-ভীতি হুমকি ধামকি দেয়। এলাকাবাসী আরো বলেন জমি রেজিস্ট্রির দিন সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দেখেছে।এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সৈনিক শাহীনের সাথে পরে মুঠোফোনে কথা বলে জানা যায়, সে টাঙ্গাইল ক্যান্টনমেন্ট থেকে জমি রেজিস্ট্রির দিন আসে নাই, তার বিরুদ্ধে এলাকার একটি কুচক্রীমহল আজেবাজে মিথ্যা মন্তব্য করেছে এবং তিনি জমি সম্পর্কে কোন উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলেনি, তার কাছে এই ১৯ শতক সামথিং জমির এল এসটি মামলা চলছে আদালতে কিভাবে জমি রেজিস্ট্রি হলো এটা জানতে চাইলে সে জানাই আমার চাচা লিয়াকত আলী এভিডেভিট করে দিয়েছে। কিন্তু সেই এফিডেভিট কপিতে তারিখ ও অ্যাডভোকেটের নাম ও সীল স্বাক্ষর স্থান ফাঁকা। যার ১০০ টাকার স্ট্যাম্প ৩য় পাতা একটি ৭৯৪৬৩৭০ স্ট্যাম্পের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে আবার সাথে সাথে ডিলিট করে দেয়। ছবিগুলো তার কাছে ফের চাইলে সে বলে কি করবেন ছবিগুলো আপনারা আমি দিবো না।
মাগুরা সাব-রেজিস্ট্রার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মামলা বিচারধীন থাকায় জমি রেজিষ্ট্রি বন্ধ করা জন্য মোঃ সোহেল রানা, পিতা- মৃত তোতা খান, সাং- পাথরা, থানা ও জেলা- মাগুরা লিখিতভাবে জানায় যে নিম্ন তফসিল জমি উপজেলা মাগুরা সদর সাবেক ১৭৩ হাল ১৪৬ নং পাথরা মৌজার জমাজমি। এস,এ খং নং ৬৯, আর, এস খং নং ২৪৫ ও ১৬৩, সাবেক দাগ ১৪৮ ও ১৪৮, হাল দাগ ১৭৮ ও ১৭৭, জমির পরিমান ১৪ শতক ও ২৯ শতক, মোট- ৪৩ শতক জমি বিরোধীয়।
বর্নিত জমাজমি নিয়ে বাদী বিবাদীর মধ্যে দীর্ঘ দিন যাবৎ মোকাম মাগুরার ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা বিচারঅন্তে রায় হয়। যাহা মামলা নং- এল.এস.টি-৮৮৯/১৭। উক্ত মামলায় রায়ের বিপরীতে আপিল মোকদ্দমা দায়ের করা হয়। যাহার আপিল মামলা নং- এল.এস.টি আপিল- ৩৮/২০২৪। উক্ত আপিল মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্বেই আপিল্যান্ট মোঃ লিয়াকত আলী খান এবং ১নং রেসপন্ডেন্ট বাদী মোঃ শওকত আলী খান তফশিল বর্নিত সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রয় করার চেষ্টা করেছে। তফসিল বর্নিত জমাজমি বিক্রয় হইলে সোহেল রানা, শিল্পী খাতুন, সেলিম খানদের অপূরনীয় ক্ষতি হবে।মৃত তোতা মিয়ার পুত্র সোহেল রানা অভিযোগ দায়েরে জানান, নিম্ন তফসিল বর্নিত সম্পত্তির আপিল মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যাহাতে রেজিষ্ট্রি না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে সাব রেজিস্ট্রারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
সংযুক্তি- এল.এস.টি আপিল ও এল.এস.টি মূল মামলার ফটোকপি দাখিল করা হয়েছে। অতঃপর রেজিস্ট্রি অফিসের মুহুরীদের মুঠো ফোনে কন্টাক করলে শওকত আলী লিয়াকত আলিকে কত টাকায় দিয়েছে, মুহুরী বলেন এক লক্ষ টাকার এক বান্ডিল টাকা দিয়েছে, এবং আপনারা শওকত আলীর জমি রেজিস্ট্রির বিষয়টা কিভাবে পেলেন। মুহুরী মুঠোফোনে বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের স্টাফের মাধ্যমে এই রেজিস্ট্রির কাজটি পেয়েছিলাম।
প্রিন্ট