আর ধীরাজ ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ধর্মের বিভেদই তাদের মিলনের প্রধান অন্তরায় ছিলো। উভয়ের পরিবারই বিষয়টি মেনে না নেয়ার অনড় অবস্থান গ্রহণ করেন। মাথিনের চাপে এবং ভালোবাসার শক্তির কাছে মগ জমিদার ওয়াংথিন এক পর্যায়ে মেনে নিলেও ধীরাজের পরিবার বিষয়টি মেনে না নিয়ে অনমনীয় থাকে। কিছুদিন পর পুলিশ অফিসার ধীরাজ তার বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে ছুটি নিয়ে কলকাতায় যান এবং পিতার আরোগ্য লাভে বিলম্ব হওয়ায় বেশ কিছুদিন তাকে কলকাতায় থেকে যেতে হয়।
অন্যদিকে মাথিন ব্যাপক অনুসন্ধান না করেই ধীরাজের এই কলকাতায় চলে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি মনে করেন ধীরাজ তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁকি দিয়েছেন। ধীরাজের জন্য দুশ্চিন্তা এবং অন্ন-জল ত্যাগ অব্যাহত রাখায় মাথিন ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে অকাল প্রয়াত হন অপরূপ সুদর্শণা ভালোবাসার কাঙ্গাল মাথিন। পিতার আরোগ্য লাভের পর ধীরাজ যখন টেকনাফ ফিরে আসেন তখন ভালোবাসার একটা অধ্যায়ের শেষ। মাথিনের স্মৃতি রোমন্থন করা ছাড়া ধীরাজের আর কিছুই করার ছিলো না। তাইতো ধীরাজ ভট্টাচার্য একজন পুলিশ অফিসার হয়েও কলম হাতে তুলে নিয়ে রচনা করলেন প্রেমের অনবদ্য কাহিনী ‘যখন পুলিশ ছিলাম’ নামক গ্রন্থ। যাতে তার প্রেমের কাহিনী পরবর্তী প্রজন্মের জন্য লিপিবদ্ধ করে গেছেন।
মাথিন যেই কূয়ো থেকে পানি তুলতো বর্তমানে সেটির উপরিভাগে লোহার গ্রিল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। কূয়োটির নাম দেয়া হয়েছে ‘মাথিন কূপ’। শতবর্ষ কেটে গেলেও অনেক পর্যটক আজো টেকনাফ গেলে ঐতিহাসিক মাথিন কূপ দর্শন করতে ভোলেন না। ধীরাজ ভট্টাচার্য পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশের খ্যাতনামা অভিনেতার মর্যাদা পেয়েছিলেন বলে জানা যায়। মাথিন নিজের জীবন উৎসর্গ করে প্রমাণ করে গেছেন প্রেম অক্ষয়। তা না হলে আজ শত বছর পরেও মাথিনের নাম উচ্চারিত হতো না। মাথিন ঠাঁই পেতো না ইতিহাসের পাতায়।
প্রিন্ট