প্রাচীন কাল থেকেই মানব সমাজে ভিক্ষাবৃত্তি চলে আসছে। উপমহাদেশেও এর ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলের শোষন, বঞ্চনা এবং নদী ভাঙ্গন, দারিদ্র্য, রোগ-ব্যাধি, অশিক্ষা ইত্যাদি কারণে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। বর্তমান সময়ে কিছু মানুষের কর্ম বিমুখতা এবং একদল স্বার্থান্বেষী মহলের অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। ভিক্ষাবৃত্তি একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি স্বীকৃত কোন পেশা নয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। স্বল্পোন্নত দেশের অবস্থান থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণ ঘটেছে। ভিক্ষাবৃত্তির লজ্জা থেকে দেশকে মুক্ত করার সময় এসেছে।
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় গরীবের বন্ধু সমাজ কল্যান সংস্থার উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ মোড়ে বিভিন্ন অসহায় গরিব ও ভিক্ষুকদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে কাঁঠালিয়া প্রেসক্লাবের সামনে থেকে রান্না করা এই খাবার বিতরণের কার্যক্রম শুরু করে সংস্থার নেতৃবৃন্দ । এসময় উপজেলার অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে শতাধিক গরিব অসহায় ও ভিক্ষুকদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।
খাবার বিতরন কার্যক্রমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম, কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান বিন ইসলাম, সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন, কাঁঠালিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল হক নাহিদ সিকদার, আমুয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. নকিরুল ইসলাম মুন্সি, পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. সফিকুল ইসলাম রাসেল, গরীবের বন্ধু সমাজ কল্যান সংস্থার সভাপতি মো. বাদল হাওলাদারসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন ।
গরীবের বন্ধু সমাজ কল্যান সংস্থার সভাপতি মো. বাদল হাওলাদার বলেন, উপজেলা সদরে প্রতিদিন গ্রাম থেকে ভিক্ষুকেরা আসেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাঁদের অনেকেই দুপুরে না খেয়ে সারা দিন ভিক্ষা শেষে বাড়ি ফেরেন। এ জন্য তাদের সংগঠন গরীবের বন্ধু সমাজ কল্যান সংস্থা ভিক্ষুকদের প্রতি সপ্তাহে দুপুরে একবেলা খাবার খাওয়ানোর উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁরা গড়ে তোলেন গরীবের বন্ধু সমাজ কল্যান সংস্থা।
খাবার নিতে আসা উপজেলার পশ্চিম আউরা গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. চুন্নু হাওলাদার (৫৫) বলেন, ‘সাত বছর ধরে প্রতি দিন ভিক্ষা করতে কাঠালিয়া বাজারে আসি। দুপুরে খেতে ৫০-৬০ টাকা খরচ হয়। এ জন্য প্রায়ই না খেয়ে সারা দিন ভিক্ষা করে বাড়ি গিয়ে রাতে খেতাম। এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে একদিন এখানে দুপুরে খেতে পারব।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এখানে এসে দরিদ্র, ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধী মানুষেরা সপ্তাহে অন্তত একবেলা ভালো খেতে পারবেন। এখানে আসা ভিক্ষুকদের বেশির ভাগ শারীরিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং কর্মহীন বৃদ্ধ।
- আরও পড়ুনঃ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৪, আহত ৯৩
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সংগঠনটির কার্যক্রম দেখার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। উদ্যোগটি প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রিন্ট