রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরাঞ্চল খানপুর গ্রামের মোঃ সামসেদ মন্ডলের ছেলে মাদক সম্রাট বেলাল মন্ডল এলাকার মানুষের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্কে পরিনত হয়েছে। সে দীর্ঘদিন ধরে লালপুর ও বাঘা উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় অস্ত্র ব্যবসা, মাদক, হুন্ডি ও কৃষকদের জমি জোরপুর্বক দখলসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত। এছাড়া তার নামে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের একাধিক মামলা রয়েছে।
পতিত সরকারের সাবেক এমপি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) শাহরিয়ার আলমের ছত্রছায়ায় বেলাল একটি শক্তিশালী অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলেও তার আধিপাত্য এখনও ধরে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন খানপুর গ্রামে বসবাসকারীরা।
বেলাল মন্ডলের নামে রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট, নাটোরের লালপুর এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও ভেড়ামারা থানায় অস্ত্র, মাদক এবং হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। জমি দখল ও কৃষকদের শোষণ ছাড়াও বেলাল পদ্মা নদীর তীরে জেগে ওঠা হাজার হাজার বিঘা খাস জমি এবং প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা খেড় জোরপূর্বক বিক্রি করে থাকে।
প্রকৃত জমির মালিকদের দমন করে সে জমি লিজ দেওয়ার নামে কৃষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে। যারা তার শর্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদের ওপর চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন। চরাঞ্চলজুড়ে তার শত শত গরু-মহিষের বাতান রয়েছে। এসব বাতানে গবাদি পশু চড়াতে কৃষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করা হয়।
বেলালের অপরাধ সাম্রাজ্যের আরেকটি বড় দিক হলো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক আমদানি। এলাকাবাসীর দাবি, তার কাছে এসব পণ্য আনা অত্যন্ত সহজলভ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে মাদক ব্যবসার একটি সুসংগঠিত চক্র পরিচালনা করছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেলাল মন্ডল একসময় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হত্যা ও গুমের সাথে জড়িত ছিলেন বলে এলাকাবাসীর মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে শারীরিক নির্যাতন এবং জীবননাশের হুমকি। তাই সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পায়। বেলালের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মাদক ও অস্ত্র পাচারের মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ ধরনের অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো: রফিকুল আলম বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা যত বড় শক্তিশালী বা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকুক না কেন, কোন ছাড় দেওয়া হবেনা। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়া বেলাল মন্ডলের গ্রেফতারের ব্যাপারে তিনি বলেন, তাকে গ্রেফতারে অতি শীঘ্রই মাঠে কাজ শুরু করবে পুলিশ।
প্রিন্ট