আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
রাজশাহী অঞ্চলে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে,বাড়ছে অসন্তোস, দেখা দিয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া।দীর্ঘদিন পর কৃষি বান্ধব এই সংস্থা নিয়ে সাধারণ কৃষকদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে,সৃষ্টি হচ্ছে নেতিবাচক মনোভাব।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নতুন নীতিমালা নিয়ে কৃষকদের মাঝে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এবার গভীর নলকূপ অপারেটর নিয়োগে নতুন নীতিমালা করেছে বিএমডিএ। এতে আগের তুলনায় বেশি জামানত দিতে হবে অপারেটরদের। কিন্ত্ত কমবে সেচ ঘণ্টা।ফলে শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলে আবাদ কমার আশঙ্কা করছে কৃষকরা। তবে বিএমডিএ বলছে, অপারেটর নিয়োগে দুর্বৃত্তায়ন কমানোর লক্ষ্যেই নতুন নীতিমালা।
এদিকে নতুন এই নীতিমালা বোর্ড সভায় আলোচনা ছাড়াই কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হিরোক। তিনি বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত বোর্ড সভায় আলোচনা করে নিলে বিতর্ক হতো না। চেয়ারম্যান একাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে সার্কুলার দিয়েছেন। বোর্ড সভায় এনিয়ে কথা বলব। কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, তেমন সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখব।
জানা গেছে, নতুন নীতিমালায় অপারেটর হতে চাইলে পুরুষের জন্য ২০ হাজার টাকা ও নারীদের জন্য ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য ছিল সাড়ে ৭ হাজার টাকা। নারী-পুরুষ উভয়কে গভীর নলকূপের ঘরে রাতেও থাকা বাধ্যতামূলক, অপারেটরের শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে এসএসসি পাস, ফরমের দাম ১০০ টাকার পরিবর্তে এক হাজার। কমানো হয়েছে নলকূপ চালানোর সময়। এতে করে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে, দাবি চাষিদের। কৃষক মাহাবুর রহমান মাহাম বলেন, আগে বরেন্দ্র থেকে কার্ড নিয়ে ইচ্ছেমতো পানি ব্যবহার করা যেত।
এক ফসলের পর আরেকটি ফসলের চাষ করতেন। কিন্তু নতুন নীতিমালায় ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ৯৮০ ঘণ্টা সেচ পাম্প চালানো যাবে। এতে করে প্রভাবশালী চাষিরা তাদের জমিতে সেচ সুবিধা নিয়ে নেবেন। অল্প জমিতে চাষাবাদ করেন, এমন চাষিরা সেচ সুবিধা নাও পেতে পারেন। মসলেম উদ্দিন নামে আরেক চাষি জানান, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জামানতের নতুন যে নিয়ম করা হয়েছে, তাতে বর্তমান অপারেটররা বাদ পড়বেন। চেয়ারম্যান তার পছন্দের লোকজনকে অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দিতে এমন নিয়ম করেছেন বলে তিনি মনে করেন।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, বিএমডিএর এমন সিদ্ধান্ত শস্য উৎপাদনে অন্তরায়। কারণ এতে সেচ খরচ বাড়বে। আবার প্রয়োজনীয় পানি না পেলে অনেক জমি পতিত থাকবে। এতে শস্য উৎপাদন কমে আসবে। এদিকে, বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, গভীর নলকূপ অপারেটর নিয়োগে যে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, সেটি ভাঙতে নতুন নীতিমালা।
এ ছাড়া এতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমবে। বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আগে অপারেটর নিয়োগে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। কারও হেদায়েত হয়ে এখানে অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেটি ভাঙতে নতুন নীতিমালা। এতে করে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারও কমে আসবে।
আরও পড়ুনঃ কুষ্টিয়ায় প্রবাসীর স্ত্রীর জমি দখলের অভিযোগ
প্রসঙ্গত, বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় ১৯ হাজার গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করে বিএমডিএ।
প্রিন্ট